ফতওয়া
খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
গবেষণা কেন্দ্র: মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
, ২৪ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৯ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৭ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কিস্তি বা লম্বা টুপি কাফেরদের শিয়ার হিসেবে প্রমাণ করতে গিয়ে اَلْغِيَارُ শব্দের ব্যাখ্যায় হাশিয়ায় শায়েখযাদাহ্ এর উদ্ধৃতি পেশ করা হয়েছে। অথচ হাশিয়াতুশ শিহাবে বলা হয়েছে, “যারা বলবে, গিয়ার অর্থ লম্বা টুপি, তারা গিয়ার শব্দের হাক্বীক্বত বুঝেনি।” এখন কোনটি গ্রহণযোগ্য? আবার কেউ কেউ এটাও বলে থাকে যে, শায়েখযাদাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যামানায় হয়তো লম্বা টুপি কাফেরদের شِعَارٌ শেয়ার ছিল, কিন্তু আমাদের যুগেতো ব্যাপারটি তেমন রয়নি বরং এটি ব্যাপকভাবে মুসলমানরাই পরিধান করে থাকে, তাই সে যুগের সাথে মিলিয়ে এ যুগের লম্বা টুপিকে কাফেরদের শিয়ার বলার যৌক্তিকতা কি?
উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, তাফসীরে বায়যাবীতে যে উল্লেখ করা হয়েছে-
لُبْسُ الْغِيَارِ وَشَدُّ الزُّنَّارِ وَنَحْوُهُمَا كُفْرًا.
অর্থ: “গিয়ার” পরিধান করা ও পৈতা বাঁধা এবং এতদুভয়ের ন্যায় পোশাক পরিধান করা কুফরী।”
উল্লেখ্য, তাফসীরের কিতাবে “গিয়ার” শব্দের বিভিন্ন অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- “গিয়ার” শব্দের ব্যাখ্যায় তাফসীরে বায়যাবীর বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য শরাহ হাশিয়ায়ে শায়খ যাদাহ ১ম খ- ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(قوله لُبْسُ الْغِيَارِ) وهو بكسر الغين علامة اهل الذمة- وقيل هو قلنسوة طويلة كانت تلبس فى ابتداء الاسلام وهى الان من شعار اهل الكفر مختصة بهم.
অর্থ: “গইন” এর নীচে যের দিয়ে غيار শব্দের অর্থ হলো- জিম্মীদের চিহ্ন বিশেষ। আর কেউ কেউ বলেন, غيار হলো লম্বা টুপি, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরিধান করা হতো এবং বর্তমানে লম্বা টুপি কাফেরদের শেয়ার বা চিহ্ন ও লম্বা টুপি তাদের খাছ টুপি।”
আর হাশিয়াতুশ্ শিহাবের মুছান্নিফ “গিয়ার” শব্দের অর্থে জিম্মীদের বিশেষ চিহ্নকে স্বীকার করলেও “গিয়ার” শব্দের অর্থ যে লম্বা টুপি, তা তিনি অস্বীকার করেছেন। মূলতঃ এটা সম্পূর্ণই উনার ব্যক্তিগত অভিমত। উনার ব্যক্তিগত অভিমতের দ্বারা হাশিয়ায়ে শায়েখযাদা’র উক্ত বক্তব্য ভুল বা পরিতাজ্য হতে পারে না। কারণ হাশিয়াতুশ্ শিহাবের বর্ণনার চাইতে হাশিয়ায়ে শায়েখযাদা’র বর্ণনার গুরুত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা কম নয়।
তাছাড়া হাশিয়াতুশ্ শিহাবের বক্তব্য মোতাবেক যদি “গিয়ার” শব্দের অর্থ লম্বা টুপি গ্রহণ নাও করা হয়, তথাপিও কিস্তি টুপি বা লম্বা টুপি ব্যবহার করা অবৈধ প্রমাণিত হয়। কারণ হাশিয়ায়ে শায়েখযাদা’র ন্যায় হাশিয়াতুশ্ শিহাবেও উল্লেখ করা হয়েছে-
الغيار وهو علامة اهل الذمة.
অর্থ: “জিম্মি বা কাফেরদের চিহ্ন বিশেষকেই “গিয়ার” বলে।”
আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কিস্তি টুপি কাফের তথা হিন্দুদের শেয়ার বা খাছ টুপি। যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত শাহ্ ছূফী মুহম্মদ রুহুল আমীন বশীরহাটি রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রণীত- বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য দলীল সমৃদ্ধ ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে আমীনিয়াতে” উল্লেখ করেন, “কিস্তি (লম্বা) টুপি খাছ মারওয়ারিদের (হিন্দুদের) ব্যবহৃত টুপি ..........।”
তাছাড়া পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফে কিস্তি বা দোপাট্টা টুপির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়না। অনুসরণীয় ইমাম মুজতাহিদ বা আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা কিস্তি বা দোপাট্টা লম্বা টুপি পরিধান করেছেন, এরূপ দূর্বল থেকে দূর্বলতম বর্ণনাও নজরে পড়ে না। আর না পড়াটাই স্বাভাবিক, যেহেতু কিস্তি বা দোপাট্টা টুপি কাফের তথা হিন্দুদের খাছ টুপি। অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ বা আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের পক্ষে এটা কস্মিনকালেও সম্ভব নয় যে, উনারা গোল টুপির খাছ সুন্নতকে বাদ দিয়ে বেদ্বীন-বদ দ্বীনদের খাছ টুপি পরিধান করবেন।
অতএব, “গিয়ার” শব্দের যে অর্থই গ্রহণ করা হোক না কেন, তা দ্বারা কিস্তি বা দোপাট্টা লম্বা টুপি পরিধান করা নাজায়েয প্রমাণিত হয়। কারণ কিস্তি টুপি কাফেরদের খাছ টুপি বা “শেয়ার” অর্থাৎ চিহ্ন বিশেষ। আর উক্ত তাফসীরদ্বয়ে মূলতঃ কাফেরদের খাছ শেয়ার বা আমল অর্থাৎ চিহ্ন বিশেষ অনুসরণ করাকেই কুফরী বলা হয়েছে। সুতরাং হাশিয়ায়ে শায়েখযাদাহ্ ও হাশিয়াতুশ্ শিহাবের বক্তব্যের ভিত্তিতে এটাই ছাবেত হয় যে, কাফের তথা হিন্দুদের শেয়ার বা খাছ টুপি কিস্তি বা দোপাট্টা লম্বা টুপি ব্যবহার করা নাজায়েয, আর তা সুন্নত মনে করে পরিধান করা কুফরী।
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, যারা বলে- “লম্বা টুপি শায়েখযাদাহ উনার সময়ে কাফেরদের শেয়ার থাকলেও বর্তমানে তা কাফেরদের শেয়ার নয়, যেহেতু মুসলমানরা ব্যাপকভাবে তা ব্যবহার করছে।”
তাদের উক্ত বক্তব্য শুধু জেহালত বা মূর্খতাসূচকই নয়, বরং তা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের সম্পূর্ণই বিপরীত। কারণ যে আমল শরীয়তের খেলাফ বা কাফেরদের শেয়ার বা খাছ আমল হিসেবে প্রমাণিত, তা ক্বিয়ামত পর্যন্তই কাফেরদের শেয়ার বলে গণ্য হবে। কাফেরদের কোন শেয়ার বা খাছ আমলকে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে অনুসরণ করলেই যে তা আর কাফেরদের শেয়ার থাকবেনা বা তা আমল করা জায়েয হবে, শরীয়তের কোথাও এ ধরনের কোন বর্ণনার উল্লেখ নেই বরং এটা বিদ্য়াতীদের সম্পূর্ণ মনগড়া বক্তব্য।
কেননা শরীয়ত বিরোধী ও কাফেরদের কোন আমল মুসলমানরা ব্যাপকভাবে আমল করলেই যদি তা জায়েয হয়ে যায়, তবে তাদের বক্তব্য মোতাবেক গান-বাজনা করা, বেপর্দা চলা, সুদ-ঘুষ খাওয়া ইত্যাদি হারাম কাজগুলোও জায়েয। যেহেতু মুসলমানরা ব্যাপকভাবে তা আমল করে থাকে। এখানে দাড়ী মুন্ডনের ব্যাপারটি বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। কারণ দাড়ী মুন্ডন করাও বেদ্বীন-বদ দ্বীনদের খাছ শেয়ার বা চিহ্ন বিশেষ।
যেমন এ প্রসঙ্গে আবূ দাউদ শরীফের ব্যখ্যাগ্রন্থ বযলুল মাজহূদ -১ম খ- ৩৩ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে যে-
وقص اللحية من سنن الاعاجم وهو اليوم شعار كثير من المشركين والافرنج والهنود ومن لا خلاق له فى الدين ........
অর্থ: “দাড়ী কাটা আজ্মী (মজুসী)দের নীতি। আর তা বর্তমানে মুশরিক, ফিরিঙ্গী হিন্দু ও দ্বীনের সাথে সম্পর্কহীন অধিকাংশ বাতিল ফেরকার “শেয়ার বা খাছ আমল।”
অথচ মুসলমানরা ব্যাপকভাবে দাড়ী কেটে বা মুন্ডন করে থাকে। তাই বলে কি দাড়ী মুন্ডন করাকে বেদ্বীনদের শেয়ার বলা যাবে না? বা মুসলমানরা ব্যাপকভাবে দাড়ী মুন্ডন করার কারণে কি দাড়ী মুন্ডন করাকে তারা জায়েয বলবে? দাড়ী মুন্ডন করা কাফেরদের খাছ আমল বা শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানরা তা ব্যাপকভাবে আমল করার কারণে যদি দাড়ি মুন্ডন করা জায়েয না হয়, তবে কিস্তি বা লম্বা টুপি যা কাফেরদের খাছ আমল বা শেয়ার, তা মুসলমানরা ব্যাপকভাবে পরিধান করার কারণে কি করে জায়েয হবে?
অতএব, কাফেরদের শেয়ার সম্পর্কিত তাদের উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, মনগড়া ও শরীয়তবিরোধী। মূলতঃ কিস্তি বা লম্বা টুপি পূর্বেও যেমন কাফেরদের শেয়ার ছিল, বর্তমানেও তা কাফেরদের শেয়ার এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তা কাফেরদের শেয়ার হিসেবেই থাকবে। মুসলমানরা অজ্ঞতাহেতু তা ব্যাপকভাবে পরিধান করে বলে তা কাফেরদের শেয়ার নয়, এ কথা চরম জেহালতের নিদর্শন।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)