ফতওয়া
খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১)
গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
, ১০ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৫ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
تُكْرَهُ الصَّلَوةُ مَعَ الْبُرْنُسِ.
অর্থাৎ ‘বুরনুস’ সহ নামায আদায় করা মাকরূহ। ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বক্তব্য দ্বারা মূলতঃ লম্বা বা উঁচু টুপি ও রেশম মিশ্রিত ‘বুরনুস’ উভয়টাকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ রেশম মিশ্রিত ‘বুরনুস’ সহ নামায আদায় করা যেরূপ মাকরূহ তদ্রƒপ বুরনুস বা উঁচু টুপি পরিধান করেও নামায পড়া মাকরূহ। যেহেতু বুরনুস টুপি খৃষ্টানদের টুপি, আর পুরুষের জন্য রেশম ব্যবহার নিষিদ্ধ। মূলতঃ বুখারী শরীফে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফের সাথে ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বক্তব্যের কোন প্রকার দ্বন্দ্ব নেই। কারণ ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে যে ‘বুরনুস’ সহ নামায আদায় করাকে মাকরূহ বলা হয়েছে তা হলো উঁচু টুপি ও রেশম মিশ্রিত ‘বুরনুস’। আর বুখারী শরীফে যে ‘বুরনুস’ পরিধানের বৈধতা প্রমানিত হয় তা হলো- “টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা পশমী চাদর ইত্যাদি।” যেমন এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফে উল্লেখ আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَي عَنْهُ أَنَّ رَجُلاً قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ مَا يَلْبَسُ الْمُحْرِمُ مِنَ الثِّيَابِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لاَ يَلْبَسُ الْمُحْرِمُ الْقَمِيصَ وَلاَ السَّرَاوِيلَ وَلاَ الْبُرْنُسَ وَلاَ الْخُفَّيْنِ إِلاَّ أَنْ لاَّ يَجِدَ النَّعْلَيْنِ فَلْيَلْبَسْ مَا هُوَ أَسْفَلُ مِنَ الْكَعْبَيْنِ
অর্থ: হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মুহরিম (হজ্জের সময়) কোন কোন পোশাক পরিধান করবে? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “মুহরিম ব্যক্তি ক্বামীছ, সেলোয়ার, ‘বুরনুস’ ও মোজা পরিধান করবে না। তবে কারো যদি জুতা-সেন্ডেল না থাকে, সে মোজা পরিধান করতে পারবে, তবে মোজা টাখনুর নীচে থাকতে হবে।” উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে ‘বুরনুস’ শব্দের ব্যাখ্যায় বুখারী শরীফ ২য় খ-, ৮৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে-
قَوْلُهُ وَلَا الْبُرْنُسُ- بِضَمِّ مُوَحَّدَةٍ وَنُوْنٍ- هُوَ كُلُّ ثَوْبٍ رَأْسُهُ مِنْهُ مُلْتَزِقٌ بِهِ مِنْ دُرَّاعَةٍ أَوْ جُبَّةٍ أَوْ غَيْرِهِ وَقَالَ الْجَوْهَرِيُّ هُوَ قَلَنْسُوَةٌ طَوِيلَةٌ كَانَ النُّسَّاكُ يَلْبَسُونَهَا فِي صَدْرِ الْإِسْلَامِ
অর্থ: “বা এবং নূনের উপর পেশ দিয়ে “বুরনুস” শব্দের অর্থ হচ্ছে- প্রত্যেক ঐ পোশাক, যার মাথার দিক তার সাথে সংযুক্ত বা লাগানো। তা কোট হোক অথবা জুব্বা। অর্থাৎ টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা কোট। জাওহারী বলেন, “বুরনুস” হলো- লম্বা টুপি, যা আবিদ-যাহিদ লোকেরা ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরিধান করতেন।” অনুরূপ নাসাঈ, আবূ দাউদ, লিসানুল আরব, ক্বামুসুল মুহীত, আল মুগরিব ও আর-রাইদ ইত্যাদি কিতাবসমূহেও উল্লেখ আছে।
বুখারী শরীফ ও অন্যান্য কিতাবসমূহে বর্ণিত ‘বুরনুস’ শব্দের ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে যে বুরনুস-এর কথা বলা হয়েছে, তা হলো- টুপি সংযুক্ত জুব্বা ইত্যাদি। লম্বা টুপির কথা মোটেও বলা হয়নি। তাছাড়া জাওহারীর বক্তব্য দ্বারা ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট হয়ে যায়, কেননা জাওহারী বলেছেন, লম্বা টুপি ইসলামের প্রাথমিক যুগে ব্যবহার করা হতো। তাই এক্ষেত্রে ‘বুরনুস’ অর্থ লম্বা টুপি গ্রহণ করার কোন প্রশ্নই উঠে না। এছাড়াও উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে “বুরনুস” শব্দ দ্বারা টুপিকে বুঝানো হয়নি, কারণ যদি টুপিই উদ্দেশ্য হতো, তবে আমভাবে (قَلَنْسُوَةٌ) “ক্বলানসুওয়াহ্” শব্দই উল্লেখ করা হতো, কেননা ইহরাম অবস্থায় যে কোন ধরনের টুপিই মাথায় দেয়া নিষিদ্ধ। সুতরাং এক্ষেত্রে “বুরনুস” শব্দের অর্থ- লম্বা টুপি গ্রহণ করা হলে, ইহরাম অবস্থায় অন্যান্য টুপি পরিধান করা বৈধ প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ এটাই প্রমাণিত হয় যে, ইহরাম অবস্থায় ‘বুরনুস’ টুপি ব্যতীত সব টুপিই পরিধান করতে পারবে।
অতএব এক্ষেত্রে ‘বুরনুস’ শব্দের অর্থ টুপিসহ জুব্বা ইত্যাদি গ্রহণ করাই যুক্তিযুক্ত ও সঠিক। কারণ ইহরাম অবস্থায় যেরূপ টুপি মাথায় দেয়া বৈধ নয় তদ্রুপ জুব্বা পরিধান করাও বৈধ নয়। অর্থাৎ সেলাই যুক্ত সব ধরনের পোশাকই ইহরাম অবস্থায় পরিধান করা নিষেধ। তাছাড়া আবূ দাউদ শরীফের একটি বর্ণনা দ্বারাও প্রমানিত হয় যে, বুখারী শরীফে ইহরাম অবস্থায় যে বুরনুস পরিধান করতে নিষেধ করা হয়েছে তা হলো টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা পশমী চাদর ইত্যাদি। যেমন আবূ দাউদ শরীফের ১ম খ- ২৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَي عَنْهُ أَنَّهُ وَجَدَ الْقُرَّ فَقَالَ أَلْقِ عَلَىَّ ثَوْبًا يَا نَافِعُ. فَأَلْقَيْتُ عَلَيْهِ بُرْنُسًا فَقَالَ تُلْقِى عَلَىَّ هَذَا وَقَدْ نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَلْبَسَهُ الْمُحْرِمُ
অর্থ: হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি শীতে আক্রান্ত হয়ে বললেন, “হে নাফে! আমার উপর কোন কাপড় ঢেলে দিন। আমি উনার উপর একটি বুরনুস দিয়ে দিলাম। তিনি বলেন, আপনি আমার উপর ‘বুরনুস’ ঢেলে দিলেন অথচ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুহরিমদের জন্য তা নিষেধ করেছেন।” উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শীতে আক্রান্ত হয়ে শীত নিবারণের জন্য কিছু গায়ে দেয়ার নির্দেশ দিলে ইমাম নাফে রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বুরনুস পরিধান করিয়ে দেন। এখন প্রশ্ন হলো- লম্বা টুপি পরিধান করলে শীত নিবারণ হবে কি? কখনো নয়। বরং টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা চাদর পরিধান করলেই শীত নিবারণ হয়।
অতএব, বুখারী শরীফের বর্ণনা দ্বারা ‘বুরনুস’ পরিধান করা বৈধ প্রমাণিত হয়, এটা সত্য কথাই তবে লম্বা টুপি নয়, বরং টুপি সংযুক্ত জুব্বা, পশমী চাদর ইত্যাদি। কারণ পূর্বেই প্রমাণিত হয়েছে যে, ‘বুরনুস’ টুপি বেদ্বীন-বদদ্বীন তথা খৃষ্টানদের খাছ টুপি। আর ইসলামের প্রাথমিক যুগে বুরনুস টুপি পরিধান করা হলেও পরে তা পরিহার করা হয়েছে।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)