খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৮)
গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
, ১৭ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৩ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০২ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
لا يكمل الفقير فى باب الاتباع لرسول الله صلى الله عليه وسلم حتى يصير مشهودا له فى كل عمل مشروع ويستاذنه فى جميع اموره من اكل ولبس وجماع ودخول وخروج.
অর্থাৎ কোন ফকীহ্ (অর্থাৎ ওলীআল্লাহ) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (শুধুমাত্র বাহ্যিক) অনুসরণেই কামেল হতে পারেন না, যে পর্যন্ত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শরীয়তের প্রতিটি কাজের মধ্যে উনার নিকট দৃশ্যমান না হন। এমনকি উনার খাওয়া, পরা, বাহিরে যাওয়া, ভিতরে প্রবেশ করা ইত্যাদি যাবতীয় ব্যাপারে তিনি উনার অনুমোদন গ্রহণ করতে সক্ষম হন। (তবাকাত ২য় খ- ১৩৭ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে হযরত আবুল আব্বাস মারাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
لى اربعون سنة ما حجبت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ولو حجبت طرفة عين ما اعددت نفسى من جملة المسلمين.
অর্থাৎ “আজ চল্লিশ বৎসরব্যাপী আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (যিয়ারত) হতে বঞ্চিত হইনি। যদি এক মুহূর্তও উনার যিয়ারত মুবারক হতে বঞ্চিত হতাম, তবে আমি নিজেকে মুসলমান বলে গণ্য করতাম না।” (তবাকাত ২য় খ- ১৩ পৃষ্ঠা)
দেখুন, যাঁরা সত্যিকার কামেল ওলী, উনাদের অবস্থা কিরূপ? মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের হৃদয়ের দ্বার এমনভাবে উন্মুক্ত করেছেন যে, উনাদের নিকট কোন কিছুই লুকায়িত থাকে না। এমন হওয়াই তো স্বাভাবিক। কারণ ওলীআল্লাহ মানে মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু। বন্ধুর নিকট বন্ধু যে কোন বিষয় লুকায়িত রাখেন না, এটা তো জানা কথা। এটা বন্ধুত্বেরই দান। সেজন্য হযরত আবু সাঈদ খাররাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন-
فلا يغيب عنه شيء ولا يخفى عليه شيىء
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার (ওলীগণের) নিকট কোন কিছু অবিদিত অথবা লুকায়িত থাকে না।” (তবাকাত ১ম খ- ৭৯ পৃষ্ঠা)
এমনি ধরনের হাক্বীক্বী কামিল শায়েখ হলেন- সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং কুতুবুল আকতাব হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যাঁদের উছীলায় পরবর্তী সকলেই চীশ্তিয়া তরীক্বার নিয়ামত প্রাপ্ত হয়েছেন। উনাদের বরকতময় “মালফূযাত” সম্বলিত কিতাব “আনীসুল আরওয়াহ্, দলীলুল আরেফীন” যদি গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে কাদেরটা গ্রহণযোগ্য হবে? উলামায়ে সূ’ বা যৎসামান্য ইলমে জাহের বা পুঁথিগত বিদ্যার অধিকারী তথাকথিত আলেম বা মাশায়েখদেরটা? কাজেই যৎসামান্য ইলমে জাহের বা পুঁথিগত বিদ্যার অধিকারী তথাকথিত আলেম বা মাশায়েখরা বললেই যে উল্লেখিত কিতাবসমূহ গ্রহণযোগ্য হবে না, তা নয়। বরং তথাকথিত আলেম বা মাশায়েখদের উক্ত বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য, সেটাই চিন্তার বিষয়। মূলকথা হলো- হাক্বীক্বী আলেম বা মাশায়েখগণের নিকট “আনীসুল আরওয়াহ্, দলীলুল আরেফীন” ইত্যাদি কিতাবসমূহ পূর্বে যেরূপ গ্রহণযোগ্য ছিল, বর্তমানেও গ্রহণযোগ্য রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও গ্রহণযোগ্য হিসেবেই থাকবে ইনশাআল্লাহ! উল্লেখ করা জরুরী যে, চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির কথা শুধু “আনীসুল আরওয়াহ্ ও দলীলুল আরেফীন” কিতাবদ্বয়েই উল্লেখ করা হয়নি, বরং ইমামুল আইম্মাহ হযরত ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইসরারুল আউলিয়া ও সুলত্বানুল আউলিয়া মুজাদ্দিদে যামান হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রাহাতুল কুলূব ও রাহাতুল মুহিব্বীন ইত্যাদি কিতাবসমূহেও উল্লেখ আছে। তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, “আনীসুল আরওয়াহ্” কিতাব ও চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির বর্ণনা খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিনা, তাতে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। তাদের এ বক্তব্যটুকু নিহায়েতই আপত্তিকর ও জিহালতপূর্ণ। কারণ চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির কথা সুলত্বানুল হিন্দ খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একাই বর্ণনা করেননি বরং চীশ্তিয়া খান্দানের আরো অনেকেই চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির আমল করেছেন এবং তার বর্ণনা দিয়েছেন। যেমন- বিখ্যাত বুযুর্গ হযরত হাজী শরীফ জিন্দানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত উছমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সহল তশ্তরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি ও বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি। যাঁরা সারা বিশ্বের মানুষের নিকট সুপরিচিত, সর্বজন মান্য, সর্বজন স্বীকৃত ও অনুসরণীয়, চীশ্তিয়া তরীক্বার ধারক-বাহক। উনাদের বক্তব্যের প্রতি সন্দেহ পোষণ করা গোমরাহী নয় কি? এছাড়া উনাদের কিতাব বা বক্তব্যের বেলায় যদি এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করা হয় বা সন্দেহ পোষণ করা হয়, তবে অন্যান্যদের বেলায়ও এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন বা সন্দেহ পোষণ করা স্বাভাবিক। আর স্বাভাবিকভাবেই তাদের ন্যায় কিছু অজ্ঞ, জাহেল ও নাদান লোক প্রশ্ন করবে বা বলে ফেলবে- বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ইত্যাদি মানা যাবে না। কারণ তা সত্যিকার অর্থেই ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের লিখা না। উনাদের নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে, তাতে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক! উল্লেখ্য, তাদের এ ধরনের বক্তব্যের কারণেই অধুনা কিছু তথাকথিত নব্য বুদ্ধিজীবীর প্রকাশ ঘটেছে। যারা বলে- পবিত্র হাদীছ শরীফ মানা ঠিক হবে না, কারণ তা মানুষ লিপিবদ্ধ করেছে। আর মানুষের ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। অনুরূপ কিছুদিন পর হয়তো বা দেখা যাবে- একটি দল বের হবে, যারা বলবে- কুরআন শরীফও মানা যাবে না, কারণ তাও মানুষই লিপিবদ্ধ করেছে। নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক! যদি তাই হয়, তবে তাদের বক্তব্য মোতাবেক প্রশ্ন আর সন্দেহের কারণে দ্বীন ইসলামকেই বাদ দিতে হবে। কারণ দ্বীন ইসলাম তো আমরা মানুষের কাছেই পেয়েছি। দ্বীন ইসলাম মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দ্বীন কি-না? তাতেও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! অতএব, এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন ও সন্দেহ পোষণ অনেক ক্ষেত্রেই করা সম্ভব, কিন্তু এ ধরনের জিহালতপূর্ণ প্রশ্ন ও অহেতুক সন্দেহ মোটেও শরীয়ত সমর্থিত নয়। বরং যারা দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে এ ধরনের প্রশ্ন ও সন্দেহের অবতারণা করে, তারা গোমরাহ্, ফিৎনাবাজ ও দ্বীন ইসলাম ধ্বংসে নিয়োজিত। মূলকথা হলো- “আনীসুল আরওয়াহ্” কিতাব ও চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির বর্ণনা অবশ্যই অবশ্যই সুলত্বানুল হিন্দ খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজস্ব। এর মধ্যে বিন্দুমাত্রও সন্দেহের অবকাশ নেই।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)