খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৭)
গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
, ০৭ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২২ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৬ অগ্রহায়ণ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
إِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ وَإِنَّ الْأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِرْهَمًا وَلَا دِيْنَارًا وَإِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আলিমগণ হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিছ। আর নিশ্চয়ই হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনারা কোন দীনার-দিরহাম রেখে যাননি। বরং ইলিম রেখে গেছেন।” (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, বযলুল মাযহূদ, মিরকাত, লুমআত, আশআতুল লুমআত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব)
উল্লেখ্য যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ওয়ারিছ স্বত্ব হিসাবে দু’ প্রকার ইলিম রেখে গেছেন। অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাছাওউফ। যে প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلْعِلْمُ عِلْمَانِ فَعِلْمٌ فِي الْقَلْبِ فَذَلِكَ الْعِلْمُ النَّافِعُ وَعِلْمٌ عَلَى اللِّسَانِ فَذَلِكَ حُجَّةُ اللهِ عَلَى ابْنِ آدَمَ.
অর্থ: “ইলিম দু’ প্রকার- (১) ক্বাল্বী ইলিম (ইলমে তাছাওউফ), যা উপকারী ইলিম। (২) জবানী ইলিম (ইলমে ফিক্বাহ্), যা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দলীলস্বরূপ।” (দারেমী, বায়হাক্বী, দায়লামী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল র্বা, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুমআত আশআতুল লুমআত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মুযাহেরে হক্ব)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওয়ারিছ স্বত্ব হিসেবে ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাছাওউফ উভয়টিই রেখে গেছেন। কাজেই যে ব্যক্তি উভয়টিই শিক্ষা করলো, সে ব্যক্তিই নায়েবে রসূল বা হাক্বীক্বী আলিম। উপরোল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, ক্বাইয়ূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “মকতুবাত শরীফে” উল্লেখ করেন-
اَلْعُلَمَاءُ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ-علمی از انبياء عليهم الصلوات والتسليمات باقى منده است دونوع است علم احكام وعلم اسرار وورث كشسى هست كه اوراهردونوع علم سهم بود نه أنكه اورا ازيك نوع نصيب بود نه ازنوع ديكر كه أن منافى ورائت است- ...ه ورائت را از جميع انواع ترك مورث نصيب است نه ازبعض وانكه اورا ازمعين نصيب است داخل غرما است كه نصيب اوبجنس حق او نعلق كرفته است.
অর্থ: “আলিমগণ হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিছ” এই পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আলিম উনারাই, যাঁরা হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের রেখে যাওয়া ইলমে আহ্কাম (ইলমে ফিক্বাহ্) ও ইলমে আসরার (ইলমে তাছাওউফ) উভয় প্রকার ইলমের অধিকারী। অর্থাৎ উনারাই প্রকৃত ওয়ারিছ বা স্বত্বাধিকারী। আর যে ব্যক্তি শুধুমাত্র এক প্রকার ইলমের অধিকারী, সে ব্যক্তি হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রকৃত ওয়ারিছ নয়। কেননা পরিত্যক্ত সম্পত্তির সকল ক্ষেত্রে অংশিদারী হওয়াকেই ওয়ারিছ বলে। আর যে ব্যক্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন নির্দিষ্ট অংশের অধিকারী হয় তাকে গরীম বলে। অর্থাৎ সে ওয়ারিছ নয়, গরীমের অন্তর্ভুক্ত।” হাক্বীক্বী আলিম বা মাশায়িখ সম্পর্কে হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মিশকাত শরীফের বিখ্যাত শরাহ্ “মিরকাত শরীফে” উল্লেখ করেন যে, মালিকী মায্হাবের ইমাম হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
مَنْ تَفَقَّهَ وَلَمْ يَتَصَوَّفْ فَقَدْ تَفَسَّقَ وَمَنْ تَصَوَّفَ وَلَمْ يَتَفَقَّهْ فَقَدْ تَزَنْدَقَ وَمَنْ جَمَعَ بَيْنَهُمَا فَقَدْ تَحَقَّقَ
অর্থ: “যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইলমে তাছাওউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসেক। আর যে ব্যক্তি ইলমে তাছাওউফ শিক্ষা করলো কিন্তু ইলমে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো না, সে যিন্দিক (কাফির)। আর যে ব্যক্তি উভয়টি শিক্ষা করলো, তিনি মুহাক্কিক অর্থাৎ হক্কানী আলিম।” অর্থাৎ যে ইলমে ফিক্বাহ্ শিখলো, কিন্তু ইলমে তাছাওউফ শিখলো না, সে হচ্ছে ফাসেক। আর যে বলে আমি মা’রিফাত করি বা ইলমে তাছাওউফ করি কিন্তু শরীয়ত বা ফিক্বাহ্ স্বীকার করে না, সে হচ্ছে যিন্দীক। আর যিনি উভয়টিই শিক্ষা করলেন তিনি হচ্ছেন- মুহাক্কিক অর্থাৎ হাক্বীক্বী আলিম বা মাশায়েখ। সুতরাং যারা হাক্বীক্বী আলিম বা মাশায়েখ নয়, বরং ইলমে তাছাওউফ বিহীন তথাকথিত আলিম বা মাশায়েখ, তাদের পক্ষেই একথা বলা সম্ভব যে, “আনীসুল আরওয়াহ্, দলীলুল আরেফীন” ইত্যাদি কিতাব গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তাদের সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং ওলীআল্লাহগণ উনাদের কোনরূপ তায়াল্লুক বা সম্পর্ক থাকে না, যার ফলে তারা যেরূপ হক্কানী ওলীআল্লাহগণ উনাদেরকে মূল্যায়ন করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়, তদ্রুপ ব্যর্থ হয় উনাদের লিখনী, বক্তব্য ও আমলসমূহকে মূল্যায়ন করতে। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি হাদীছে কুদ্সী শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ اَوْلِيَائِىْ تَحْتَ قَبَائِىْ لَايَعْرِفُهُمْ غَيْرِىْ اَوْ اِلَّا اَوْلِيَائِىْ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমার ওলীগণ আমার ক্বাবা বা কুদরতী জুব্বার মধ্যে অবস্থান করেন, আমি এবং আমার ওলীগণ ব্যতীত উনাদেরকে কেউই হাক্বীক্বীভাবে চিনে না।” আর যাঁরা হাক্বীক্বী আলিম বা মাশায়েখ, উনারা ইলমে তাছাওউফের অধিকারী হওয়ার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ উনাদেরকে ও উনাদের লিখনী, বক্তব্য, আমল ও কিতাবসমূহকে পূর্ণভাবে মূল্যায়ন করেন। কেননা উনারা জানেন, হাক্বীক্বী আলিম বা মাশায়েখগণ যা বলেন, করেন ও লিখেন সবই মহান আল্লাহ পাক উনার অথবা সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক বা পরামর্শক্রমে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ সর্বদাই উনাদের যিয়ারত মুবারকে মশগুল থাকেন। এ প্রসঙ্গে হযরত শায়েখ আবুল মাওয়াহেব শাজলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
اِنَّ اَوْلِيَاءَ اللهِ يُطِعُوْنَ عَلَى اُمُوْرٍ لَمْ يُطِعْ عَلَيْهَا الْعُلَمَاءُ فَلَا يَسَعِ الخْائِفَ عَلَى دِيْنِهِ اِلَّا الْاَدَبِ وَالتَّسْلِيْمِ.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ এমন সমস্ত বিষয় জানতে পারেন, যা (জাহিরী) আলিমদের ইলিমের বাহিরে। এমতাবস্থায় যিনি নিজের দ্বীনের ভয় রাখেন উনার উচিত যে, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে সম্মান করা এবং উনাদের আদেশ-নির্দেশ মেনে নেয়া। অর্থাৎ হযরত আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের কথা মেনে নেয়ার মধ্যেই নিজের দ্বীনকে বাঁচিয়ে রাখার প্রধান উপায় নিহিত।” (তবাকাত ২য় খ- ৭০ পৃষ্ঠা)
এটা যথার্থ সত্য। কারণ চক্ষুষ্মান ব্যক্তি যা অনুভব করতে পারে অন্ধ ব্যক্তি তা পারে না, এটা সর্বজনস্বীকৃত। হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। উনারা শরীয়তের প্রত্যেকটি বিষয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুমতি মুবারক গ্রহণ করে থাকেন। শুধু পুঁথিগত বিদ্যার উপর নির্ভর করে কাজ করেন না।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)