খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪)
গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
, ২২ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৯ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ০৭ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২২ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কারো কারো বক্তব্য এই যে, “সাদা রংয়ের চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি” সুন্নত প্রমাণ করতে “আদ্দিমিয়াত্বী” নামক কিতাব হতে ‘হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত ও আনীসুল আরওয়াহ, দলীলুল আরেফীন ইত্যাদি কিতাব হতে সুলত্বানুল হিন্দ খাজা হাবীবুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণিত যে পবিত্র হাদীছ শরীফদ্বয় উল্লেখ করা হয়েছে, তা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বয়ের কোন সনদ ও বরাত উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া আনীসুল আরওয়াহ, দলীলুল আরেফীন ইত্যাদি কিতাব সমূহ মাশায়েখগণের নিকট কতটুকু গ্রহণযোগ্য তাও চিন্তার বিষয় এবং “আনীসুল আরওয়াহ” কিতাব সুলত্বানুল হিন্দ খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কি-না ও চার টুকরা সম্পর্কিত বর্ণনা উনার কি-না তাতেও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।” এর জবাবে বলতে হয় যে, পবিত্র হাদীছ শরীফের উপর আমল করার জন্য তার সনদ বা বরাত জানা শর্ত নয়। ফাযায়েলের কিতাব সমূহে এরূপ অনেক পবিত্র হাদীছ শরীফ রয়েছে, যার সনদ ও বরাত কোনটাই উল্লেখ নেই, তাই বলে কি তা আমল করা যাবেনা? যেমন বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, হাফিজুল হাদীছ, হযরত ইমাম ইব্নে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব “আল মুনাব্বেহাত” কিতাবে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহের কোনই সনদ বা বরাত উল্লেখ করা হয়নি। তাই বলে কি উল্লেখিত কিতাব সমূহে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহ জঈফ ও মাওজূ? তাছাড়া সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত সকল পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহ কিতাবে সংরক্ষিত হয়নি। কোন পবিত্র হাদীছ শরীফের সনদ বা বরাত উল্লেখ না থাকলেই যে তার সনদ নেই বা তা গ্রহণযোগ্য নয়, শরীয়তের কোথাও তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে হ্যাঁ, পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ্ না জঈফ, না মওজূ ইত্যাদি জানার জন্য অবশ্যই সনদের প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে বলতে হয় যে-
كَانَتْ لَهُ كُمَّةٌ بَيْضَاءُ
অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাদা রংয়ের গোল টুপি ছিল। এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন বিখ্যাত ও সর্বজনমান্য ও নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিছ হযরত দিমিয়াত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি ইমাম ও হাফিজুল হাদীছ ছিলেন এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দিছগণের নিকট সম্পূর্ণ বিশ্বস্ত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে তাযকিরাতুল মুহাদ্দিছীন ও বুস্তানুল মুহাদ্দিছীনে বিখ্যাত ও বিশ্বস্ত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম দিমিয়াত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বলা হয়- শায়খুল মুহাদ্দিছীন, হাফিজুল হাদীছ, ছহিবুত্ তাছানীফ, হাফিজুল কাবীর, হাফিজুল ওয়াক্ত ইমাম দিমিয়াত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৬১৩ হিজরীতে বিলাদত গ্রহণ করেন। তিনি ইলমে হাদীছে সুউচ্চ পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। উচ্চ শ্রেণীর বহু মুহাদ্দিছগণ উনার ভূয়সী তা’রীফ বা প্রশংসা করেছেন। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মিশরের উচ্চ শ্রেণীর “হাফিজুল হাদীছ” ও “পবিত্র হাদীছ শরীফ তদন্তকারী বিশ্বাসযোগ্য মুহাদ্দিছ বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লামা হাফিজ যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে শায়খুল মুহাদ্দিছীন, হাফিজ ও হুজ্জাত লক্ববে ভূষিত করেছেন। আর হাফিজ ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে উচ্চ শ্রেণীর সনদ সমূহের জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি এবং অধিক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ‘হাফিজুল কাবীর’ বলে সম্বোধন করেছেন। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও শারেহ্ হাফিজ ইবনে হাজর আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৮৫২) তিনি উনাকে “হাফিযুল হাদীছ” ও ইলমে হাদীছে কামালত বা পূর্ণতাপ্রাপ্ত এবং অগাধ জ্ঞানের ভান্ডার বলে আখ্যায়িত করেছেন। মুহাদ্দিছ ইয়াফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৭৬৮ হিঃ) এবং ইব্নে হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি (১০০০ হিঃ) উনারা উনাকে “হাফিজুল ওয়াক্ত” বলেছেন। হযরত আবুল হাজ্জাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মুহাদ্দিছগণের মধ্যে পবিত্র হাদীছ শরীফ কণ্ঠস্থে উনার সমতুল্য আমি কাউকেও দেখিনি।
উল্লেখ্য, হযরত ইমাম দিমিয়াত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন ইলমে হাদীছের শায়েখ বা ওস্তাদ। একদা তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফের দর্স শেষ করার পর হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং এ অবস্থায়ই ৭৫০ হিজরী যিলক্বদ শরীফ মাসের ১০ অথবা ১৫ তারিখে ওফাত লাভ করেন। তিনি বহু কিতাবের মুছান্নিফ বা লেখক ছিলেন। উনাকে ছহিবুত্ তাছানীফও বলা হয়। মোটকথা হলো- হযরত ইমাম দিমিয়াত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি মুহাদ্দিছ ও জীবনী লেখকগণ কোন প্রকার অনাস্থা প্রকাশ করেননি, বরং সকলেই উনাকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত বা বিশ্বাসযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং হযরত ইমাম দিমিয়াত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণিত উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য। আর তাই বিখ্যাত ও সর্বজনমান্য ও অনুসরণীয় আলেম ও মুহাদ্দিছ, হযরত ইমাম কুস্তলানী ও যারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা উনাদের স্ব স্ব কিতাব “মাওয়াহেব ও শরহে মাওয়াহেবে” টুপির দলীল হিসেবে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছেন। যদি উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা দলীল বা আমলের উপযুক্ত না হতো, তবে উনারা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা নিজ নিজ কিতাবে দলীল হিসেবে উল্লেখ করতেন না। অথবা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করার পর বলতেন যে, এই পবিত্র হাদীছ শরীফখানা জঈফ, মওজু ইতাদি। কেননা উনারা বর্তমান যামানার উলামায়ে “সূ” বা তথাকথিত শায়খুল হাদীছ, মুহাদ্দিছ ও মাশায়েখদের চেয়েও পবিত্র হাদীছ শরীফের উছূল বা রীতি-নীতি সম্পর্কে অনেক অনেক বেশি জ্ঞাত ছিলেন। স্মর্তব্য যে, বিখ্যাত আলেম ও হাদী আল্লামা রঈসুদ্দীন আহমদ উনার লিখিত দলীল সমৃদ্ধ কিতাব “তাহ্ক্বীকুল মাসায়েল” ১২৯ পৃষ্ঠায় উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফের বিস্তারিত আলোচনার পর বলেন, হযরত ইমাম দিমিয়াত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণিত উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা নিশ্চয়ই ছহীহ্ হাদীছ শরীফ। আর যেহেতু উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা জঈফ বা মওজু হওয়ার সুস্পষ্ট কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না, সেহেতু উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য অনুসরণীয়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)