খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১)
গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
, ০৬ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৩ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ২২ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০৬ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
اِيَّاكُمْ وَلُبُوْسَ الرُّهْبَانِ فَاِنَّهُ مَنْ تَزَيَّا بِهِمْ اَوْ تَشَبَّهَ فَلَيْسَ مِنِّىْ أَخْرَجَهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ.
অর্থ: “ইমাম তবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আওসাত’ কিতাবে বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “সাবধান” তোমরা খৃষ্টান সন্নাসীদের পোশাক হতে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই যারা খৃষ্টানী পোশাক দ্বারা নিজেদের সুসজ্জিত করে অথবা তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রাখবে, সে ব্যক্তি তাদেরই দলভুক্ত হবে।” (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)
সুতরাং ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ ও মজুসী মুশরিকরা অর্থাৎ কাফের, মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীনরা খাছভাবে যে টুপি পরিধান করে, সে টুপি মুসলমানদের জন্য ব্যবহার করা কি করে জায়েয হতে পারে? যেমন-কিস্তি বা লম্বা টুপি কাফের তথা হিন্দু মারওয়াবীদের খাছ টুপি বা শেয়ার। এ লম্বা টুপি সম্পর্কে তাফসীরে বায়জাবীর বিখ্যাত শরাহ্ “হাশিয়ায়ে মুহিউদ্দীন শায়েখযাদাহ্ ১ম খ- ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
لُبْسُ الْغِيَارِ وَشَدُّ الزُّنَّارِ وَنَحْوُهُمَا كُفْرٌ
অর্থ: “গিয়ার” পরিধান করা ও পৈতা বাঁধা এবং এতদুভয়ের ন্যায় পোশাক পরিধান করা কুফরী। আর "الغيار" (গিয়ার) শব্দের ব্যাখ্যায় উক্ত কিতাবের উক্ত পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اَلْغِيَارُ ... عَلَامَةُ اَهْلِ الذِّمَّةِ وَقِيْلَ هُوَ قَلَنْسُوَةٌ طَوِيْلَةٌ كَانَتْ تَلْبِسُ فِىْ اِبْتِدَاءِ الْاِسْلَامِ وَهِىَ الْاَنَ مِنْ شِعَارِ اَهْلِ الْكُفْرِ مُخْتَصَّةٌ بِهِمْ كَالزُّنَّارِ الْمُخْتَصَّةُ بِالنَّصَارَى.
অর্থ: “গিয়ার, তা হলো- জিম্মিদের শেয়ার। কেউ কেউ বলেন, “গিয়ার” হলো- লম্বা টুপি, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ব্যবহার করা হতো এবং তা বর্তমানে কাফেরদের খাছ শেয়ার বা আলামত। যেরূপ নাছারাদের খাছ আলামত হচ্ছে- টাই।”
আর এ প্রসঙ্গে বাহ্রুল উলুম, ফখরুল ফুক্বাহা, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, হাফিজুল হাদীছ, মুফতিউল আ’যম, শায়খুল মিল্লাতে ওয়াদ্দীন, মুবাহিছুল আ’যম, হযরতুল আল্লামা শাহ্ ছূফী আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ রুহুল আমীন বশীরহাটি রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রণীত- বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য দলীল সমৃদ্ধ ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে আমীনিয়াতে” উল্লেখ করেন, “কিস্তি (লম্বা) টুপি খাছ মারওয়ারিদের (হিন্দুদের) পোশাক ..........।”
অতএব প্রমাণিত হলো যে, সব ধরনের টুপিই যেরূপ সুন্নত বা খাছ সুন্নত নয়, তদ্রুপ সব ধরনের টুপিও পরিধান করা জায়েয নয়। বরং যে টুপি সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পরিধান করেছেন বলে পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত, সে টুপিই সুন্নতী বা খাছ সুন্নতী টুপি। আর যে টুপি পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত সুন্নতী বা খাছ সুন্নতী টুপি নয় এবং বেদ্বীন-বদদ্বীন তথা কাফেরদের শেয়ারও নয়, সে টুপি পরিধান করা জায়েয। তবে সে টুপি অবশ্যই সুন্নতের খেলাফ। সুতরাং সাব্যস্ত হলো যে, জায়েয ও সুন্নত এক কথা নয়, বরং এর মধ্যে আসমান-যমীন পার্থক্য রয়েছে। দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, যারা (قَلَنْسُوَةٌ)“ক্বলানসুওয়াতুন” শব্দের উপর ভিত্তি করে সব ধরনের টুপিকে সুন্নত বলে, তারা মুলতঃ নেহায়েতই অজ্ঞ এবং তারা (قَلَنْسُوَةٌ)“ক্বলানসুওয়াতুন” শব্দের হাক্বীক্বত মোটেও বুঝতে পারেনি। কারণ প্রথমতঃ পবিত্র হাদীছ শরীফে টুপির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র (قَلَنْسُوَةٌ)“ক্বলানসুওয়াতুন” শব্দই ব্যবহৃত হয়নি, বরং অন্য শব্দও ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন- كُمَّةٌ ও كِمَامٌ (কুম্মাতুন এবং কিমামুন)।
কাজেই যারা বলে, পবিত্র হাদীছ শরীফে টুপির ক্ষেত্রে কেবলমাত্র (قَلَنْسُوَةٌ) “ক্বলানসুওয়াতুন” শব্দই ব্যবহৃত হয়েছে। তাদের সে দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা ও পবিত্র হাদীছ শরীফ বিরোধী। দ্বিতীয়তঃ পবিত্র হাদীছ শরীফে যেখানে টুপির ক্ষেত্রে (قَلَنْسُوَةٌ) “ক্বলানসুওয়াতুন” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানেই উক্ত টুপির আকৃতি প্রকৃতি বা গুণাগুণ বর্ণনার জন্য অন্য শব্দও ব্যবহৃত হয়েছে। যা দ্বারা স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, উক্ত টুপিটি কিরূপ ছিল। যেমন মেশকাত শরীফের শরাহ্ মেরকাত শরীফে উল্লেখ আছে-
كَانَ يَلْبِسُ قَلَنْسُوَةً بَيْضَاءَ
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাদা রংয়ের টুপি পরিধান করেছেন।” উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফের দিকে যদি আমরা ভালভাবে লক্ষ্য করি, তবেই ব্যপারটি স্পষ্ট হয়ে যাবে। যেমন, দেখুন উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে (قَلَنْسُوَةٌ) শব্দের সাথে (بَيْضَاءُ) শব্দও উলেখ আছে, যা দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি রংয়ের টুপি পরিধান করতেন, তা বর্ণনা করা হয়েছে। নচেৎ শুধু (قَلَنْسُوَةٌ)“ক্বলানসুওয়াতুন” শব্দের দ্বারা সাদা রংয়ের টুপি কখনোই প্রমাণিত হয়না। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কোর্তার ক্ষেত্রে (قَمِيْصٌ) “ক্বামীছ” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আর সে (قَمِيْصٌ) কি রংয়ের, কি ধরনের বা কি প্রকারের ছিল, তা স্পষ্ট করে দেয়ার জন্য (قَمِيْصٌ) শব্দের সাথে (اَلْقَمِيْصُ الْاَبْيَضُ) সাদা রংয়ের ক্বামীছ (قَمِيْصٌ اَنْصَافُ السَاقَيْهِ) নিছফুস্ সাক্ব ক্বামীছ (فِىْ قَمِيْصٍ وَاحِدٍ) অর্থাৎ এক ক্বামীছে নামায পড়েছেন। অর্থাৎ উনার ক্বামীছ গোল ছিল ইত্যাদি শব্দ বা বাক্যও উল্লেখ করা হয়েছে। এখন যারা (قَلَنْسُوَةٌ) শব্দের ব্যাপক অর্থের উপর ভিত্তি করে সব ধরনের টুপি সুন্নত প্রমাণ করতে চায়, তারা কি (قَمِيْصٌ) শব্দের ব্যাপক অর্থের উপর ভিত্তি করে শার্ট পরিধান করাকেও সুন্নত ফতওয়া দিবে? যদি (قَمِيْصٌ) শব্দের ব্যাপক অর্থের উপর ভিত্তি করে শার্টকে সুন্নত বলা না যায়, তবে (قَلَنْسُوَةٌ) শব্দের ব্যাপক অর্থের উপর ভিত্তি করে সব ধরনের টুপিকে কি করে সুন্নত বলা যাবে? মুলতঃ শুধুমাত্র (قَلَنْسُوَةٌ) শব্দের উপর ভিত্তি করে কিস্তি বা লম্বা টুপি ও পাঁচ কল্লি টুপিকে সুন্নত বলা জেহালত বৈ কিছুই নয়। কেননা তারা এমন একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ পেশ করতে পারবেনা, যে পবিত্র হাদীছ শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের টুপির বর্ণনার ক্ষেত্রে (قَلَنْسُوَةٌ) শব্দের সাথে ‘লম্বা’ অথবা ‘পাঁচ কল্লি’ সম্পর্কিত কোন শব্দ উল্লেখ আছে। পক্ষান্তরে পবিত্র হাদীছ শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগম উনাদের টুপি মুবারকের বর্ণনার ক্ষেত্রে সাদা, গোল ও চার টুকরা ইত্যাদি শব্দ ঠিকই উল্লেখ আছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৬)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৮)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৪)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)