খনিতে তেল কীভাবে তৈরি হয়? কোথা থেকে আসে?
, ০৪ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৫ ছানী ‘আশার, ১৩৯০ শামসী সন , ২৫ মে, ২০২৩ খ্রি:, ১২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পাঁচ মিশালী

ইংরেজিতে তেলকে ‘পেট্রোলিয়াম’ বলা হয়। শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ পেত্রা এবং ওলিয়াম থেকে। পেত্রা অর্থ পাথর এবং ও লিয়াম অর্থ তেল। সেই হিসেবে পেট্রোলিয়াম বলতে বোঝায় পাথর বা মাটি খুঁড়ে উত্তোলন করা তেল।
খনিজ তেল মূলত হাইড্রোকার্বনের মিশ্রণ। এটি এমন এক যৌগ, যার আণবিক গঠনে প্রধানত কার্বন এবং হাইড্রোজেন থাকে। তেল এমন একটি উপাদান যা লাখ লাখ বছর ধরে রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একপর্যায়ে তেলে রূপ নেয়।
অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রিডার মুলার সায়েন্স-নরওয়েকে বলেছে, কিছু অদ্ভুত কারণে অনেকেরই ধারণা, ডাইনোসর থেকে তেল আসে। কিন্তু তেল মূলত আসে কোটি কোটি ক্ষুদ্র শৈবাল এবং প্ল্যাঙ্কটন থেকে।
তেলের উৎপত্তির পেছনে মূল অবদান বড় কোনো সরীসৃপের নয়, বরং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণীর।
তেলের উৎস সম্পর্কে সর্বাধিক স্বীকৃত তত্ত্ব হলো, এটি সমুদ্র এবং হ্রদগুলোর তলদেশে জমে থাকা প্রাণী ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম শৈবাল পচে সৃষ্টি হয়েছে। এই তত্ত্বমতে, সূক্ষ্ম পলিদানাসহ বিভিন্ন জৈব পদার্থ, বিশেষ করে স্থলজ বা সামুদ্রিক উদ্ভিদ নদী অববাহিকায় জমা হয়।
নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়ার পরে কেরোজেন গঠিত হয়, যা নানা ধরনের জৈব পদার্থের মিশ্রণ। এর ওপর দীর্ঘ সময় তাপ ও চাপ বৃদ্ধি পেতে পেতে একপর্যায়ে হাইড্রোকার্বন চেইন গঠন হয়। ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকোর বিজ্ঞানীরা এমনটাই বলেছে।
জৈব পদার্থগুলোর ওপরে অন্য ভূতাত্ত্বিক স্তরগুলো জমতে জমতে চাপ এবং তাপ বাড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা অ্যানেরোবিক ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এতে ধীরে ধীরে জৈব পদার্থগুলো অল্প পরিমাণে অন্য উপাদানের সঙ্গে মিশে হাইড্রোকার্বনে রূপ নেয়।
সহজভাবে বললে, বিষয়টা অনেকটা সব উপাদানকে এক করে সেগুলো প্রেশার কুকারে অনেকক্ষণ রান্না করার মতো (অর্থাৎ যেখানে চাপ এবং তাপের সৃষ্টি হয়), যতক্ষণ না আসল পদার্থটি কার্বন এবং হাইড্রোজেনের চেইনে ভেঙে যায়।
মাটির নিচের স্তরেও একই ধরনের কিছু ঘটে। এতে ওই উপাদানগুলো শিলা থেকে রূপান্তরিত হতে থাকবে এবং তেল হয়ে মাটির নিচে জমতে থাকবে, বলেছে মেক্সিকান বিশেষজ্ঞরা।
এই তত্ত্বটি সবচেয়ে বেশি স্বীকৃত হওয়ার কারণ, সব তেলের মজুতই পাললিক ভূখ-ে পাওয়া গেছে। উপরন্তু, প্রাণী এবং উদ্ভিদের জীবাশ্মের অবশিষ্টাংশের সন্ধানও মিলেছে।
বিকল্প তত্ত্ব:
কয়েকজন বিজ্ঞানী অতীতে যুক্তি দিয়েছিলো, তেলের একটি অজৈব উৎস রয়েছে এবং এটি কোনো প্রাণীর অবশিষ্টাংশ ছাড়াই পৃথিবীর গভীরে গঠিত হতে পারে।
এই তত্ত্বের মধ্যে বেশ কয়েকটি ১৯ শতকের প্রথম দিকে প্রস্তাব করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়ার রসায়নবিদ দিমিত্রি মেন্দেলিভ এসব উপাদানের প্রথম পর্যায়ের সারণি প্রকাশ করেছিলো।
অজৈব তত্ত্বগুলো মনে করে, পৃথিবীর ওপরের দিকের স্তরে কার্বন মূলত হাইড্রোকার্বন অণু, বিশেষ করে মিথেন রূপে বিদ্যমান থাকতে পারে।
পেট্রোলিয়ামে প্রচুর হাইড্রোকার্বন পাওয়া গেছে, যা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে উৎপন্ন হয়। এজন্য জৈব জীবাশ্মের প্রয়োজন হয় না।
এই হাইড্রোকার্বনগুলো পৃথিবীর ভেতরের অংশ থেকে ভূত্বকের দিকে স্থানান্তরিত হতে পারে। এটি ভূপৃষ্ঠের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে বা ওপরের দিকের অভেদ্য স্তরে তেল জমাতে পারে।
এই তত্ত্বগুলোর একটি সংস্করণের কথা বলেছে অস্ট্রিয়ান জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানী টমাস গোল্ড (১৯২০-২০০৪), যে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যার অধ্যাপক ছিলো।
গোল্ড ১৯৯২ সালে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের জার্নাল পিএনএএস-এ ‘ডিপ হট বায়োস্ফিয়ার’ শিরোনামে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো। পরে একই শিরোনামে সে একটি গ্রন্থ লেখে।
গোল্ডের মতে, পৃথিবীতে হাইড্রোকার্বন জৈবিক বর্জ্য বা জীবাশ্ম জ্বালানির কোনো উপজাত নয়। এটি এমন এক উপাদান, যা প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর গঠন হওয়ার সময় থেকেই ছিল।
যেহেতু পেট্রোলিয়ামের উৎপত্তির জৈব তত্ত্বটি সর্বাধিক গৃহীত, সম্ভবত কিছু পাঠক নিজেদের এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
‘এক কথায় বলা যায়, যেকোনো জৈব পদার্থ থেকে তেল উৎপাদন হতে পারে’, ‘তবে এটি উল্লেখ করা জরুরি যে, তেল উৎপাদন একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম প্রক্রিয়া এবং বিপুল পরিমাণ পদার্থের প্রয়োজন হয়, যা কেবল সমুদ্রে প্ল্যাঙ্কটনের বিশাল পরিমাণের কারণে অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু অন্যান্য পদার্থ এত পরিমাণে নেই।’
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইফতারে তরমুজের শরবত
০৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শেখপুর জামে মসজিদ: ৪০০ বছর ধরে ছড়াচ্ছে শিক্ষার আলো
০৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দুধ-খেজুর একসঙ্গে খাওয়ার উপকারিতা
০৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
রোযায় কখন চিয়া সিড খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন?
০৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
রমাদ্বান শরীফে খেজুরের স্মুদি
০৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
রোযা রেখেও পানিশূন্যতা এড়াবেন যেভাবে
০৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাত গ্রহের বিরল সমাবেশ, আবার দেখা মিলবে ২০৪০ সালে
০৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রাচীন মসজিদের অজানা ইতিহাস করতলব খান মসজিদ
০৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দেহের আর কোন অংশে সঞ্চিত থাকে স্মৃতি, সামনে এলো অবাক করা গবেষণা
০২ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চাঁদপুরের ৬০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্য ‘গায়েবি মসজিদ’
০২ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চাঁদে ম্যাগমার মহাসাগর থাকার প্রমাণ পেয়েছে, দাবি চীনের
০২ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৪৪২ বছরের খেরুয়া মসজিদ
০২ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)