ইলমুত তাযকিয়্যাহ
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
, ২১ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৪ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৪ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ঝগড়া-বিবাদ খুবই ন্যাক্কারজনক ও খারাপ কাজ। নিজের হক্ব ও অধিকার রক্ষা ও লাভের জন্য ন্যায় পন্থায় বিবাদ করা দুরস্ত থাকলেও বিবাদ পরিহার করে চলা সর্বাবস্থায়ই উত্তম। ঝগড়া-বিবাদ করলে কথায় কথায় অশ্লীল, গালিগালাজ ও কটুবাক্য এসে যায় এবং মনের ভিতরে ঘৃণা বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়। যার কারণে ভয়াবহ পরিণামেরও সম্মুখীন হতে হয়।
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وَاِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اقْتَتَلُوا فَاَصْلِحُوْا بَيْنَهُمَا ۖ فَاِنْ بَغَتْ اِحْدَاهُـمَا عَلَى الْاُخْرٰى فَقَاتِلُوا الَّتِيْ تَبْغِيْ حَتّٰى تَفِيْءَ اِلٰى اَمْرِ اللهِ ۚ فَاِنْ فَاءَتْ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَاَقْسِطُوْا ۖ اِنَّ اللهَ يُـحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَ ◌ اِنَّـمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَ اَخَوَيْكُمْ ۚ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَـمُوْنَ ◌
অর্থ : “যদি মুসলমানদের দুই দল জিহাদে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে, যে পর্যন্ত না তারা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মীমাংসা করে দিবে এবং ইনছাফ করবে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইনছাফকারীদেরকে পছন্দ করেন। মু’মিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই। অতএব, তোমরা দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করবে; অবশ্যই তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে। মু’মিনগণ কেউ যেন অপর কোন মু’মিনকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন মু’মিনা অপর মু’মিনাকে যেন উপহাস না করে। কেননা সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠা হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করবে না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডাকবে না। কেউ ঈমানদার হলে তাকে মন্দ নামে ডাকা গুনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালিম।” (পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯-১০)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন মুসলমানকে গাল-মন্দ করা ফাসিকী। আর কতল বা হত্যা করা কুফরী।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِي ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهُ سَـمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَا يَرْمِي رَجُلٌ رَجُلًا بِالْفُسُوقِ وَلَا يَرْمِيهِ بِالْكُفْرِ اِلَّا ارْتَدَّتْ عَلَيْهِ اِنْ لَـمْ يَكُنْ صَاحِبُهُ كَذَلِكَ.
অর্থ : “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ফাসিক বলবেনা এবং কুফরীর অপবাদও দিবেনা। কেননা সেই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে সেইরূপ না হয় তবে তার অপবাদ নিজের উপরই প্রত্যাবর্তন করবে। অর্থাৎ অপবাদ দানকারী নিজেই ফাসিক কিংবা কাফির হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।” (বুখারী শরীফ)
লক্ষ্যণীয় যে, নিজের পরিবারের লোকজন ছাড়া পাড়া প্রতিবেশী লোকজনের সাথে প্রতিদিন মানুষের আদান প্রদান ও সম্পর্কটি জড়িত। ফলে প্রতিবেশী ছেলে-মেয়েরা ঘরে আসা-যাওয়া করে, শিশুগণ শিশুগণে ঝগড়া হয়, এমনকি মারামারিও করে। এছাড়া প্রতিবেশীর গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগীও এসে ক্ষতি করে, যন্ত্রণা দেয়। এসব কারণে মন খারাপ হয় এবং এই মন খারাপী পর্যায়ক্রমে হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতায় পরিণত করে এবং গীবত, শেকায়েত অপবাদ ও দুর্ণাম রটনার পাহাড় রচনা করে। কোন কোন পুরুষ ও মহিলা খুবই রুক্ষ্ম মেজাজের এবং কটুভাষী হয়ে থাকে। তারা অশ্লীল-অশালীন বাক্য ব্যবহারে সীমা অতিক্রম করে মহল্লা ও পাড়ার লোকদেরকে অতিষ্ঠ করে তোলে। নাঊযুবিল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে আহমদ শরীফ ও বায়হাক্বী শরীফ উনাদের মধ্যে একখানা হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্র্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট জনৈক মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, মহিলাটি নফল নামায খুব বেশী বেশী আদায় করে এবং দান-খয়রাত করতেও কার্পণ্য করেনা, নফল রোযা রাখার ব্যাপারেও ত্রুটি করে না। কিন্তু এসবের পাশাপাশি মহিলাটি তার প্রতিবেশীদেরকে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে মনে কষ্ট দেয়। ইহা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সে ইবাদত-বন্দিগী বেশী বেশী করলেও প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়ার কারণে জাহান্নামী হবে। নাঊযুবিল্লাহ! পক্ষান্তরে বিপরীত অপর এক মহিলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে তেমন একটা নফল ইবাদত-বন্দেগী করেনা তবে সামান্য কিছু পনীর সে দান করে। কিন্তু প্রতিবেশী তার যবান দ্বারা কোন কষ্ট পায় না। তাদের সাথে দুর্ব্যবহার সে করেনা এবং তাদের সাথে অশ্লীল বাক্য প্রয়োগ ও গালিগালাজ করে না। তার কথা উল্লেখ করলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে জান্নাতী বলে আখ্যায়িত করলেন। সুবহানাল্লাহ!
বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে ব্যক্তি ন্যায়ের উপর থেকেও ঝগড়া-বিবাদ পরিহার করে, তার জন্য বেহেশতের মধ্যভাগে প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়।”
উপরোক্ত সূরা হুজুরাত শরীফ উনার মধ্যে বর্র্ণিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মুসলমানগণ উনাদের পরস্পর পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ, খুনাখুনি, মারামারি, কলহ, ঝগড়া-বিবাদ এসব অন্যায় থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ করা হয়েছে। পাশাপাশি কখনো এসব অন্যায় কাজ সংঘটিত হলে যথাশীঘ্র তা নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য কর্তব্য।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খেলাধুলা নাজায়িয ও হারাম হওয়া সম্পর্কে সম্মানিত ইসলামী শরীয়তের ফায়সালা
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মানুষকে আমলের প্রতি নিরুৎসাহিত করতেই পবিত্র হাদীছ শরীফ নিয়ে মওজু-জয়ীফ ইত্যাদি অপপ্রচার করছে বাতিল ফিরক্বারা
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩০)
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মাজার শরীফে হামলাকারী বেয়াদব ও লানতপ্রাপ্ত
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে -৪
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৬)
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)