কৃষি ঋণের নামে ব্যাংকের টাকায় সুদী ব্যবসা করছে এনজিওগুলো।
কৃষিঋণ পৌছাচ্ছে না কৃষকের হাতে। বিপরীতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে এনজিওগুলো। সরকারের উচিত এই এনজিওগুলো নিষিদ্ধ করে মাঠপর্যায়ে কৃষকের হাতে ঋণ পৌছানো।
, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মন্তব্য কলাম
বাংলাদেশে এনজিওগুলোর দৌরাত্ম নতুন কিছু নয়। এদের সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণ না করায় দিন দিন এরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। প্রান্তিক অসহায় ও দারিদ্রপীড়িত মানুষদের ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করার পর এই এনজিওগুলো এখন তাদের নতুন কুটকৌশল বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। ক্ষুদ্রঋণের পর এখন তাদের টার্গেট কৃষি ঋণ। সরাসরি কৃষকের হাতে টাকা পৌঁছানোর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এনজিও’র মাধ্যমে ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণ বিতরণ করছে। আর এর সুযোগ নিচ্ছে এনজিওগুলো। এতে কৃষক ঋণ পেলেও সুদ গুনতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে তারা। বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়ে এজেন্ট ব্যাংকের শাখা ছড়িয়ে পড়ছে। ব্যাংকগুলো ইচ্ছে করলে তাদের এজেন্টের মাধ্যমে কৃষকের হাতে ঋণের টাকা পৌঁছে দিতে পারে। একইভাবে পাড়ায়-মহল্লায়, অলিতে-গলিতে মোবাইল ব্যাংকিং হচ্ছে। এই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও ব্যাংকগুলো কৃষকদের ঋণ দিতে পারে। কিন্তু তা না হয়ে এনজিওগুলোর মাধ্যমে কৃষিঋণের পসরা সাজানো হয়েছে। এনজিওগুলো সুযোগ বুঝে কৃষকদের উপর ২০ শতাংশের বেশি হারে সুদ আরোপ করছে। অথচ এনজিওগুলো ব্যাংক থেকে ৯ শতাংশেরও কম সুদে টাকা ধার নিচ্ছে। যদিও কৃষকরা দীর্ঘদিন থেকে বিনা সুদে ঋণের দাবি জানিয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির কথা বলে গ্রাম পর্যায়ে ব্যাংকগুলো শাখা খুলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হলেও ব্যাংকের ঋণ সেবার আওতায় আসতে পারছে না কৃষকরা। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় মোট কৃষি ঋণের ৭০ ভাগই বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমে বিতরণের সুযোগ দেয়া হয়েছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৃষি ঋণের নামে অর্থ নিয়ে ভিন্ন খাতে বিতরণ করছে অনেক এনজিও। এতে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে এনজিওগুলোর পকেটে। স্বল্প পরিসরে কিছু কৃষক ঋণ পেলেও সুদ গুনতে হচ্ছে ২৫% হারে। বিশেষজ্ঞরা বলছে, এনজিওর উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ না থাকা ও নীতিমালার দুর্বলতার কারণেই কৃষি ঋণের সুফল পাচ্ছে না কৃষক।
মূলত এনজিওভিত্তিক কৃষিঋণের এই প্রথা শুরুই হয়েছে ব্যাংকগুলোর অবহেলার কারণে। কৃষকদের মতে, কাজ বাদ দিয়ে কোনও কৃষক ব্যাংকে ব্যাংকে ঋণের জন্য ঘুরতে পারে না। ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে ভোগান্তি বেশি। বিশেষ করে কাগজপত্রের ঝামেলায় কৃষকরা যেতে চায় না। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকের পর্যাপ্ত শাখা না থাকায় কৃষকদের বাধ্য হয়ে এনজিওগুলোর উপর নির্ভর হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। বিবিএসের তথ্যমতে, দেশের ৪১ লাখ পরিবার কৃষি ও পল্লি ঋণের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেও তাদেরকে ঋণ দেয়া হয়নি। এর মধ্যে ১৩% পরিবার কোনও ধরনের তদবির করতে না পারায় তাদের কৃষিঋণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৭% পরিবার ব্যাংক কর্মকর্তাদের খুশি করতে না পারায় তারা ঋণ পায়নি। ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ না পেয়ে এখনও মহাজন থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে ৩.৬৭% কৃষক। এনজিও’র মাধ্যমে ঋণ পাওয়াটা সহজ। কিন্তু এনজিওগুলোর সুদের মাত্রা এত বেশি যে সুদ দিতে গিয়ে সর্বশান্ত হতে হচ্ছে কৃষকদের।
এখানেই শেষ নয়, ঋণ বিতরণে দালাল বা তৃতীয় পক্ষের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি তো রয়েছেই। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজসের কারণে প্রকৃত কৃষকের কাছে কৃষিঋণ যাচ্ছে না। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালীরাই কৃষি ঋণ পাচ্ছে।
বাংলাদেশে এনজিওগুলোর এই সুদী ব্যবসা তথা কারবার বহু আগ থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে। লুটেরা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশদের জন্য সুদ লুটপাটের একটি বড় হাতিয়ার ছিলো। এখন ঔপনিবেশিক শাসন নেই, মারাঠা বর্গী নেই; কিন্তু দেশের আনাচে কানাচে সুদখোর এবং সুদ প্রথাটি রয়ে গেছে এনজিওগুলোর মাধ্যমে। শুধু সুদের ব্যবসাই নয়; এখন রাষ্ট্র তথা দেশের অর্থনীতির মধ্যে সুদ ওৎপ্রোতভাবে ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক ইত্যাদি কুখ্যাত সুদী প্রতিষ্ঠানসহ এনজিওগুলো বর্তমানে গরিবের রক্ত শোষণ করে যাচ্ছে। আর এর মূখ্য কারণই হলো, সাম্রাজ্যবাদীদের এবার নজর পড়েছে বাংলাদেশের দিকে। আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাম্রাজ্যবাদীরা সুদের জালে জর্জরিত করে হাজার হাজার মানুষকে সর্বসান্ত করে এবার তারা চাইছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিকে সুদের মাধ্যমে ধ্বংস করবে। এজন্য তারা বাংলাদেশ সরকারকে ভুলভাল বুঝিয়ে এই এনজিওগুলোকে মাঠে নামিয়েছে। আর লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, দেশের অধিকাংশ এনজিওগুলোর তহবিল, মূলধন ও বিনিয়োগ আসে মিশনারী সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে।
বলাবাহুল্য, সরকারি ব্যাংকগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম দুর্নীতির কারণে ব্যাংকগুলো থেকে কোনো ঋণ পায়না কৃষকসহ দারিদ্র ও নি¤œ পেশাজীবি মানুষ। আর ঋণ নিতে গেলেও দিতে হয় বড় অঙ্কের সুদ। যা এই দারিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদি এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো দেশের কৃষকদের জন্য বিনা সুদে উপযুক্ত ঋণ গ্রহণের ব্যবস্থা করতো, গ্রামপর্যায়ে কমিউনিটি ব্যাংকিংয়ের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে পারতো তাহলে এই এনজিওগুলো কৃষকসহ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ঋণের ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করতে পারতো না। এক্ষেত্রে সরকার যদি ব্যাংক খাতকে দারিদ্রবান্ধব করে এবং ব্যাংক খাতের সুদের কারবার বন্ধ করে তাহলেই এই বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পাবে কৃষক সমাজ। সেইসাথে দেশের প্রধানমন্ত্রী এই সুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিবৃতি দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী সুদকে ঘৃণা করে কাজেই সরকারের উচিত দেশ থেকে রক্তচোষা সুদভিত্তিক অর্থনীতি দূর করে হাক্বীকী ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুয়ার নেশায় বুদ হচ্ছে শিশু-কিশোররা-শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন
২২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে শহীদ করা জায়নবাদী তথা বর্বর ইহুদীরা কাপুরুষতার প্রমাণ দিয়ে অতীত ইতিহাস থেকে একের পর এক গুপ্তহত্যা করে আসছে ইহুদীদের গুপ্তহত্যার অনেক নিন্দা, ধিক্কার এবং প্রচারণা ও প্রতিহতের প্রচেষ্টা দরকার (পর্ব-১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শুধু যুবকরাই নয় এখন এনার্জি ড্রিংকসে বুদ হচ্ছে শিশুরাও কর ফাঁকি দিতে অনেক এনার্জি ড্রিংকস হয়ে গেছে কোমল পানীয় জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অবিলম্বে এনার্জি ড্রিংকস বন্ধ করতে হবে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রে পড়েই দুনিয়াদার মালানারা বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফ বাদ দিয়েছে। পর্নোগ্রাফি, মাদক থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে চাইলে বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফও বেশি বেশি করতে হবে।
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ডানে সেলফি বামে সেলফি, সেলফি সেলফি সেলফি উম্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দিন দিন বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, খুন আর আত্মহত্যা মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ সরকারের উচিত জাতীয়ভাবে দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার ও প্রসার করে এই সামাজিক সমস্যাটি দূরিকরণ করা।
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ইনশাআল্লাহ আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের প্রথম ধনী দেশ। এক উত্তারাঞ্চলের খনিজ উত্তোলন করলেই গোটা দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা বরদাশতযোগ্য নয়।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলায় কৃষিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক; বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বিলুপ্তির পথে ১৯২ জাতের উপকারী পোকা। সরকারের উচিত অবিলম্বে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষিকে বিষমুক্ত করা।
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করা কী অপরাধ? সংবিধান কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ দেয়নি? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে কী বেপর্দা ও ছবির বিরুদ্ধে বলা হয়নি?
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রতি বছর ১ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক “অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নতুন আশঙ্কা এবং বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমেছে”- এ তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নচেৎ সাধারণ অসুখেই প্রাণনাশ হতে পারে
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘ইসলামভীতি মোকাবেলায় জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস’ হলেও কার্যকরী কিছুই হচ্ছে না ইসরাইলকে সহযোগিতা করতে আমেরিকায় ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার আরো বাড়ানো হচ্ছে
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রতারণার ফাঁদে নাগরিক জীবন। সরকারের নজরদারী নেই। রকমফের প্রতারণা বন্ধে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক বিস্তারের বিকল্প নেই।
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)