ইলমে তাছাওউফ
কৃপণতা জঘণ্যতম বদ খাছলত
, ২৯ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৬ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৯ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
একবার সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে পবিত্র কা’বা শরীফের বেষ্টনীর উপর হাত রেখে বলতে লাগলেন, “হে দয়াময় মহান আল্লাহ পাক! এই পবিত্র ঘরের উছীলায় আপনি আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন।”
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “তুমি আমাকে তোমার পাপের বর্ণনা দাও” তখন সে ব্যক্তি বলতে লাগলো, “আমি অগাধ ধন-সম্পদের অধিকারী; কিন্তু আমার স্বভাব এতো কৃপণ যে, কোন অভাবগ্রস্থ, গরীব-দুঃখীকে দূর হতে আসতে দেখলে আমার নিকট বোধ হয় যেন আগুন আসছে, যা আমাকে পুঁড়ে মারবে।”
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “তুমি আমার নিকট হতে দূরে সরে যাও। সেই মহান সত্তা উনার কছম! যিনি আমাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, যদি তুমি রুকনে ইয়ামান এবং মাক্বামে ইবরাহীমের মধ্যস্থলে হাজার বছর ধরে নামায আদায় করতে থাক এবং এতো রোদন করতে থাক যে, তোমার চোখের পানি দ্বারা বহু সংখ্যক নদী প্রবাহিত হয়ে এই মরু প্রান্তরে বৃক্ষ উৎপন্ন হতে থাকে অতঃপর তুমি যদি কৃপণ স্বভাব নিয়েই পরলোক গমন করো তথাপি জাহান্নাম ব্যতীত অন্য কোথাও তোমার স্থান হবে না।” নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক!
সাবধান! কুফর হতে কার্পণ্যের উৎপত্তি এবং কুফরীর স্থান জাহান্নাম। আফসুস! তুমি কি শুননি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
وَمَنْ يَبْخَلْ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَفْسِهِ
অর্থ: যে ব্যক্তি কৃপণতা করে সে ব্যক্তি নিজের নফসের সাথে কৃপণতা করে থাকে। (পবিত্র সূরা মুহম্মদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৮)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অর্থ: যারা কৃপণ স্বভাব হতে মুক্ত তারাই সফলকাম। (পবিত্র সূরা তাগাবুন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা কার্পণ্য হতে দূরে থাক। কেননা, তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায়গুলো এ কার্পণ্যের কারণে ধ্বংস হয়েছে। কৃপণতা তাদেরকে এমন অবস্থায় উপনীত করেছিলো যে, তারা হত্যাকান্ড করেছিলো এবং হারামকে হালাল করেছিলো।” (কিমিয়ায়ে সাআদাত, ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন)
মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিমাস সালাম একদিন ইবলীস শয়তানকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “সেই ব্যক্তি কে, যাকে তুমি সর্বাপেক্ষা বড় শত্রু মনে করো? এবং সে ব্যক্তি কে, যাকে তুমি সর্বাপেক্ষা অধিক মুহব্বত করো?”
উত্তরে ইবলীস শয়তান বললো, “কৃপণ দরবেশকে আমি সর্বাপেক্ষা অধিক মুহব্বত করি। কেননা, সে প্রাণান্তকর পরিশ্রম সহকারে ইবাদত করে কিন্তু কৃপণতা তার ইবাদতকে সমূলে ধ্বংস করে ফেলে। আর পাপাচারী দানশীলকে আমি বিশেষ শত্রু মনে করি। কারণ, সে ব্যক্তি খুব মজা করে পাপ-পঙ্কিলে, মহানন্দে জীবন যাবন করে কিন্তু আমার খুব আশঙ্কা হয়, তার বদান্যতা গুণের কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার প্রতি দয়া বর্ষণ করতে পারেন। ফলে ঐ ব্যক্তি পাপাচারের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে পাকা তওবা করে নিষ্পাপ হয়ে যেতে পারে।”
মানুষ যখন প্রথম স্বর্ণ ও রৌপ্যের মুদ্রা প্রস্তুত আরম্ভ করলো তখন ইবলীস শয়তান নিতান্ত প্রফুল্ল হয়ে কয়েকটি মুদ্রা হাতে তুলে নিলো এবং সেগুলো স্বীয় চোখে স্পর্শ করে চুম্বন করে বলেছিলো, “যে মানব তোমার মোহে পতিত হবে সে সত্যিকার অর্থে আমার গোলাম হয়ে যাবে।” (কিমিয়ায়ে সাআদাত, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)
উল্লেখ্য যে, মানব হৃদয়ের সেই কঠিন ধ্বংসাত্মক রোগ তথা কৃপণতাও হাদিয়া প্রদানের দ্বারা দূরীভূত হয়। মনের নানা প্রকার কুটিলতার নিষ্পত্তি ঘটে। সাথে সাথে কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার দয়ার নজর পতিত হয়। মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক বর্ষিত হয়, ফলে মা’রিফাত ও মুহব্বতের রাস্তা প্রসারিত হয়। আস্তে আস্তে দানশীলতার মত সৎগুণাবলী অর্জিত হয়।
কেননা, একজন সালিক বা মুরীদের জন্য সম্মানিত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি হচ্ছেন সবচেয়ে প্রিয়। যিনি মুরীদের সর্বাধিক কল্যাণকামী। যার ঋণ ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ পরিশোধ করতে পারবে না। সুতরাং কোন ব্যক্তি যত কৃপণই হোক না কেন, তার জন্য স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার কল্যাণে উনাকে হাদীয়া মুবারক প্রদান করা যতটা সহজ, অন্যভাবে তা তত সহজ হয়ে উঠে না।
কাজেই, শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে প্রতিনিয়ত হাদীয়া মুবারক প্রদান করা এবং প্রয়োজন মাফিক অর্থ ব্যয় করার অভ্যাস গড়ে উঠে। ধীরে ধীরে অর্থের মোহ কেটে যায়। ফলে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল কাওনাইন ফখরে মওজুদাত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফাত-মুহব্বত লাভের পথ প্রসারিত হয়।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি সত্তর বছর স্বীয় নফসের সাথে মুজাহাদা করেছি। আমার একদা ধারণা হলো যে, আমার উপর দিয়ে অনেক বালা-মুছিবত, বিপদ-আপদ অতিক্রান্ত হলো কিন্তু বারগাহে ইলাহী উনার কোন দরজা খুললো না। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য মুবারক পেলাম না। যখন এরূপ খেয়াল হলো তখন আমার মালিকানাধীন যে ধন-সম্পদ ছিলো তা মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় ব্যয় করলাম আর তখনই দোস্ত অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার হয়ে গেলেন; এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মালিকানাধীন যা ছিলো সবকিছু আমার মালিকানাধীন হয়ে গেলো।” সুবহানাল্লাহ! (আনিসুল আরওয়াহ্/১৪)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)