স্থাপত্য-নিদর্শন
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৭)
, ১৮ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৩ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৬ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) স্থাপত্য নিদর্শন
ফাতেমীয়দের অধীনে কাঠামোগত পরিবর্তন:
মসজিদের মূল কাঠামো ২৮০ ফুট (৮৫ মি) দীর্ঘ এবং ২২৭ ফুট (৬৯ মি) প্রশস্ত ছিল। উঠোনের পাশে তিনটি আর্কেড উঠোনকে ঘিরে রয়েছে। উঠোনের দক্ষিণ পশ্চিমে নামাযের স্থান রয়েছে। ক্বিবলা দেয়ালের আকার ২৬০ ফুট (৭৯ মি) * ৭৫ ফুট (২৩ মি) যা সঠিক কোণ থেকে কিছুটা সরে আছে। নামাযের স্থানকে ঘিরে রাখা চারটি আর্কেডগুলো মার্বেলের স্তম্ভ দ্বারা ধরে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন পুরুত্বের ভিত্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন উচ্চতার স্তম্ভ গুলো স্থাপন করা হয়েছে। অভ্যন্তরের নকশায় আব্বাসীয় স্থাপত্যের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
১৯৩৩ খৃ: মূল মিহরাব উন্মোচিত হয়। এর উপরে একটি অর্ধবৃত্তাকার গম্বুজ ও দুইপাশে মার্বেলের স্তম্ভ রয়েছে। মিহরাবে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার দুটি আয়াত শরীফ ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছিলো যা এখনো অক্ষত রয়েছে। প্রথমটি হলো পবিত্র সূরা আল মু’মিনুন শরীফ উনার প্রথম তিন আয়াত শরীফ। আর দ্বিতীয় আয়াতগুলো সূরা আল আনআমের ১৬২ ও ১৬৩ নং আয়াত শরীফ।
এই ক্যালিগ্রাফির অংশগুলো একমাত্র অলংকরণ যা নিশ্চিতভাবে ফাতেমীয় যুগের সাথে সম্পর্কিত করা যায়।
উঠোনের দেয়ালের অলঙ্করণ:
১০০৯ থেকে ১০১০ খৃ: এর মধ্যে মার্বেলের মেঝে যুক্ত করা হয়। উঠোনকে ঘিরে থাকা আর্কেড কিল আকৃতির আর্চ যুক্ত ও অলঙ্করণ সমৃদ্ধ। এসকল আর্চ আল-হাফিজের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল। অলঙ্করণগুলোও তার সময়ের এবং ১৮৯১ খৃ: সেগুলো পুনরায় অঙ্কন করা হয়। দুই ধরনের অলঙ্করণ এতে ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়াও কুফিক লিপিতে লিখা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার আয়াত শরীফ উৎকীর্ণ রয়েছে। যা দক্ষিণের আর্কেডে মূল প্রবেশপথ অবস্থিত।
১০০৯ খৃ: আল-হাকিমের শাসনামলে একটি কাঠের দরজা যুক্ত করা হয়েছিল। ১১২৫ খৃ: আল-আমির একটি কাঠের মিহরাব যুক্ত করেন। আল-হাফিজ লিদিনাল্লাহর সময় অতিরিক্ত একটি গম্বুজ নির্মিত হয়। তিনি উঠোনের চারদিকে চতুর্থ একটি আর্কেড ও পশ্চিমের দেয়ালে একটি বহিরাঙ্গণ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মামলুক সংযোজন:
মামলুক সালতানাতের সময় মসজিদ সংস্কার ও বর্ধিত করা হয়। সংস্কার কাজের মধ্যে ছিল মিহরাবের পরিবর্তন ও এতে মার্বেলের সম্মুখভাগ সংযুক্তি করা হয়েছে।
মাদরাসা আল-আকবাগাউয়িয়ার শীর্ষে একটি গম্বুজ ও মিনার রয়েছে। এখানে আমির আকবুগার কবর অবস্থিত। ১৩৩৯ খৃ: এটি নির্মিত হয়। শুরু থেকে এই অংশটি মসজিদের সাথে যুক্ত রয়েছে। এর প্রবেশপথ, ক্বিবলা দেয়াল ও মিহরাবের কাচ মোজাইক সবই পুরনো এবং গম্বুজটি উসমানীয় যুগে নির্মিত।
মাদরাসা গাওহারিয়া ১৪৪০ খৃ: নির্মিত হয়েছে। এখানে সুলতানের কোষাগার রক্ষক গওহর আল-কানাকবাইয়ের কবর রয়েছে। মাদরাসার মেঝে মার্বেল নির্মিত। দেয়াল আবলুশ কাঠ, হাতির দাঁতে সজ্জিত। কবরের ঘরটি ক্ষুদ্র আরাবেস্ক গম্বুজ দিয়ে আচ্ছাদিত।
মাদরাসা আল-তাইবারসিয়া:
মাদরাসা আল-তাইবারসিয়া ১৩০৯ খৃ: নির্মিত হয়। এখানে আমির তাইবার্সের কবর অবস্থিত। আল-আজহারের সম্পূরক মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এটি নির্মিত হয়েছিল বিধায় শুরু থেকে এটি মসজিদের সাথে যুক্ত। এই মাদরাসায় মালেকী ও শাফেয়ী মাযহাব বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হত। বর্তমানে এখানে গ্রন্থাগারের পা-ুলিপি রক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। পুরনো কাঠামোর মধ্যে শুধু ক্বিবলার দিকের দেয়াল ও মিহরাব টিকে রয়েছে। আল-মাকরিজি লিখেছেন যে এই মাদরাসায় শুধু শাফেয়ী মাযহাবের উপর শিক্ষা দেয়া হত। অন্যদিকে ইবনে দাকমাক লিখেছেন যে একটি লিওয়ানে শাফেয়ী এবং অন্য একটি লিওয়ানে মালেকী মাযহাবের উপর শিক্ষা দেয়া হত।
আবদুর রহমান কাতখুদা মাদরাসাটি সম্পূর্ণরূপে পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। এসময় শুধু দক্ষিণপূর্বের দেয়াল ও মিহরাব রেখে দেয়া হয়। কে. এ. সি. ক্রেসওয়েল এই মিহরাবকে কায়রোর সুন্দরতম মিহরাবের অন্যতম হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মিহরাবের দেয়াল ১.১৩ মিটার (৩.৭ ফুট) প্রশস্ত এবং ৭৬ সেন্টিমিটার (৩০ ইঞ্চি) গভীর। দেয়ালের প্রত্যেক পাশে একটি করে ২.৭৮ মিটার (৯.১ ফুট) উচু স্তম্ভ আছে। স্তম্ভের উপরে রঙ্গিন জ্যামিতিক নকশার ব্লক রয়েছে। মিহরাবের উপরের অর্ধবৃত্ত বাইরের আর্চের ভেতর অবস্থিত। এই আর্চের বাইরে আয়তক্ষেত্রকার ফ্রেম রয়েছে। এই ধরনের ফ্রেমযুক্ত মিহরাব মিশরে এটি প্রথম।
সম্পাদনায়: মুহম্মদ নাঈম
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হাজীগঞ্জ দুর্গ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৬)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সুনামগঞ্জে কালের সাক্ষী শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী পাগলা বড় মসজিদ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
৫০০ বছরের ঐতিহাসিক নিদর্শন বাঘা শাহী মসজিদ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৫)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৩)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০২)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০১)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৪০০ বছরের আলোচিত প্রাচীন স্থাপত্য তেবাড়িয়া জামে মসজিদ
১২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২)
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)