কাশ্মীর মুসলমানদেরই দেশ
, ২৫ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০১ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৪ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ভারত, পাকিস্তান, এমনকি বাংলাদেশেরও অনেকে এখন ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। ভারতের সংবিধান যারা কোনো দিন হাতে নিয়ে দেখেনি, তারা পর্যন্ত এখন এই আর্টিক্যাল ৩৭০ সম্পর্কে কিছু না কিছু জানে। এই অনুচ্ছেদটি সম্পর্কে মানুষ আসলে ঠিক তখনই আগ্রহী হয়ে উঠলো, যখন এটিকে বাতিল করা হলো। যতদিন এটা বহাল ছিলো, তখন এ নিয়ে তেমন বেশি কাউকে আগ্রহী হতে দেখা যায়নি।
আসলে ভারতের সংবিধানের এই ধারাটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের ভাগ্য। ভারতের সর্ব উত্তরের এই রাজ্যটি কিভাবে চলবে, কিভাবে শাসিত হবে, ভারতের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের সঙ্গে এই রাজ্য প্রশাসনের সম্পর্ক কেমন হবে- সেসবই বলা ছিলো এই ৩৭০ অনুচ্ছেদে। কেবল এই একটি অনুচ্ছেদই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলো আরো একটি ধারা ৩৫-এ। এ দুটি ধারা জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের অন্য সকল রাজ্য থেকে অনেকটাই আলাদা মর্যাদা দিয়েছিলো। সেই আলাদা মর্যাদার কারণে ভারতের অংশ হওয়া সত্ত্বেও জম্মু ও কাশ্মীরের আলাদা জাতীয় পতাকা ছিলো, আলাদা একটি সংবিধান ছিলো। এমনকি তাদের যে আইনসভা, তার চরিত্রও ছিলো অন্য রাজ্যগুলোর চেয়ে ভিন্ন। অন্য রাজ্য এবং এমনকি কেন্দ্রে আইনসভার মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও জম্মু কাশ্মীরে আইনসভার মেয়াদ ছিলো ছয় বছর।
বেশ কিছুদিন আগে সেই অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের আগের সেই বিশেষ মর্যাদাটি বাতিল করা হয়। এর মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরকে যে অন্য সব রাজ্যের সমান মর্যাদায় নামিয়ে আনা হয়, বরং তাদের চেয়েও নিচে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমত এটিকে ইউনিয়ন টেরিটরিতে পরিণত করা হয় এবং এটি ভেঙ্গে দুই টুকরো করা হয়। একটি জম্মু ও কাশ্মীর, অপরটি লাদাখ। দুটোই ইউনিয়ন টেরিটরি। এর অর্থ দাঁড়ায়- অন্য রাজ্যগুলোর চেয়েও এদের ক্ষমতা অনেক কমে যাবে। যেমন রাজ্যের পুলিশের ওপরও এই রাজ্য সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এটিকে বলা যায় কাশ্মীরের জন্য একেবারে ডাবল ডিমোশন।
এখানে একটা প্রশ্ন অবধারিতভাবে এসেই যায়, এতদিন কাশ্মীরকে একটা বিশেষ মর্যাদা দেয়া হতো কেনো? কেন ভারতের অংশ হওয়া সত্ত্বেও তাদের একটা আলাদা পতাকা এবং আলাদা সংবিধান ছিলো? কারণ, ১৩৩৯ খ্রীস্টাব্দে শাহ মীর রহমতুল্লাহি আলাইহি কাশ্মীরে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে একাধারে পাঁচ’শ বছর মুসলমানরা কাশ্মীর শাসন করেন। এর মধ্যে মুঘল শাসকরা ১৫৮৬ সাল থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর শাসন করেন। ইংরেজরা এ উপমহাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় ভাগ করে দিয়ে যায়। এ ভাগ হয় হিন্দুদের জন্যে একটি দেশ এবং মুসলমানদের জন্যে একটি দেশ। সে সময় উপমহাদেশে বেশ কিছু রাজ্য ছিলো। সে রাজ্যগুলোর জন্যে ভারত বা পাকিস্তানের সাথে একিভূত হওয়ার কোন বাধ্যবাধকতা ছিলো না। এমনকি তারা চাইলে স্বাধীনভাবে থাকতে চাইতে পারতো। এরকম আড়াই শতেরও বেশি রাজ্যের মধ্যে মাত্র তিনটি রাজ্য তখন স্বাধীনভাবে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে, যার মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর একটি। অপর দুটি ছিলো হায়দ্রাবাদ ও জুনাগড়। নানা কারণে জুনাগড় দ্রুতই ভারতের সাথে মিলে যায়। হায়দ্রাবাদ ছিলো খুবই সম্পদশালী একটি রাজ্য। এ রাজ্যের শাসক ছিলেন মুসলমান। শাসককে নিজাম বলা হতো। নিজাম চাচ্ছিলেন পাকিস্তানের সাথে মিলে যেতে। কিন্তু মুশরিকরা চাচ্ছিলো ভারতের মধ্যে নিতে। তখন ভারত বল প্রয়োগের মাধ্যমেই হায়দ্রাবাদকে ভারতের মধ্যে নিয়ে নেয়। বাকি রইলো জম্মু ও কাশ্মীর। জম্মু ও কাশ্মীরের অধিকাংশ জনগণ ছিলেন মুসলমান। জম্মু ও কাশ্মীরের মুসলমানরা স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলো। পাকিস্তান বা ভারত কারো সাথেই মিশে যেতে চাননি। তখন পাকিস্তান বিপুল সংখ্যক মানুষ ও সেনাবাহিনীকে কাশ্মীরে ঢুকিয়ে দেয়। জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন শাসক ছিলো মুশরিক। নাম হরি সিং। মুশরিক হরি সিং চাচ্ছিলো ভারতের সাথে মিশতে। যে কারণে মুশরিক হরি সিং ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর ভারতের সাথে ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অব একসেশন’ নামে চুক্তি করে। আর মুশরিক হরি সিং কে সমর্থন করে উলামায়ে সূ’ শেখ আব্দুল্লাহ।
এ সময়ই জম্মু ও কাশ্মীরের দখল নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম যুদ্ধটি হয়। ইহুদীসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বলে- জম্মু ও কাশ্মীর কারো সাথে মিশে যাবে নাকি আলাদা স্বাধীন থাকবে সেটা সিদ্ধান্ত নিবে সেখানকার জনগণ। গণভোটের মাধ্যমে সেটা নির্ধারিত হবে। গণভোট আর হয়নি। ফলে মূল রাজ্যের ৪৫ শতাংশ এলাকা ভারতের দখলে থেকে যায়, যা এখনো জম্মু ও কাশ্মীর নামে ভারতের দখলে আছে। এখানে রয়েছে জম্মু, কাশ্মীর উপত্যকা, লাদাখ ও সিয়াচেন গ্লেসিয়ার। আর যে ৩৫ শতাংশ তখন পাকিস্তানের দখলে ছিলো সেটা এখন আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট-বালতিস্তান দুটি আলাদা রাজ্য নামে পরিচিত। বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে ছিলো আকসাই চীন, যা এখন চীনের দখলে। এভাবেই কাশ্মীর হয়ে গেলো ৩ ভাগ। কাশ্মীরের এই দখল নিয়ে ভারত, পাকিস্তান আর চীনের মধ্যে মাঝে-মধ্যেই তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করে, দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। বরফে ঢাকা তাদের এ সীমান্ত প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
আসলে কাশ্মীরকে নিজের কাছে রাখতেই ভারত শুরু থেকেই এ রাজ্যটিকে বিশেষ কিছু সুবিধা দিয়ে এসেছে। বিষয়গুলো, ১৯৫০ সালে ভারতের সংবিধান যখন চালু হয়, তখন থেকেই সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে রাখা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারার কারণে কাশ্মীরের জনগণ কিছু বিশেষ সুবিধা পেতো। যেমন, বাইরে থেকে কেউ গিয়ে কাশ্মীরে জমিজমা কিনতে পারতো না। ৩৭০ অনুচ্ছেদ ও ৩৫এ ধারা বাতিলের ক্ষেত্রে বিজেপি সরকার যে খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করিয়েছে তা হচ্ছে, কাশ্মীরের উন্নয়ন। বিজেপি সরকারের এ যুক্তির সাথে বাস্তবতার কতটুকু সম্পর্ক রয়েছে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষঙ্গ মহলের অভিমত, কাশ্মীর তো কেবল একটি নির্জন ভূখন্ড নয়, সেখানে মানুষ আছে, মানুষের ধর্ম আছে, মানুষের মন আছে, তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা আছে। কাশ্মীরের মানুষকে বাদ দিয়ে তো আর কাশ্মীরের উন্নয়ন করা যাবে না। উন্নয়ন করতে হলে সেই মানুষদের সঙ্গে নিয়েই করতে হবে। লোকসভায় যেদিন কাশ্মীর সংক্রান্ত এতসব সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, সেদিন কাশ্মীরের জনগণ ঘর থেকে বের হতে পারেনি। কেবল তাই নয়, টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে, ইন্টারনেট-সংবাদপত্র বন্ধ করে, পুরো দুনিয়া থেকেই কাশ্মীরকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। ফলে তারা জানতেই পারেনি সেদিন লোকসভায় তাদেরকে নিয়ে কি বিশাল চক্রান্ত করা হয়েছে। এমন মুসলিম নির্যাতন নজিরবিহীন।
-মুহম্মদ আবু ইয়াকুব ইসহাক রাসেল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)