কাবা শরীফের চাবি যার কাছে থাকে
, ০২ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১১ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ০৯ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ২৫ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পাঁচ মিশালী
কাবা শরীফের দরজার চাবি তার কাছেই থাকত। বিশ্বাস করা হয়, ১৪০০ বছর আগেই এই চাবি পেয়েছিল তার পরিবার। ওই সময় থেকে তাদের কাছে রয়েছে কাবা শরীফের দরজার চাবি।
বহু শতাব্দী ধরে তার পরিবার এই চাবি রক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছে। ড. সালেহ বিন জয়নুল আবেদিন আল শেবি ছিলো আল-শেবি পরিবারের ১০৯তম উত্তরাধিকারী।
চাচা আব্দুল কাদির তাহা আল-শেবির মৃত্যুর পর ওই চাবি হস্তান্তর করা হয়েছিল ড. সালেহ বিন জয়নুল আবেদিন আল শেবির কাছে।
উম্ম আল-কোরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী ড. সালেহ ১৯৪৭ সালে মক্কা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বহু বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। এছাড়াও ইসলাম সম্পর্কিত বহু গবেষণা প্রবন্ধ ও গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।
কাবা শরীফের চাবির দায়িত্ব :
কাবা শরীফে প্রবেশ করার জন্য একটি মাত্র দরজা রয়েছে, যাকে বা’বে কাবা বলা হয়। মেঝে থেকে ২.১৩ মিটার উচ্চতায় থাকা এই দরজা কাবার উত্তর-পূর্ব দেয়ালের কাছে এবং কালো পাথরের খুব কাছাকাছি অবস্থিত যেখান থেকে তাওয়াফ শুরু হয়।
উমরাহ করার সময় হজ্জ পালনকারীরা এই কালো পাথরে চুম্বন করেন এবং তারপরে কাবা শরীফ প্রদক্ষিণ করেন, যাকে তাওয়াফ বলা হয়।
কাবা শরীফের চাবির রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে ইসলামী ইতিহাসবিদ আহমেদ আদন বলেন, ইসলাম পূর্ব যুগে কুরাইশ গোত্রের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে কাবা শরীফের চাবির দায়িত্ব দেয়া হয় হযরত উছমান বিন তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে।
দ্বীন ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী, মক্কা শরীফ বিজয়ের পর চাবিটি কিছু সময়ের জন্য হযরত উছমান বিন তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে আবার উনার কাছেই চাবিটি ফিরিয়ে দেয়া হয়।
ইতিহাসবিদরা বলেছেন, ওই চাবি উছমান বিন তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই। সে সময় থেকেই হযরত উছমান বিন তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরিবারে রয়েছে কাবা শরীফের চাবি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই চাবিকে সুরক্ষিত রেখেছেন উনার বংশধর।
উল্লেখ করা হয়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওই চাবি হযরত উছমান বিন তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দিয়ে বলেছিলেন যে ‘এই চাবি সর্বদা আপনার কাছে থাকবে এবং অন্যায়কারী ছাড়া কেউ আপনার কাছ থেকে এই চাবি নিতে পারবে না।’
বিদ্যমান দরজা :
১৯৪২ সালের আগে কাবা শরীফের দরজা কে তৈরি করেছিলেন এবং কিভাবে তা নির্মাণ করা হয়েছিল সে বিষয়ে ইতিহাসে খুব একটা উল্লেখ পাওয়া যায় না।
তবে ১৯৪২ সালে ইব্রাহিম বদর একটি রূপার দরজা তৈরি করেন। এরপর ১৯৭৯ সালে ইব্রাহিম বদরের ছেলে আহমেদ বিন ইব্রাহিম বদর একটি সোনার দরজা নির্মাণ করেন। ৩০০ কেজি সোনা দিয়ে তৈরি এই দরজা।
কাবা শরীফের সাবেক পৃষ্ঠপোষক শেখ আবদুল কাদিরের শাসনকালে শাহ আবদুল্লাহর নির্দেশে কাবা শরীফের তালা বদলানো হয়।
শাহ আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে তৎকালীন প্রিন্স খালিদ আল-ফয়সাল কাবা শরীফ পরিষ্কার করার সময় নতুন তালা ও চাবি শেখ আবদুল কাদিরের হাতে তুলে দেন।
দীর্ঘ অসুস্থতার পর শেখ আবদুল কাদিরের মৃত্যু হয়। এরপর ড. সালেহ বিন জয়নুল আবেদিন আল-শেবি এই চাবি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন।
ইতিহাস বলছে, এর আগেও অনেক শাসক বহুবার কাবা শরীফের তালা ও চাবি বদলিয়েছেন। ঐতিহ্যগতভাবে, কাবা শরীফের চাবি যে ব্যাগে রাখা হয় তার গায়ে কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের নকশা করা আছে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তালা খোলা ও বন্ধ করার মধ্যেই চাবি রক্ষকের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
তবে সৌদি আরবে আসা রাজ অতিথিদের জন্য সৌদি বাদশাহের কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত সৈন্যবাহিনী চাবি ব্যবহার করে এই তালা খুলতে পারে।
এছাড়া মুহররম মাসের প্রতি ১৫ তারিখে বাদশাহর আদেশে চাবির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি এই দরজা খুলে দেন যেন কাবা শরীফের ভেতরটা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়।
কাবা শরীফের তালা ও চাবি :
কাবা শরীফের বর্তমান তালা ও এর চাবি ১৮ ক্যারেট সোনা ও নিকেল দিয়ে তৈরি। যদিও কাবা শরীফের ভেতরের দালানের রং সবুজ। তালা এবং চাবিতে কুরআন শরীফের আয়াত শরীফও লেখা আছে।
তুরস্কে জাদুঘরে ৪৮টি চাবি রয়েছে, যা উছমানীয় সাম্রাজ্যের তৎকালীন শাসকরা কাবা শরীফের দরজা খোলার জন্য ব্যবহার করতো। সৌদি আরবে এই চাবির যে অনুলিপি রয়েছে তা খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি।
চাবির নিলাম :
দ্বাদশ শতাব্দীর কাবা শরীফের একটি চাবি ২০০৮ সালে নিলামে এক কোটি ৮১ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। লন্ডনে ইসলামী বিশ্বের নিদর্শনগুলোর নিলামের সময় এক অজ্ঞাত ক্রেতা সেই চাবি কেনেন।
নিলামে ওঠা কাবা শরীফের চাবি লোহার তৈরি। এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৫ ইঞ্চি। চাবিতে লেখা আছে, ‘এটি আল্লাহ পাক উনার ঘরের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত।’
লন্ডনে নিলামে ওঠা চাবিই একমাত্র চাবি যা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এছাড়া কাবা শরীফের ৫৮টি চাবি বিভিন্ন জাদুঘরে রাখা আছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
শীতে যে কারণে বাড়ে ফ্যাটি লিভার, সুস্থ থাকার উপায়
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দশ টাকার পুরাতন নোটের আতিয়া মসজিদ
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
গুড় খাঁটি কিনা যেভাবে যাচাই করবেন
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ধনে পাতা শুধু স্বাদ বাড়ায় না, আছে যেসব পুষ্টিগুণ
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
অবহেলিত পানিফলের যত উপকারিতা
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৯ মস্তিষ্কের অধিকারী অক্টোপাসের জ্ঞানের রহস্য উন্মোচনে বিজ্ঞানীরা
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাতমসজিদ রোডের ঈদগাহ এক অনন্য মোগল পুরাকীর্তি
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
চাঁদের মাটিতে গাছ
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১৭ দিন ধরে মৃত বাচ্চাকে বহন করা সেই ‘তিমি’র বাচ্চা হয়েছে আবার
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণের মহাঔষধ মেথি শাক!
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সূর্যের দিকে সবচেয়ে কাছের যাত্রায় মহাকাশযান
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
১৮০০ বছর পর তুরস্কের প্রাচীন কেস্ট্রোস ফোয়ারা চালু
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)