কদমবুছী করা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক; ইহানত করা কাট্টা কুফরী (১)
, ১৮ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৪ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ২২ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ০৬ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
কদম শব্দের অর্থ হলো ‘পা’। আর ‘বুছী’ শব্দটি ফার্সী যার অর্থ হলো চুম্বন করা। সুতরাং কদমবুছীর অর্থ, পা চুম্বন বা পদ চুম্বন করা। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুদ দারাজাত মুবারকে (মহাসম্মানিত ক্বদম মুবারকে) বুছা (চুম্বন) মুবারক দিতেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা একজন অপরজনের কদমবুছী করেছেন। তবে অবশ্যই উক্ত কদমবুছী তা’যীম, মুহব্বত ও বরকত হাছিলের লক্ষ্যেই করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দৃষ্টিতে ফক্বীহগণ ফতওয়া দেন যে, পীর-বুযুর্গ, পরহেযগার আলিম, ওস্তাদ, মুরুব্বী, পিতা-মাতা ও সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্মানের অধিকারী, এরূপ ব্যক্তিদের কদমবুছী করা সম্মানিত সুন্নত মুবারক, সুন্নতে ছাহাবা ও তাবেয়ীন উনাদেরও সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। কদমবুছীর ন্যায় উপরোক্ত ব্যক্তি উনাদের দস্তবুছী অর্থাৎ হাত চুম্বন করাও সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত।
এছাড়াও “দুররুল মুখতার” ও “রদ্দুল মুহতার” কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, বুছা (চুম্বন) ১২ প্রকার। যথা-
(১) কুফরী বুছা, যেমন যমীনকে তা’যীমের জন্য (আযীম অর্থাৎ বড় জেনে) বুছা (চুম্বন) দেয়া। (২) হারাম বুছা, যেমন যমীনকে তাহিয়্যাতের (মুবারকবাদীর) জন্য বুছা (চুম্বন) দেয়া। (৩) মাকরূহ্ বুছা, যেমন আলিম এবং আদেল ভিন্ন অন্যকে বুছা দেয়া। (৪) বিদয়াতে মুবাহ্ বুছা, যেমন ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, রুটিতে বুছা দেয়া। কেউ কেউ ওটাকে হাসান (উৎকৃষ্ট) বলেছেন। (৫) বিদয়াতে হাসানা বুছা, যেমন পবিত্র কুরআন শরীফকে বুছা দেয়া। সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বুছা মুবারক দিয়ে সম্মানিত মুখ মুবারকে স্পর্শ করতেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি প্রতিদিন প্রত্যুষে পবিত্র কুরআন শরীফ হাতে নিয়ে বুছা মুবারক দিতেন এবং বলতেন, “এটা আমার পালনকর্তার হুকুমনামা।” (৬) দিয়ানাতের বুছা (দ্বীনদারীর বুছা), যেমন হজরে আসওয়াদকে বুছা দেয়া, পবিত্র কা’বা শরীফ উনার চৌকাঠে বুছা দেয়া। (৭) শাহ্ওয়াতের (কাম ভাবের) বুছা, যেমন স্বীয় আহলিয়াকে বুছা দেয়া। (৮) মোওয়াদ্দাতের বুছা, যেমন সন্তানের গালে বুছা দেয়া। (৯) রহমতের বুছা, যেমন মাতা-পিতার মস্তকে বুছা দেয়া (১০) শাফায়াতের বুছা, যেমন ভাইয়ের কপালে বুছা দেয়া। (১১) তাহিয়্যাতের বুছা, যেমন মু’মিনের হাতে বুছা দেয়া। (১২) সুন্নত বুছা, যেমন আলিম এবং আদেলের হাত বুছা দেয়া।
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারকঃ
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ الْوَازِعِ بْنِ زَارِعٍ عَنْ جَدِّهَا زَارِعٍ وَكَانَ فِى وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ قَالَ فَجَعَلْنَا نَتَبَادَرُ مِنْ رَوَاحِلِنَا فَنُقَبِّلُ يَدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلَهٗ.
অর্থঃ- হযরত ওয়াযে’ ইবনে যারে’ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা আব্দুল কায়স গোত্রে থাকা অবস্থায় যখন পবিত্র মদীনা শরীফ আসতাম, তখন আমরা সাওয়ারী হতে তাড়াতাড়ী অবতরন করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মাগফিরাত মুবারকে (মহাসম্মানিত হাত মুবারকে) ও নূরুদ দারাজাত মুবারকে (মহাসম্মানিত পা মুবারকে) বুছা (চুম্বন) দিতাম। (আবূ দাউদ শরীফ, জিঃ ২, পৃঃ ৭০৯; বযলুল মাজহুদ, জিঃ ৬, পৃঃ ৩২৮; ফতহুল বারী, জিঃ ১১, পৃঃ ৫৭; মিশকাত শরীফ, মিরকাত জিঃ ৭, পৃঃ ৮০; আশয়াতুল লুমাত, মুযাহিরে হক্ব, ইলাউস সুনান জিঃ ১৭, পৃঃ ৪২৬)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ بُرَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ فَائْذَنْ لِىْ اُقَبِّلُ يَدَيْكَ وَرِجْلَيْكَ فَاَذِنَ لَهٗ اَىْ فِىْ تَقْبِيْلِ يَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ فَقَبَّلَهُمَا.
অর্থঃ- হযরত বুরাইদাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন (গাছের সিজদা দেয়ার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর) আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে আপনার উভয় নূরুল মাগফিরাত মুবারক (মহাসম্মানিত হাত মুবারক) ও নূরুদ দারাজাত মুবারকে (মহাসম্মানিত পা মুবারকে) বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি দিন। তখন উনাকে উভয় উভয় নূরুল মাগফিরাত মুবারক (মহাসম্মানিত হাত মুবারক) ও নূরুদ দারাজাত মুবারকে (মহাসম্মানিত পা মুবারকে) বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি দেয়া হলে- তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উভয় নূরুল মাগফিরাত মুবারক (মহাসম্মানিত হাত মুবারক) ও নূরুদ দারাজাত মুবারকে (মহাসম্মানিত পা মুবারকে) বুছা (চুম্বন) দিলেন। (নাসীমুর রিয়াজ শরহে কাজ্বী আয়াজ জিঃ ৩ পৃঃ ৫০, কিতাবুল আযকার লিন্ নববী)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ كَانَتْ اِذَا دَخَلَتْ عَلَيْهِ قَامَ اِلَيْهَا فَاَخَذَ يَدَهَا فَقَبَّلَهَا- وَاَجْلَسَهَا فِىْ مَجْلِسِهٖ وَكَانَ اِذَا دَخَلَ عَلَيْهَا قَامَتْ اِلَيْهِ فَاَخَذَتْ بِيَدِهٖ فَقَبَّلَتْهُ وَاَجْلَسَتْهُ فِىْ مَجْلِسِهَا-
অর্থঃ- সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি‘য়া যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যেতেন, তখন তিনি উনাকে দাঁড়িয়ে হাতে বুছা মুবারক দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি‘য়া যাহরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট যেতেন, তখন তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত হাত মুবারকে বুছা (চুম্বন) দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন। (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ জিঃ ৯ পৃঃ ৮০, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহেরে হক্ব, ইলাউস সুনান জিঃ ১৭ পৃঃ ৪৩৬)
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
চিকিৎসা গ্রহণ করা খাছ সুন্নত মুবারক (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘নাবীয’
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হিজামা বা শিঙ্গা লাগানো খাছ সুন্নত মুবারক (৩)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাদ্য ‘মাশরুম’
০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হিজামা বা শিঙ্গা লাগানো খাছ সুন্নত মুবারক (২)
০১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন- “সুন্নতী চামড়ার মোজা”
০১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হিজামা বা শিঙ্গা লাগানো খাছ সুন্নত মুবারক (২)
৩০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী চামড়ার মশক
৩০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (৮)
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করার ‘সুন্নতী মিসওয়াক’
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী খাদ্য ও পানীয় ‘দুধ’
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)