ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন (১০)
[পবিত্র হাদীছ শরীফ জাল বানানো নিয়ে ওহাবী, সালাফী, দেওবন্দীদের হাক্বীকত ফাঁস]
, ২৯ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ১৫ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কোন মুহাদ্দিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি কোন হাদীছ শরীফ উনার ব্যাপারে “ছহীহ নয়” শব্দটি ব্যবহার করলেই তা জাল হয় না
বর্তমানে ওহাবী-সালাফীরা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য কিছু ইমাম মুহাদ্দিছ উনাদের বক্তব্য لا يصح (ছহীহ নয়) এমন বক্তব্য দিয়ে হাদীছ শরীফ জাল বলার অপচেষ্টা করে। কিন্তু ছহীহ নয় দ্বারাই কি জাল হয়ে যায়? ছহীহ’র পরের স্তর হাসান, তারপরের স্তর দ্বয়ীফ, তারপরে গিয়ে হচ্ছে মওদ্বু বা জাল। ছহীহ নয় বললে হাসান হওয়াতে নিষেধ কোথায়?
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
قول السخاوي لا يصح لا ينافي الضعف والـحسن
অর্থ : “ইমাম হযরত সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ‘ছহীহ নয়’ দ্বারা পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হাসান ও দ্বয়ীফ হওয়া নিষেধ করে না। ” (আসরারুল মারফুয়া ১/৩৪৯)
হাফিযে হাদীছ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
لا يلزم من نفي الثبوت ثبوت الضعف لاحتمال ان يراد بالثبوت الصحة فلا ينتفي الـحسن
অর্থ : “পবিত্র হাদীছ শরীফ সাবিত নয় বা দৃঢ় নয় দ্বারা দ্বয়ীফ হওয়া আবশ্যক নয়। হাদীছ শরীফখানা সাবিত নয় দ্বারা ছহীহ নয় বুঝানো হয়েছে। তাই বলে হাসান হওয়াকে নিষেধ করা হয়নি। ” (তুহফাতুল আবরার ১/৪)
এছাড়া হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘তা’কিবাত আলাল মওদ্বুয়াত’ কিতাবে, হযরত তাহের ফাত্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত ‘তাযকিরাতুল মাওদ্বুয়াত’ কিতাবে, আব্দুল হাই লখনবী রচিত ‘আসরারুল মারফুয়া’ কিতাবে, আল্লামা আযলুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত ‘কাশফুল খফা’ সহ অসংখ্য কিতাবে ছহীহ নয় দ্বারা হাসান হাদীছ শরীফ বুঝানো হয়েছে কখনোই জাল বলা হয়নি।
তাই যারা বিভিন্ন কিতাব থেকে ‘ছহীহ নয়’ উদ্বৃতি দিয়ে হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলার অপচেষ্ট করে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে হাদীছ শরীফ অস্বীকার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
১১
দ্বয়ীফ সনদে বর্ণিত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে
উছুলে হাদীছ শরীফ উনার হুকুম
বিশ্ববিখ্যাত ফক্বীহ্ ইমাম হযরত ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন, দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয় এবং দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ ফযীলত অর্জন করার জন্য আমল করাও জায়িয।
এ সম্পর্কে হযরত ইমাম হযরত ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহিহ আলাইহি তিনি বলেন,
الضعيف غير الـموضوع يعمل به فى فضائل الاعمال.
অর্থ : “দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ যা মওদ্বু নয়, তা ফযীলত অর্জনের জন্য আমল করা জায়িয। ” (ফতহুল ক্বাদীর ১/৩৪৯)
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও ফক্বীহ্ হযরত ইমাম হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
الضعيف يعمل به فى فضائل الا عمال اتفاقا.
অর্থ : “সকলেই একমত যে, দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ ফযীলত হাছিল করার জন্য আমল করা জায়িয আছে। ” (আল মওদ্বুয়াতুল কাবীর পৃষ্ঠা ১০৮)
শুধু তাই নয়, দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ যদি বিভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ণনা করা হয়, তাহলে তা হাসান লি গায়রিহির দরজায় পৌঁছে যায় এবং এটা তখন আহ্কাম ও আক্বাইদের দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন,
ويعمل با لضعيف ايضافى الاحكام اذا كان فيه احتياط.
অর্থ : “দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ আহকামের জন্য গ্রহণযোগ্য, যখন তাতে সাবধানতা অবলম্বন করা হবে অর্থাৎ যখন হাসান লি গায়রিহি হবে। ” (তাদরীবুর রাবী ২৯৯ পৃষ্ঠা)
এমনকি যেক্ষেত্রে দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ পাওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই ক্বিয়াস হালাল নয়। আর তাই ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিম উনারা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত রায়ের উপর দ্বয়ীফ হাদীছ শরীকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমন হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
قال ابو خيفة الـخبر الضعيف عن رسول الله صلى الله عليه وسلم اولى من القياس، ولا يـحل القياس مع موجوده.
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ, যদিও তা রাবীদের কারণে দ্বয়ীফ হয়, তা ক্বিয়াস হতে উত্তম। যেক্ষেত্রে দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ পাওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই ক্বিয়াস হালাল নয়। ” (মুকাদ্দিমায়ে ইলাউস সুনান, পৃষ্ঠা ৫৯)
ইমাম হযরত সাখাভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وكذا اِذا تلقت الامه الضعيف بالقبول يعمل به على الصحيح حتى انه ينزل منزله الـمتواتر في انه ينسخ الـمقطوع به
অর্থ : “অনুরূপ, উম্মত যখন কোন হাদীছ শরীফকে কবুল করে নেয় তখন, ছহীহ কথা হলো, সেই দ্বয়ীফ হাদীছ অনুযায়ী আমল করা যায়। এমনকি হাদীছ শরীফখানা মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং তা দ্বারা অকাট্য বিষয়ও রহিত হয়ে যায়। ” (ফাতহুল মুগিছ ১/২৮৮)
এছাড়া ফতওয়ায়ে শামী, মিযানুল আখবার, উমদাতুল ক্বারী, মিরকাত শরীফ সহ অনেক কিতাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ একাধিক সনদে বর্ণিত হলে তা “হাসান” স্তরে উন্নিত হয়। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وتعدد الطرق ولو ضعفت يرقي الـحديث إلى الـحسن
অর্থ : “একাধিক সনদে যদি দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয় তাহলে পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হাসান হাদীছ শরীফ হিসাবে সাব্যস্ত হবে। ” (আসরারুল মারফুয়া ১/৪৮১)
এ ব্যাপারে পৃথিবীর সব মুহাদ্দিছ ও হাদীছ শরীফ বিশারদ উনারা একমত এবং এ বিষয়টি স্ব স্ব কিতাবে দলীলসহ আলোচনাও করেছেন। সুতরাং দ্বয়ীফ সনদ দেখিয়েই মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পর্দা পালন করা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই শান্তি ও পবিত্রতা হাছিলের কারণ
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (৩২)
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুসলমানদেরকে ঈমান থেকে সরিয়ে দিতে কাফিরগুলো সবসময় চেষ্টা করে যাচ্ছে
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫৬)
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু ইহুদী ও মূর্তিপূজারী মুশরিকরা
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
১০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি কিরুপ আক্বীদাহ পোষণ করতে হবে
১০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (৩১)
১০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শান মুবারক বিরোধী লেখালেখি-ব্যঙ্গচিত্র বিচ্ছিন্ন অপকর্ম নয়, বরং তা পাশ্চাত্যের মূলধারার সাহিত্য-চিত্রকলারই অংশ
১০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)