ঘটনা থেকে শিক্ষা
ওলীআল্লাহ উনাদের সম্পর্কে বদ আক্বীদা পোষণ এবং উনাদের বিরুদ্ধাচরণের কারণে কঠিন পরিণতি
, ১১ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৬ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৯ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যেমন: হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একজন সূক্ষ্মদর্শী মাহবূব ওলীআল্লাহ ছিলেন। উনার ছিলেন অসংখ্য মুরীদ-মু’তাক্বিদ-খলীফা। উনার একজন বিশিষ্ট খলীফা ছিলো। সকলে তাকে ভালোই জানতো। কেউ কেউ তাকে সমঝদার ও সূক্ষ্মদর্শীও মনে করতো। ওই ব্যক্তি একবার অসুস্থ হলো। এক পর্যায়ে সে মুমূর্ষ অবস্থায় উপনীত হলো। পবিত্র খানকা শরীফ উনার অদূরে বসবাসরত ওই অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে এবং তাকে তা’লীম, তালক্বীন দিতে হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি সেখানে গেলেন।
মুমূর্ষ মুরীদকে দেখে হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকে তওবা-ইস্তিগফার করতে এবং পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করতে মুবারক নির্দেশনা দান করেন। ওই মুরীদ বলে, “আমার তওবা ইস্তিগফার করার দরকার নেই। কালিমা শরীফ পাঠ করারও কোনো প্রয়োজন নেই।” হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকে তার অন্তিম মুহূর্তে বার বার ইস্তিগফার করতে এবং কালিমা শরীফ পাঠ করতে বলেন। কিন্তু সে দৃঢ়ভাবে অনীহা প্রকাশ করে। নাউযুবিল্লাহ!
হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একান্ত দুঃখিত মনে সেখান থেকে আপন হুজরা শরীফে ফিরে আসেন। অবশেষে ওই মুরীদের কথা বলার শক্তি রহিত হয়ে যায়। এমন অবস্থায় ঈমানহারা হয়ে তার মৃত্যু হয়। নাউযুবিল্লাহ!
একজন মুরীদ, শায়েখ উনার রূহানী সন্তান। শায়েখ তিনি তা’লীম-তরবিয়ত, ইলিম, সম্মানিত সুন্নত পালনের উপযোগী মানসিকতা, সূক্ষ্ম সমঝ, ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ, ইখলাছ হাদিয়া দানে উনার মুরীদগণকে কামিয়াবীর শীর্ষ সোপানে উপনীত করে থাকেন। জাহির ও বাতিনের হাক্বীক্বী পরিশুদ্ধিতে মুরীদের কামিয়াবীতেই শায়েখ উনার ইতমিনান। জাহান্নামী মানুষকে জান্নাতী করা, মূলতঃ তায়াল্লুক মাআল্লাহ এবং তায়াল্লুক মাআর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়াতেই শায়েখ উনার পরম প্রশান্তি। কিন্তু দীর্ঘকাল আপন শায়েখ উনার মুবারক ছোহবতে থেকেও বদ আক্বীদার কারণে শায়েখ উনার প্রতি সুধারণার অভাবে কোনো মুরীদের যখন লা’নতগ্রস্ত অবস্থায় বেঈমান হয়ে মৃত্যু হয়, তখন শায়েখ তিনি কষ্ট পান। এ কষ্টের পরিমাণ সীমাহীন।
একজন হক্কানী শায়েখ উনার মূল কাজই হলো মুরীদকে রিযামন্দি-সন্তুষ্টি, তায়াল্লুক-নিসবত, মুহব্বত-মা’রিফাত-সমৃদ্ধ করা। মুরীদের বদ আক্বীদা, বদ আমল ও বদ আখলাক্বের কারণে যখন তা ব্যর্থ হয় তখন শায়েখ উনার কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রেক্ষিত কারণে মৃত্যুর পূর্বে তওবা-ইস্তিগফার করতে এবং পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করতে অস্বীকারকারী মুরীদ নামের সংশ্লিষ্ট লা’নতগ্রস্ত ব্যক্তির কঠিন পরিণতির বিষয়টি ভেবে হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যন্ত্রণাকাতর হন।
দুর্দশাগ্রস্ত মুরীদ কেন্দ্রীক মনঃকষ্টে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়। ইতোমধ্যে হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বপ্নে ওই ব্যক্তিকে দেখেন। তিনি দেখেন, ওই ব্যক্তি দাউ দাউ করে জাহান্নামের আগুনে জ্বলছে। তিনি জানতে চান, “তোমার এই দুর্গতি কেনো? মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্বে তোমার অবস্থাতেই স্পষ্ট হয়েছে যে, তুমি জাহান্নামের স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু তুমি তো দীর্ঘসময় আমার মুবারক ছোহবতে ছিলে। তোমার অবস্থা এমন হলো কেনো?
হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নৈকট্যধন্য সূক্ষ্মদর্শী মাহবূব ওলীআল্লাহ ছিলেন। স্বপ্নে দেখা ওই জাহান্নামী ব্যক্তির আনুপূর্বিক অবস্থা তিনি জানতেন। জানা সত্ত্বেও মানুষের, বিশেষ করে একজন হক্কানী শায়েখ উনার মুরীদদের ইবরত-নছীহত হাছিলের জন্য উনার জানতে চাওয়ার প্রেক্ষিতে জাহান্নামী ব্যক্তি তার দুরবস্থা জানায়।
সে বলে, “হে আমার শায়েখ! পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ইরশাদকৃত সত্য আজ প্রকটভাবে আমার সম্মুখে উদ্ভাসিত হয়েছে। আমি বর্ণনাতীত নিদারুণ আযাব-গযবের মধ্যে নিপতিত হয়েছি। হে শায়েখ আমার! মূলতঃ আমি ছিলাম একজন কাট্টা মুনাফিক্ব। আপনার সম্মুখে আপনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে আমি আপনার ছানা-ছিফত করতাম। কিন্তু মনে মনে আমি আপনার বিরোধিতা করতাম। দূরে গিয়ে আমি আপনার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করতাম। আমার আক্বীদাতো খারাপ ছিলোই, আপনার সম্পর্কে মানুষের আক্বীদাও আমি বিনষ্ট করতাম। আপনার সম্পর্কে আমার অন্তর ছিলো গালীযে পরিপূর্ণ।” নাউযুবিল্লাহ!
সে বলতে থাকে, “হে শায়েখ আমার! বদ আক্বীদায় আপনার বিরোধিতা, আপনার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা এবং আমার মুনাফিক্বির পরিণাম যে এতো প্রকট, তা জীবদ্দশায় আমার ধারণায় ছিলো না। আমি মনে করেছিলাম, আপনার সম্পর্কিত বিনষ্ট আক্বীদা ও মুনাফিকি খাছলত সত্ত্বেও আমি পার পেয়ে যাবো। বিষয়টিকে আমি স্বাভাবিক মনে করেছিলাম। এখন কবরে এসে আমি বুঝতে পারছি, বদ আক্বীদা এবং মুনাফিক্বি খাছলতে হক্কানী শায়েখ উনার বিরুদ্ধাচরণের পরিণতি কতো ভয়াবহ! হে শায়েখ আমার! আমি বুঝে গেছি, আপনার সম্পর্কে আমার বদ আক্বীদা পোষণ এবং আপনার প্রতি আমার বিরোধিতা ও মুনাফিক্বির কারণে জাহান্নামের আযাব থেকে আমি আর পরিত্রাণ পাবো না।” নাউযুবিল্লাহ!
রসম-রেওয়াজ, বদ খাছলত ও মুনাফিক্বি স্বভাবসহ যাবতীয় মন্দ স্বভাব পরিহার করে বিশুদ্ধ ঈমান, আক্বীদা ও আনুগত্যে আপন শায়েখ উনার মুবারক নির্দেশনায় নিবেদিত থেকে ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ লাভের মাধ্যমে রিযামন্দি-সন্তুষ্টি, তায়াল্লুক-নিসবত, মুহব্বত-মা’রিফাত হাছিল করাই একজন মুরীদের অভীষ্ট লক্ষ্য। মুরীদের এ লক্ষ্য যখন বিনষ্ট হয়, তখন সে লা’নতগ্রস্ত হয়ে জাহান্নামের বাসিন্দা হওয়ার উপযোগী হয়। নাউযুবিল্লাহ! এ মর্মে সকল সালিক-মুরীদের হিদায়েত ও নছীহত লাভের অনিবার্য প্রয়োজনে আলোচ্য হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ নামধারী মুনাফিক্ব ব্যক্তির মর্মান্তিক ঘটনা বিশেষভাবে কিতাবে স্থানলাভ করেছে।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)