ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (২)
, ০৬ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৪ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
পবিত্র ওযূ করার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক:
প্রথমে ওযূর নিয়ত করতঃ ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ পাঠ করে ওযূ শুরু করতে হবে। ওযূর শুরুতে ডান হাত ও বাম হাত তিনবার খিলালের মাধমে কব্জি পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করতে হবে। অতঃপর ডান হাতে পানি নিয়ে তা মুখে দিয়ে ভালোভাবে গড়গড়াসহ তিনবার কুলি করতে হবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে নাকের নরম হাড় পর্যন্ত পানি পৌঁছাতে হবে এবং বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা নাকের ভিতর ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে যেন শুকনো না থাকে। নাকের ভিতর কিছু থাকলে নাক ঝেড়ে নিতে হবে। মহিলাদের ক্ষেত্রে যদি নাকে নাকফুল থাকে তবে তা ভালোভাবে নেড়ে পরিস্কার করতে হবে এবং তার ভিতরে পানি পৌঁছাতে হবে। এভাবে তিনবার নাক ধৌত করতে হবে এবং প্রতিবারই পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হবে।
রোযা অবস্থায় কুলি করার ক্ষেত্রে গড়গড়া করা যাবে না; বরং গড়গড়া ছাড়াই কুলি করতে হবে এবং নাকে পানি দেয়ার ক্ষেত্রে ভিতরে নরম হাড় পর্যন্ত পানি পৌঁছাতে হবে না; বরং নাকের ভিতরের কাছাকাছি স্থান ভালোভাবে ধৌত করতে হবে এবং নাকের ভিতরের গভীর অংশ বাম হাতের ভেজা আঙ্গুল দিয়ে যথাসম্ভব ভেজাতে হবে। কেননা গড়গড়াসহ কুলি করতে গেলে এবং নাকের নরম হাড়ে পানি পৌঁছলে রোযা ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এবারে মুখমন্ডল অর্থাৎ কপালের উপরে যেখান থেকে স্বাভাবিকভাবে মাথার চুল গজায় সেখান থেকে নিয়ে থুতনির নীচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অপর কানের লতি পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থান পানি দিয়ে তিনবার ধৌত করতে হবে। দাড়ি পাতলা হলে দাড়ির গোড়ায় পানি পৌঁছাতে হবে আর দাড়ি ঘন হলে তা খিলাল করতে হবে। দাড়ি খিলালের সময় ডান হাতের পীঠ সীনার দিকে থাকবে।
অতঃপর ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ভালোভাবে ধৌত করতে হবে। তারপর একইভাবে বাম হাতও তিনবার ধৌত করতে হবে। কারো হাতে আংটি থাকলে দেখতে হবে আংটির নিচেও যেন পানি প্রবেশ করে। নখেও যেন কোন ময়লা না থাকে।
মাথা মাছেহ করাটা একটু খেয়াল করে করতে হবে। বৃদ্ধাঙ্গুলি আর শাহাদাত আঙ্গুলি আলাদা রেখে দুই হাতের বাকি তিন আঙ্গুল দিয়ে কপালে চুল শুরু হবার জায়গা থেকে শুরু করে মাথার উপরিভাগ হয়ে পিছনে শেষ পর্যন্ত মাসেহ করতে হবে। তারপর হাতের তালু দ্বারা মাথার ডান ও বাম দিকের অংশ মাথার পিছন থেকে শুরু করে সামনের দিকে মাসেহ করতে হবে। এবারে শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা কানের ভিতরের অংশ আর বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা কানের বাইরের অংশ মাসেহ করতে হবে। এরপর হাতের পীঠের অংশ দিয়ে ঘাড় মাসেহ করতে হবে। ঘার মাসেহের সময় হাত ডানে-বামে সোজা টানতে হবে। গলার দিকে হাত টানলে তা বিদয়াত হবে।
অতঃপর ডান হাত দিয়ে পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে ডান পা টাখনু পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করতে হবে। একইভাবে বাম পা ধৌত করতে হবে। উভয় পা ধৌত করার সময় পায়ের আঙ্গুলসমূহ নিচের দিক থেকে ভালোভাবে খিলাল করতে হবে যেন কোনোভাবেই শুকনো না থাকে। পাত্রে থাকা ওযূর অবশিষ্ট পানি পান করতে চাইলে তা দাঁড়িয়ে পান করতে হবে। এর মধ্যে রোগের শিফা রয়েছে।
ওযূর ফযীলত মুবারক:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতগণকে এ অবস্থায় পেশ করা হবে যে, তখন তাদের চেহারা দুনিয়ায় থাকতে যে ওযূ করেছিল উহার বরকতে এমন ঝকমক করতে থাকবে- যেমন ঘোড়ার কপালে চাঁদ উজ্জ্বল দেখায়। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজের চেহারাকে ক্বিয়ামতের দিন অধিকতর উজ্জ্বল করতে চায়, তার অধিক ওযূ করা উচিত। (মিশকাতুল আনওয়ার/১২৫)
ওযূর দোয়া মুবারক:
بِسْمِ اللهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْمِ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَلٰى دِيْنِ الْإِسْلَامِ. اَلْإِسْلَامُ حَقٌّ وَّالْكُفْرُ بَاطِلٌ. اَلْاِسْلَامُ نُوْرٌ وَّالْكُفْرُ ظُلْمَةٌ.
অর্থ: “মহামহিম আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করে শুরু করছি। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনারই জন্য, যিনি আমাকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপর দায়িম-ক্বায়িম রেখেছেন। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম হলো সত্য এবং কুফর হলো মিথ্যা। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম হলো আলো বা হিদায়াত এবং কুফর হলো অন্ধকার বা গোমরাহী।
ওযূর পর মহাপবিত্র কালিমায়ে শাহাদাত শরীফ পড়া মুস্তাহাব। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهُ اللّٰهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ فُتِحَتْ لَهٗ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ.
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করার পর (নি¤েœর দোয়াটি পাঠ করবেন)
اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.اللّٰهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ.
তার জন্য সম্মানিত জান্নাত উনার আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। (মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
অন্য এক বর্ণনায় পবিত্র কালিমায়ে শাহাদাত পড়ার সময় আকাশের দিকে তাকানোর কথাও আছে। তাই সম্ভব হলে এর উপর আমল করাও উত্তম। তাছাড়া আকাশের দিক মানে উপরের দিক। সুতরাং উপরের তাকিয়ে পড়লেই হবে। এক্ষেত্রে আকাশ দেখা যাওয়া জরুরী নয়। (আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহিলা বা বালিকাদের সুন্নতী পোশাকসহ প্রয়োজনীয় সকল ধরণের সুন্নতী সামগ্রী সংগ্রহ করুন ‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ (বালিকা শাখা) হতে
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
শুকনা গোশ্ত খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন এলকোহলমুক্ত বিশুদ্ধ সুগন্ধি সুন্নতী আতর
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মানুষ মেথির উপকারিতা জানলে প্রয়োজনে স্বর্ণ দিয়ে ওজন করে ক্রয় করতো
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী ফল “আঙ্গুর”
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বেমেছাল উপকারিতা সমৃদ্ধ মহাসম্মানিত সুন্নতী খাবার “কিছ্ছা”
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কিয়ামত পর্যন্ত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক উনার কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন হবে না
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহান আল্লাহ পাক ও উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহাসম্মানিত মুহব্বত মুবারক হাছিল করতে হলে অবশ্যই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা করতে হবে
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘ডুমুর’
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)