ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (১)
, ০৮ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৮ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১৭ মে, ২০২৪ খ্রি:, ০৩ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পবিত্রতার অতীব গুরুত্ব রয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
الطُّهُوْرُ شَطْرُ الْإِيْمَانِ
অর্থ: ‘পবিত্রতা অর্জন করা সম্মানিত ঈমান উনার অঙ্গ। ’ সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই সকল লোকদেরকে মুহব্বত করেন; যারা উনার কাছে বেশি বেশি তওবা ইস্তিগফার করেন, এবং যারা বেশি পাক-পবিত্র থাকে। ” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ: ২২২)
আর এ জন্যেই ত্বহারাত সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ জানা এবং সে মুতাবিক আমল করা সকলের জন্যই ভালাইয়ের কারণ। কেননা ত্বহারাত বা পবিত্রতা অর্জন করা ও পরিপাটি হওয়া সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। আর এই পবিত্রতার অন্যতম বিশেষ অনুসঙ্গ হচ্ছে, সম্মানিত ওযূ।
ওযূ (وُضُوْءٌ) আরবী শব্দ। অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা, স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা ইত্যাদি।
সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায়, পবিত্র পানি দ্বারা সম্মানিত শরয়ী পদ্ধতিতে হাত, মুখ, পা ধৌত করা ও (ভিজা হাতে) মাথা মাসেহ করাকে ‘ওযূ’ বলে।
পবিত্র নামায উনার বিভিন্ন শর্ত বা হুকুম-আহকাম (বাইরের ফরয) এবং রুকন বা আরকান (ভিতরের ফরয) রয়েছে। এ সম্পর্কে অবহিত হওয়া ফরয। আর শরীর, কাপড় ও জায়গাকে নাজাসাতে হাক্বীক্বিয়া এবং হুকমিয়া থেকে পাক করা পবিত্র নামায উনার শর্তসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এজন্য সর্বাগ্রে পবিত্রতার মাসয়ালাগুলো শিক্ষা করা অতীব জরুরী অর্থাৎ ফরয। তন্মধ্যে ওযূ হলো অন্যতম। যেই পবিত্র আয়াত শরীফদ্বারা ওযূ করা ফরয সাব্যস্ত হয় তা নি¤œরূপ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ.
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন পবিত্র নামায আদায় করবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও দুই হাত কনুই সহ ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে আর দুই পা গোড়ালীসহ ধৌত করবে। ” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ: ০৬)
ওযূর গুরুত্ব ও ফযীলত মুবারক:
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرتْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلٰى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلاَثَ عُقَدٍ يَضْرِبُ كُلَّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيْلٌ فَارْقُدْ فَإِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللهَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَإِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَإِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَأَصْبَحَ نَشِيْطًا طَيِّبَ النَّفْسِ وَإِلَّا أَصْبَحَ خَبِيْثَ النَّفْسِ كَسْلَانَ.
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায় তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে, ‘তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও। ’ অতঃপর যদি সে জেগে উঠে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি ওযূ করে তবে তার আরেকটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামায পড়ে তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় খোশ ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতগণকে এ অবস্থায় পেশ করা হবে যে, তখন তাদের চেহারা দুনিয়ায় থাকতে যে ওযূ করেছিল উহার বরকত মুবারকে এমন ঝকমক করতে থাকবে- যেমন ঘোড়ার কপালে চাঁদ উজ্জ্বল দেখায়। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজের চেহারাকে ক্বিয়ামতের দিন অধিকতর উজ্জ্বল করতে চায়, তার অধিক ওযূ করা উচিত। (মিশকাতুল আনওয়ার/১২৫)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, ওযূর মাধ্যমে যে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা হয়, সে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে সমস্ত গুণাহ ঝড়ে যায়। অর্থাৎ গুণাহসমূহ মাফ হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! আর এ জন্যেই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উত্তমরূপে ওযূ করার জন্য তাকীদ প্রদান করা হয়েছে।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির-মুশরিকদের সঙ্গে কখনই সাদৃশ্য রাখা যাবে না
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন ঘুম বা বিশ্রামের জন্য সুন্নতী চকি
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার পরিচয় ও প্রকারভেদ (২)
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘চাদর’
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবারের পাত্র কাঠের বাটি বা পেয়ালা
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী চামড়ার বালিশ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নত মুবারক পালনে কোন হীনম্মন্যতা নয়, বরং সব পরিবেশেই দৃঢ়চিত্ত থাকতে হবে
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা ও মুহাব্বত মুবারকে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘আঙুর’
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার বরকতময় রোগমুক্ত শিফা দানকারী সুন্নতী খাদ্য “ভাত”
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)