ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ পর্ব-৩৬
, ১৩ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ৩০ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
(সম্মানিত বদর জিহাদ মূলতখ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্ পাক উনার খাছ গায়েবী মদদের ঘটনা। যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অনুযায়ী চলেন, খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল করেন, উনারাই গায়েবী মদদের অধিকারী হন। আর যারা সন্ত্রাসী হামলা চালায় ও সন্ত্রাসবাদ লালন করে তারা মুরতাদ ও জাহান্নামী। সন্ত্রাসীদের উপর খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্ পাক উনার লা’নত। সন্ত্রাসী আর মুজাহিদ কখনও এক নয়। সন্ত্রাসী হামলা আর জিহাদ কখনও এক নয়।)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ مَا سَمِعْتُ مُنَاشَدًا يُنْشِدُ حَقًّا لَهُ أَشَدُّ مِّنَ مُنَاشَدَةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ بَدْرٍ، جَعَلَ يَقُوْلُ: " اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أُنْشِدُكَ عَهْدَكَ وَوَعْدَكَ، اَللّٰهُمَّ إِنْ تُهْلِكْ هٰذِهِ العِصَابَةَ لاَ تُعْبَدْ " ثُمَّ اِلْتَفَتَ " ثُمَّ الْتَفَتَ وَكَأَنَّ شِقَّ وَجْهِهِ الْقَمَرُ وَقَالَ: كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلٰى مَصَارِعِ الْقَوْمِ عَشِيَّةً
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন, “বদর জিহাদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্যে যেরূপ বিনয় মুবারক প্রকাশ করেছিলেন অন্য কোনো দোয়াকারীকে সেরূপ বিনয়ী হতে আমি কখনো দেখিনি। (মূলত; তিনি সমস্ত জিন-ইনসান অর্থাৎ গোটা কায়িনাতবাসীর জন্য আদর্শ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! এখানে উম্মত কিভাবে কতটুকু একাগ্রচিত্তে বিনীতভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করবে সেই বিষয়টি উম্মতদেরকে তা’লীম দিয়েছেন বা শিক্ষা মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!) তিনি দোয়া মুবারক করেছিলেন, আয় বারে ইলাহী! আমি আপনার থেকে প্রতিশ্রুতি মুবারক এবং ওয়াদা মুবারকের বাস্তবায়ন কামনা করি। এই মুসলিম মুজাহিদ উনারা যদি আজ পরাজিত হন, তাহলে কখনই আপনার জমিনে ইবাদত-বন্দেগী করার কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। এই দোয়া মুবারক করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন ফিরে তাকালেন তখন উনার নূরুর রহমত মুবারক (চেহারা মুবারক) উনার মধ্যে জোৎস্নার চাঁদ অপেক্ষা বেশি নূর মুবারক উদ্ভাসিত হচ্ছিল। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি যেন শত্রুদের নিহত হয়ে পড়ে থাকার স্থানগুলো দেখতে পাচ্ছি।” (দালায়িলুন নবুওয়াহ, আল খাছায়িছুল কুবরা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখুল ইসলাম- ইমাম যাহাবী)
বদর জিহাদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া মুবারক করার পর লৌহ বর্ম মুবারক পরা অবস্থায় তাঁবু মুবারক থেকে বেরিয়ে ময়দানে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন, তখন তিনি এই পবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত মুবারক করতে লাগলেন-
سَيُهْزَمُ الْجَمْعُ وَيُوَلُّوْنَ الدُّبُرَ (৪৫) بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ (৪৬) إِنَّ الْمُجْرِمِيْنَ فِيْ ضَلَالٍ وَّسُعُرٍ (৪৭)
অর্থ: “এই দলতো অতিশীঘ্রই পরাজিত হবে এবং (জিহাদের ময়দান থেকে) পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে লাঞ্ছিত অবস্থায় পালিয়ে যাবে। (লাঞ্ছিত শুধু এই দুনিয়ায় নয়) বরং ক্বিয়ামত হলো তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল। আর ক্বিয়ামত হবে অত্যন্ত কঠিনতর এবং খুবই তিক্ততর। নিশ্চয়ই অপরাধীরা বিভ্রান্ত ও বিকারগ্রস্ত।” (পবিত্র সূরা ক্বমার শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৪৫-৪৭)
এক বর্ণনায় হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, “জিহাদের ময়দানে উপস্থিত কুরাইশদের এই দলতো অবশ্যই অবশ্যই অতিশীঘ্রই পরাজিত হবে এবং সত্যের মুকাবিলা করতে না পেরে জিহাদের ময়দান থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে লাঞ্জিত অবস্থায় পালিয়ে তারা তাদের প্রাণরক্ষা করবে।”
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ৪৬ ও ৪৭ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, “বরং ক্বিয়ামত হলো তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল। আর ক্বিয়ামত হবে অত্যন্ত কঠিনতর এবং খুবই তিক্ততর। নিশ্চয়ই অপরাধীরা বিভ্রান্ত ও বিকারগ্রস্ত।” একথার অর্থ হলো, জিহাদের ময়দানে কাফির মুশরিকদের পরাস্ত হওয়া বা নিহত হওয়াই তাদের আসল শাস্তি নয়। বরং মুশরিকদের আসল শাস্তি শুরু হবে ক্বিয়ামতের সময় থেকে। সুতরাং ক্বিয়ামতের সময় থেকে আখেরাতের শাস্তিই বা পরকালের শাস্তিই হচ্ছে কাফির মুশরিকদের আসল শাস্তি বা প্রকৃত শাস্তি। আর আখেরাতের শাস্তি বা পরকালের শাস্তি দুনিয়ার শাস্তির তুলনায় অত্যন্ত কঠিন এবং খুবই তিক্ততর। বরং পরকালের শাস্তির তুলনায় দুনিয়ার শাস্তি যেনো কোন শাস্তিই নয়। যেমন উদাহরণস্বরূপ দুনিয়াতে অনেক কাফির, মুশরিকদেরকে দেখা যায় তারা দুনিয়াতে নিরাপদ জীবন যাপন করে। অথচ আখেরাতে বা পরকালে এই সকল কাফির মুশরিকদের অত্যন্ত কঠিন শাস্তি হবে। অতএব দুনিয়ার শাস্তি যে প্রকৃত শাস্তি নয়, এটাই হচ্ছে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।
অতঃপর أَدْهَى وَأَمَرُّ (আদ্হা ওয়া আমার) অর্থ হলো অত্যন্ত কঠিন এবং খুবই তিক্ততর। অর্থাৎ দুনিয়ার বা পৃথিবীর শাস্তির তুলনায় আখেরাতের বা পরকালের শাস্তি অত্যন্ত কঠোর এবং খুবই তিক্ততর। আর اَلْمُجْرِمِيْنَ (আল্ মুজরিমীন) অর্থ হলো অপরাধীরা। উক্ত শব্দ মুবারক উনার মাধ্যমে এখানে সাধারণভাবে বুঝানো হয়েছে, “কুরাইশ মুশরিকরা যারা বদর জিহাদে এসেছিল, তাদেরসহ দুনিয়ার সকল বিধর্মী যারা মহাসম্মানিত দ্বীন ইসলাম মুবারক গ্রহণ করে নাই।
কাজেই উপরোক্ত আলোচনা মুবারক থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, “বদর জিহাদে কুরাইশ মুশরিকরাসহ সকল বিধর্মীরা দুনিয়াতে বা পৃথিবীতে পথভ্রষ্ট, লাঞ্ছিত, অপমানিত, দুঃখকষ্টে নিপতিত এবং আখেরাতে বা পরকালে শাস্তিগ্রস্ত অর্থাৎ জাহান্নামের আগুনের স্পর্শই হবে তাদের জন্য যত্রণাদায়ক শাস্তি। নাঊযুবিল্লাহ্ (তাফসীরে মাযহারী)
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৪)
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (২)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৯)
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)