ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ উনার বর্ণনা (১৩৪)
, ৩০ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৩ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ২৩ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) আইন ও জিহাদ
প্রসিদ্ধ তারিখ ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে-
وَكَانَ أَوَّلَ مَنْ قَدِمَ مَكّةَ بِمُصَابِ قُرَيْشٍ الْحَيْسُمَانُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْخُزَاعِيّ، فَقَالُوْا : مَا وَرَاءَك ؟ قَالَ قُتِلَ عُتْبَةُ بْنُ رَبِيْعَةَ، وَشَيْبَةُ بْنُ رَبِيْعَةَ، وَأَبُوْ الْحَكَمِ بْنُ هِشَامٍ، وَأُمَيّةُ بْنُ خَلَفٍ، وَزَمَعَةُ بْنُ الْأَسْوَدِ، وَنُبَيْهٌ وَمُنَبّهٌ ابْنَا الْحَجَّاجِ، وَأَبُوْ الْبَخْتَرِيّ بْنُ هِشَامٍ فَلَمّا جَعَلَ يُعَدّدُ أَشْرَافَ قُرَيْشٍ .قَالَ صَفْوَانُ بْنُ أُمَيّةَ، وَهُوَ قَاعِدٌ فِي الْحِجْرِ : وَاَللّهِ إنْ يَعْقِلْ هَذَا فَاسْأَلُوْهُ عَنّيْ ؛ فَقَالُوْا : مَا فَعَلَ صَفْوَانُ بْنُ أُمَيّةَ ؟ قَالَ هَا هُوَ ذَاكَ جَالِسًا فِي الْحِجْرِ، وَقَدْ وَاَللهِ رَأَيْتُ أَبَاهُ وَأَخَاهُ حِيْنَ قُتِلَا
অর্থ: “(হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন।) হাইসুমান ইবনে আব্দুল্লাহ খুযায়ী কুরাইশ কাফের মুশরিকদের শোচনীয় পরাজয়ের দুঃসংবাদ নিয়ে সর্বপ্রথম পবিত্র মক্কা শরীফে উপস্থিত হয়। অতঃপর লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, বদর যুদ্ধের খবর কি? সে বললো, উতবা ইবনে রবীয়া, শায়বা ইবনে রবীয়া, আবুল হাকাম ইবনে হিশাম, উমাইয়া ইবনে খালফ, যাময়া ইবনে আসওয়াদ, নবীয়্যাহ ও মুনাব্বাহ ইবনে হাজ্জাজ, আবুল বুখতারী ইবনে হিশাম এরা সবাই নিহত হয়েছে। হাইসুমান যখন নিহত কুরাইশ কাফের মুশরিক নেতাদের নাম এক এক করে বলছিল তখন পবিত্র কা’বা শরীফ উনার হাতীমে বসে থাকা সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যদি তার জ্ঞানবুদ্ধি ঠিক থেকে থাকে তাহলে তোমরা তাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো। তখন তারা তাকে জিজ্ঞেস করল সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া কি করে? সে বলল, সে তো হাতীমের মধ্যে বসে আছে। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি তার বাপ ও ভাইকে স্বচক্ষে নিহত হতে দেখেছি। (সীরাত ইবনে হিশাম জিলদ- ২ পৃষ্ঠা নং- ৩১৫, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল কামিলু ফিত্ তারীখ, আর রওদ্বুল উনূফ, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও ইতিহাস গ্রন্থে আরো উল্লেখ রয়েছে, “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা উনার গোলাম হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযাদকৃত গোলাম হযরত আবূ রাফি’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি এক সময় খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার গোলাম ছিলাম। এই পরিবার উনারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা ও আমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম। খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনাকে কুরাইশরা সকলে ভয় পেতো এবং তিনি কুরাইশ কাফের মুশরিকদের অপছন্দ করতেন এবং তিনি নিজের মুসলমান হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেননি। খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার অনেক সম্পদ ছিলো এবং বহু লোককে তিনি দান-খয়রাত ও আর্থিক সাহায্য করতেন। আবূ লাহাব সে বদর যুদ্ধে নিজে সরাসরি অংশগ্রহণ না করে তার পরিবর্তে আসী ইবনে হিশাম ইবনে মুগীরাকে পাঠিয়েছিল। অন্য লোকেরাও অনেকেই এরূপ করেছিল যে, নিজে যায়নি সে তার পরিবর্তে অন্য একজনকে পাঠিয়েছিল। আবূ লাহাব যখন বদর যুদ্ধের পরাজয়ের কথা জানলো তখন খ¦লিক্ব মালিক্ব রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে কঠিন লাঞ্চিত ও অপমানিত করলেন। কিন্তু আমরা নিজেকে সম্মানিত ও অনুপ্রাণিত বোধ করেছিলাম। আমি সবার কাছে প্রিয় ছিলাম। তীর বানাবার কাজ করতাম। যমযম কূপের পাশে অবস্থিত তাঁবুতে বসে সেগুলো ঠিক করতাম। একদিন আমি ঐ তাঁবুতে বসে কাজ করছিলাম, তখন খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আহলিয়া হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি আমার কাছেই বসা ছিলেন। আমরা কুরাইশ কাফের মুশরিকদের পরাজয়ের খবরে আনন্দিত হয়েছিলাম। এ সময় আবূ লাহাব শোচনীয় অবস্থায় পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে এসে তাঁবুর এক কোণে আমার দিকে পিঠ দিয়ে বসল। হঠাৎ হযরত আবূ সুফিয়ান ইবনে হারিছ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেখানে আগমন করলেন তিনি তখনও উনার সম্মানিত ঈমান মুবারক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেননি, উনার পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রকাশ পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় পর্যন্ত বিলম্বিত হয়েছিল। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচাতো ভাই ছিলেন। তখন আবূ লাহাব উনাকে বলল, আমার কাছে আসুন। আপনিতো সব খবর জানেন। ফলে তিনি সেখানে তার সাথে বসে পড়লেন এবং অন্য লোকেরা তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। আবূ লাহাব জিজ্ঞেস করল বাবা! আপনি বদর জিহাদের খবর আমাকে বলুন। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বললেন, “খ¦লিক্ব মালিক্ব রব মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরা শত্রুদের কাছে নিজেদের সোপর্দ করেছি। উনারা যেমন খুশি আমাদের নিহত করেছেন ও বন্দী করেছেন। আমি কুরাইশদের তিরস্কার করব না। কারণ আমরা আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে ধূসর বর্ণের ঘোড়ার উপর অসংখ্য সাদা রঙ্গের সৈন্য দেখেছি। যারা কাউকে রেহাই দেননি এবং কেউ উনাদের সামনে টিকে থাকতে পারেনি। হযরত আবূ রাফি’ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বললেন, নিশ্চয়ই উনারা হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম হবেন। এ কথা শুনেই আবূ লাহাব আমার মুখ মুবারকে প্রচন্ড এক থাপ্পর দিলো এবং আমার শরীরের উপর বসে আমাকে মারতে লাগলো। আর আমি ছিলাম সহজ সরল ও হালকা পাতলা ব্যক্তি। এ সময় হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা তিনি তাঁবুর একটি খুটি নিয়ে আবূ লাহাবের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং খুটি দিয়ে আঘাত করে তার মাথা ফাটিয়ে দিলেন। হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা তিনি বলেন, “হযরত আবূ রাফি’ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার মুনিব এখানে নেই বলে উনাকে দূর্বল ভেবেছ? এরপর আবূ লাহাব সেখান থেকে উঠে লাঞ্চিত ও অপমানিত হয়ে চলে গেল। খ¦লিক্ব মালিক্ব রব মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এরপর আবূ লাহাবের শরীরে বড় বড় ফোসকা দেখা দিলো এবং তাতেই সে সাত দিনের মধ্যে মারা গেলো।” (তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে খাযিন, মুসতাদরিকে হাকিম, আস সীরাত ইবনে হিশাম)
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বীরত্ব মুবারক (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬২)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ উনার ময়দানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ একজন অপরজনকে প্রাধান্য দেয়ার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)