ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ (পর্ব-৪৯)
, ২৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৯ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৫ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আইন ও জিহাদ
(সম্মানিত বদর জিহাদ মূলত: খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ গায়েবী মদদের ঘটনা। যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অনুযায়ী চলেন, খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুুল করেন, উনারাই গায়েবী মদদের অধিকারী হন। আর যারা সন্ত্রাসী হামলা চালায় ও সন্ত্রাসবাদ লালন করে তারা মুরতাদ ও জাহান্নামী। সন্ত্রাসীদের উপর খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার লা’নত। সন্ত্রাসী আর মুজাহিদ কখনও এক নয়। সন্ত্রাসী হামলা আর জিহাদ কখনও এক নয়। )
পূর্ব প্রকাশিতের পর
খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَإِذْ يُرِيْكُمُوْهُمْ إِذِ الْتَقَيْتُمْ فِيْ أَعْيُنِكُمْ قَلِيلًا وَّيُقَلِّلُكُمْ فِيْ أَعْيُنِهِمْ لِيَقْضِيَ اللهُ أَمْرًا كَانَ مَفْعُولًا وَإِلَى اللهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ (৪৪)
অর্থ: (আপনারা স্মরণ করুন) যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের মুকাবিলার সময় চোখের দেখায় আপনাদেরকে দেখালেন যে তারা অর্থাৎ কাফেরেরা সংখ্যায় অল্প; এবং তাদের চোখের দেখায় আপনাদেরকে দেখালেন তাদের চোখে অল্প; যাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি সে কাজ করে নিতে পারেন যা ছিল নির্ধারিত। আর সব কাজই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট গিয়ে পৌঁছায়। (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৪৪)
পবিত্র আয়াত শরীফে সঙ্গে সঙ্গে একথাও বলা হয়েছে যে, وَّيُقَلِّلُكُمْ فِيْ أَعْيُنِهِمْ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলমানদেরকেও কুরাইশদের দৃষ্টিতে কম করে দেখিয়েছেন। যেমন কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে যে, আবু জেহেল মুসলমানদেরকে দেখে তার সাথীদেরকে বলেছিল যে, মুসলিম বাহিনীকে এর চেয়ে বেশি বলে মনে হচ্ছে না, যাদের খোরাক একটি উট হতে পারে। অর্থাৎ আবূ জেহেলের দৃষ্টিতে মুসলিম বাহিনীর সংখ্যা মোট শতেক দেখানো হয়। এখানে মুসলিম বাহিনীকে কুরাইশদের দৃষ্টিতে কম করে দেখানোর তাৎপর্য এই যে, কুরাইশদের মনে মুসলমানদের ভীতি যেন পূর্ব থেকে আচ্ছন্ন হয়ে না যায়, যার ফলে কুরাইশ কাফের মুশরিকরা জিহাদের ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে।
ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ্্ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, জিহাদের ময়দানে আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম, দুশমনদের সংখ্যা খুবই কম। তখন আমি আমার পাশের সহযোদ্ধাকে বললাম, ওরা তো দেখছি দুইশ’র বেশি হবে না। আপনি কি বলেন? তিনি বললেন, আমার তো মনে হয় ৯০ জন। এক পর্যায়ে জিহাদ শেষ হলো, পরে এক যুদ্ধ বন্দীকে আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমরা জিহাদ করতে এসেছিলে কতজন? সে বললো ১০০০ জন। অপরদিকে কুরাইশরাও দেখছিলো মুসলমানদের সংখ্যা কম। মুসলমানদের সংখ্যা বেশি দেখলে তারা পালিয়ে যেতে পারতো। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের চোখে মুসলিম বাহিনীকে দেখিয়েছিলেন সংখ্যায় কম। আবু জেহেল তাই বলেছিলো, মুসলিম কাফিলাদেরকে তো দেখছি একটি উটের গোশত ভক্ষণ করার মতোও নয়।
উল্লেখ্য যে, কুরাইশ কাফের মুশরিকরা বদর জিহাদ শুরু করার পূর্বে মুসলিম বাহিনীকে কম সংখ্যক দেখতে পেয়েছিলো। কিন্তু যখন জিহাদ শুরু হয়ে গেলো, তখন তারা দেখতে পাচ্ছিলো, মুসলিম বাহিনীর সংখ্যা তাদের দ্বিগুণ।
এরপর বলা হয়েছে, لِيَقْضِيَ اللهُ أَمْرًا كَانَ مَفْعُولًا অর্থাৎ যাতে করে মহান আল্লাহ পাক তিনি সে কাজ করে নিতে পারেন যা ছিল নির্ধারিত। অর্থাৎ মুসলমানদের সংখ্যা কম হওয়া সত্তেও ঐতিহাসিক বদর জিহাদে বিজয় দান করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সত্যতার বিকাশ ঘটিয়ে দিলেন। মূলত, বদর জিহাদকে ঘিরে উনার যা উদ্দেশ্য ছিল, মহান আল্লাহ পাক তিনি এভাবে তা পূর্ণ করে দিলেন।
পরিশেষে বলা হয়েছে, وَإِلَى اللهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত সব বিষয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তিনি যা ইচ্ছা করবেন এবং যেমন ইচ্ছা নির্দেশ দেবেন। তিনি কমকে বেশির উপর এবং দুর্বলকে শক্তির উপর বিজয়ী করে দিতে পারেন, অল্পকে অধিক, অধিককে অল্পে পরিণত করতে পারেন। সুবহানাল্লাহ!
বদর জিহাদ উনার বিজয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুকরিয়াস্বরূপ পবিত্র ছলাত আদায়:
জিহাদ শেষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাঁবুতে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। মুসলমানদের হাতে বড় বড় কুরাইশ নেতা নিহত হলো এবং অনেক বড় বড় নেতা বন্দী হলো। যখন মুজাহিদরা কুরাইশদের বন্দী করছিলেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাঁবুতে তাশরীফ মুবারক রাখছিলেন। এ সময় হযরত সা’দ ইবনে মুআয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কয়েকজন হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাঁবু মুবারকের সামনে তরবারী হাতে নিয়ে পাহারা দিচ্ছিলেন। কুরাইশদেরকে বন্দী হতে দেখে হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চেহারা মুবারকে অসন্তুষ্টির ভাব ফুটে উঠলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমার মনে হচ্ছে এ কাজে আপনি খুশি নন?” হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পরক্ষণেই বললেন, “হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আজ মুশরিকদেরকে খতম করার প্রথম সুযোগ মহান আল্লাহ পাক তিনি দিয়েছেন। আজ কাফেরদেরকে বন্দী করার চেয়ে হত্যা করাই ছিল আমার কাছে পছন্দনীয় কাজ”।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বদর জিহাদে বিজয়ে শুকরিয়াস্বরূপ দুই রাকায়াত পবিত্র ছলাত আদায় করলেন। সুবহানাল্লাহ্্!
এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে মাযহারী” কিতাবে উল্লেখ আছে, আবূ ইয়ালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় এসেছে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আমি বদর জিহাদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে বিজয়ের শুকরিয়াস্বরূপ দুই রাকায়াত ছলাত আদায় করেছি। ছলাত আদায় করা অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুর রহমত বা চেহারা মুবারকে নূরুত তাকরীর বা মুচকি হাসি মুবারক প্রকাশিত হলো। নামায শেষে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি দেখলাম পবিত্র ছলাত আদায় করা অবস্থায় আপনার চেহারা মুবারকে ফুটে উঠলো মুচকি হাসি মুবারক? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি জিহাদের ময়দান থেকে কুরাইশদেরকে তাড়িয়ে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। ময়দানের পুবাল বাতাসে উনার পাখায় লেগে রয়েছে কিছু ধুলোবালি। আমার দিকে তাকিয়ে তিনি মুচকি হাসলেন। আমিও নূরুত তাকরীর মুবারক অর্থাৎ মুচকি হাসি মুবারক প্রকাশ করলাম। সুবহানাল্লাহ!
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বীরত্ব মুবারক (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬২)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ উনার ময়দানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ একজন অপরজনকে প্রাধান্য দেয়ার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)