ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ (পর্ব-৪৮)
, ১০ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৫ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আইন ও জিহাদ
(সম্মানিত বদর জিহাদ মূলত: খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ গায়েবী মদদের ঘটনা। যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অনুযায়ী চলেন, খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুুল করেন, উনারাই গায়েবী মদদের অধিকারী হন। আর যারা সন্ত্রাসী হামলা চালায় ও সন্ত্রাসবাদ লালন করে তারা মুরতাদ ও জাহান্নামী। সন্ত্রাসীদের উপর খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। সন্ত্রাসী আর মুজাহিদ কখনও এক নয়। সন্ত্রাসী হামলা আর জিহাদ কখনও এক নয়।)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
ঘটনাটি ছিলো এ রকম-
সম্মানিত মুসলিম বাহিনী শত্রুদের মুখোমুখি অবস্থানের পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি জিহাদের নির্দেশ মুবারক না দিবো ততক্ষণ পর্যন্ত আপনারা জিহাদ করবেন না। অর্থাৎ নির্দেশনা মুবারক না পাওয়া পর্যন্ত আপনারা আক্রমণ করবেন না। অর্নথক তীরের অপচয় করবেন না। শত্রুরা আপনাদের আয়ত্তের ভিতরে আসলে তীর নিক্ষেপ করবেন। এরপর শত্রুরা আপনাদের নিকটবর্তী হতে থাকলে হাত দিয়ে পাথর নিক্ষেপ করবেন। আরো নিকটবর্তী হতে থাকলে বর্শা ও বল্লম নিক্ষেপ করবেন। তীর শেষ না হয় এই পরিমান তীর ছুড়বেন। অতঃপর শত্রুরা আপনাদের হাতের সীমার মধ্যে চলে আসলে তরবারি দিয়ে আঘাত করবেন। সুবহানাল্লাহ!
এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাঁবুতে প্রবেশ করলেন। তিনি তাঁবুতে প্রবেশ করেই দুআ মুবারক করা অবস্থায় তন্দ্রাভিভূত হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কথায় তন্দ্রা মুবারক (কেটে) গেলো। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দুশমনেরা একেবারে কাছে এসে পড়েছে। শোরগোল শুরু হয়েছে। তন্দ্রাভিভূত অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখানো হয়েছিলো, কুরাইশদের সংখ্যা খুবই কম। এ কথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে জানালেন। ফলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা প্রফুল্লচিত্ত ও নির্ভিক হলেন। প্রচ- মানসিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠলেন সকলেই। সুবহানাল্লাহ্!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِذْ يُرِيْكَهُمُ اللهُ فِيْ مَنَامِكَ قَلِيلًا وَلَوْ أَرَاكَهُمْ كَثِيْرًا لَّفَشِلْتُمْ وَلَتَنَازَعْتُمْ فِيْ الْأَمْرِ وَلٰكِنَّ اللهَ سَلَّمَ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ
অর্থ:“(আয় আমার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি (উম্মতদেরকে জানিয়ে দিন) যখন স্বপ্নে দেখেছিলেন যে তারা সংখ্যায় অল্প; যদি আপনাকে (মহান আল্লাহ পাক) দেখাতেন যে, তারা সংখ্যায় অধিক তাহলে আপনারা (উম্মতরা) সাহস হারাতেন এবং সম্মানিত জিহাদের বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতেন। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদেরকে রক্ষা করেছেন এবং অন্তরে যা আছে সে সম্বন্ধে তিনি বিশেষভাবে অবহিত”। (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৪৩)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “তাফসীরে মাযহারী” কিতাবে উল্লেখ আছে, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে প্রকৃতির এক অপূর্ব বিস্ময় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যা ঐতিহাসিক বদর জিহাদে এই উদ্দেশ্যে কার্যকর করা হয়, যাতে উভয় বাহিনীর কোন একটিও সম্মানিত জিহাদের ময়দান থেকে সরে না যায়। কারণ, এই জিহাদের ফলশ্রুতিতে বস্তুগত দিক দিয়েও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সত্যতার বিকাশ ঘটানো ছিলো নির্ধারিত।
বস্তুত প্রকৃতির সে অপূর্ব বিস্ময়টি ছিলো এই যে, কুরাইশ বাহিনী যদিও তিনগুণ বেশী ছিলো, কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি শুধুমাত্র স্বীয় পরিপূর্ণ ক্ষমা ও কুদরতবলে কুরাইশদের সংখ্যাকে মুসলিম বাহিনীর চোখে কম করে দেখিয়েছেন, যাতে উনাদের মধ্যে কোন দুর্বলতা ও বিরোধ সৃষ্টি হয়ে না যায়। আর এ ঘটনা ঘটে দু’বার। একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে স্বপ্নযোগে দেখেন। আর দ্বিতীয়বার যখন উভয়পক্ষ সামনা-সামনি হয়, তখন কুরাইশদের সংখ্যাকে মুসলিম বাহিনীর চোখে কম করে দেখানো হয়।
সুতরাং পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ উনার ৪৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্বপ্নের ঘটনা এবং ৪৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে প্রত্যক্ষ জাগ্রত অবস্থার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “শত্রুদের সংখ্যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কম করে দেখানো হয়েছিলো জাগ্রত অবস্থায়। স্বপ্নে নয়। পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত مَنَامِكَ অর্থাৎ “স্বপ্নে” এ কথাটির অর্থ হবে স্বপ্নের মতো করে। অর্থাৎ জাগ্রত অবস্থায় স্বপ্নের মতো করে মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখিয়েছিলেন কুরাইশদের সংখ্যা নগণ্য সংখ্যক। আর তাদের যুদ্ধের আয়োজনও অপ্রতুল।
তাফসীরে মাযহারী কিতাবে উল্লেখ আছে- وَلَوْ أَرَاكَهُمْ كَثِيرًا لَفَشِلْتُمْ وَلَتَنَازَعْتُمْ فِي الْأَمْرِ এই আয়াত শরীফের অর্থ হচ্ছে, “যদি আপনাকে দেখানো হতো যে, তারা অর্থাৎ কাফেরেরা সংখ্যায় অধিক তাহলে আপনারা (মুসলিম বাহিনী) সাহস হারাতেন এবং জিহাদের বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতেন। কেউ কেউ বলতেন, জিহাদ করতে করতে আমরা শহীদ হবো। আবার কেউ কেউ বলতেন যে, আমরা জিহাদ করবো না। এভাবে দেখা দিতো তুমুল বিরোধ। তাই এখানে স্বপ্নে ক্রুাইশদের সংখ্যা কম করে দেখানোর কারণটি বলা হয়েছে। বাস্তবে ক্রুাইশ মুশরিকদের সংখ্যা ছিলো বিপুল সংখ্যক জনবল ও অস্ত্রবলে সজ্জিত। এই অবস্থা দেখলে মুসলমানদের মধ্যে অনেকের মনোবল হারানোর আশঙ্কা থাকতো।
উল্লেখ্য যে, বাস্তবে কুরাইশদের কি পরিমান জনবল, অস্ত্রবল ছিলো সে সম্পর্কে সীরাতে ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে বর্ণিত আছে, কুরাইশ বাহিনী বদর জিহাদে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে খুফাফ ইবনে আয়মা ইবনে রাহাযা গিফারী তার ছেলের মাধ্যমে কয়েকটি যবেহ করা পশু কুরাইশ বাহিনীর জন্য উপহার স্বরূপ পাঠিয়ে দিল এবং ছেলের মাধ্যমে বলে পাঠালো যে, তোমাদের প্রয়োজন থাকলে আমরা কিছু অস্ত্র ও যোদ্ধা দিয়ে সাহায্য করতে পারি। এর জবাবে কুরাইশ নেতারা তার ছেলের মাধ্যমে বলে পাঠালো যে, আত্মীয়তার খাতিরে তোমার যা করণীয় ছিল তা তুমি করেছ। আমাদের জীবনের কসম! এখন আমরা যেখানে যাচ্ছি, তা যদি মানুষের বিরুদ্ধে হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের শক্তির কোন কমতি নেই। আর যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বর্ণনা মুবারক অনুসারে এ জিহাদ মহান আল্লাহ উনার বিরুদ্ধে হয়ে থাকে তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে জিহাদ করার শক্তি কারো নেই।
অতএব, বাস্তবে কুরাইশ কাফের মুশরিকদের কি পরিমান জনবল ও অস্ত্রবল ছিলো তা কুরাইশ কাফেরদের উক্ত বক্তব্য দ্বারাই প্রমাণিত হয়েছে।
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)