ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ (পর্ব-৪৫)
, ০৭ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২২ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৬ অগ্রহায়ণ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
পূর্ব প্রকাশিতের পর
বদর ময়দানে কুরাইশদের প্রতি বালু নিক্ষেপ ও তাদের দুরাবস্থা:
এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে মাযহারী” কিতাবে উল্লেখ আছে, বদর জিহাদের দিন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কুরাইশ কাফিরেরা যখন এক হাজার কাফিলা নিয়ে টিলার পিছন দিক থেকে বদর ময়দানে এসে উপস্থিত হয়, তখন তারা একান্ত গর্বিত, অতিশয় অহংকার ও সদম্ভ ভঙ্গীতে উপস্থিত হয়। সে সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুয়া মুবারক করেন-
اَلَّلهُمَّ هَذِهِ قُرَيْشٌ قَدْ أَقْبَلَتْ بِخُيَلَائِهَا وَفَخْرِهَا تُحَادُّكَ وَتُكَذِّبُ رَسُوْلَكَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، اَلَّلهُمَّ فَنَصْرَكُ الَّذِيْ وَعَدْتَنِيْ " اَلَّلهُمَّ أَحِنَّهُمُ الْغَدَاةَ.
অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! এরা কুরাইশ। এরা অহংকারী এবং উদ্ধত। এরা আপনার এবং আপনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করছে। এরা এখন অস্বীকার করছে। এরা যুদ্ধ করতে চায়। আয় মহান আল্লাহ্্ পাক! আপনি যে বিজয়ের ওয়াদা মুবারক করেছেন আজ সেই বিজয় আমাদেরকে দান করুন। আপনি ওদেরকে ধ্বংস করে দিন”। তখন হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম তিনি নাযিল হয়ে বিনয় প্রকাশ করে বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি এক মুঠো বালু নিয়ে কুরাইশ কাফিরদের প্রতি নিক্ষেপ করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক মুঠো বালু নূরুল মাগফিরাত মুবারকে (হাত মুবারকে) নিয়ে কুরাইশ কাফিরদের দিকে নিক্ষেপ করলেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন "شَاهَتِ الْوُجُوْهُ “আয় মহান আল্লাহ্্ পাক! দুশমনদের চেহারা বিকৃত করে দিন। আর তারই প্রতিক্রিয়ায় গোটা শত্রু বাহিনীর মাঝে এক ভীতির সঞ্চার হয়ে যায়।” এ প্রেক্ষিতেই নাযিল হলো পবিত্র এ আয়াত শরীফ-
وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ وَلٰكِنَّ اللهَ رَمٰى
অর্থাৎ “আয় আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যে বালু মুবারক নিক্ষেপ করেছেন, প্রকৃতপক্ষে তা আপনি নিক্ষেপ করেননি, বরং স্বয়ং মহান আল্লাহ্্ পাক তিনিই তা নিক্ষেপ করেছেন”। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১৭)
অর্থাৎ বালু নিক্ষেপের ফলাফল এই যে, তা প্রতিটি কাফিরের চোখে পৌঁছে গিয়ে তাদের সবাইকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে দেয়। ইহা স্বয়ং মহান আল্লাহ্্ পাক তিনি স্বীয় মহান কুদরত মুবারক উনার দ্বারা এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সেটাই বুঝানো হয়েছে”।
উল্লেখ্য, বদর জিহাদের দিন কুরাইশদের দুরাবস্থা উল্লেখ করতে গিয়ে হযরত আবূ শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ নাঈম রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইবনে মারদুবিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের বর্ণনায় এসেছে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, “বদর জিহাদের দিন, জিহাদ শুরুর সময় আমি শুনতে পেলাম আকাশ থেকে কংকর (পাথর কণা) পতনের আওয়াজ। মনে হচ্ছিলো সেগুলো যেনো কোনো থালার উপর পতিত হচ্ছে। যখন কুরাইশরা কাতার বদ্ধ হয়ে দাঁড়ালো, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের দিকে নিক্ষেপ করলেন এক মুঠো কাঁকর (পাথর কণা)। মুহূর্তের মধ্যে কুরাইশ কাফির মুশরিকরা বিশৃংখল হয়ে পড়লো। পলায়নপ্রবণতা শুরু হয়ে গেল তাদের মধ্যে। সুবহানাল্লাহ্!
হযরত হাকিম বিন হাজ্জাম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে হাসান সনদে ইবনে হাতিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইবনে জারীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বর্ণনা করেছেন, “ঐতিহাসিক বদর জিহাদ শুরুর প্রাক্কালে আমি শুনতে পেলাম কংকর (পাথর কণা) পতনের শব্দ। মনে হচ্ছিল যেনো কোনো থালায় পতিত হচ্ছে অজস্র পাথর কণা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই কংকর (পাথর কণা) নিজ নূরুল মাগফিরাত মুবারকে (হাত মুবারকে) নিয়ে شَاهَتِ الْوُجُوْهُ (শাহাতিল উজূহু) (দুশমনের চেহারা বিকৃত হোক ও ধ্বংস হোক) বলে নিক্ষেপ মুবারক করলেন কুরাইশ কাফির মুশরিকদের দিকে”। ঐ প্রস্তর মুবারক নিক্ষেপের ফলেই সেদিন বিজয় লাভ করেছিলাম আমরা। সুবহানাল্লাহ্!
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বীরত্ব মুবারক (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬২)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ উনার ময়দানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ একজন অপরজনকে প্রাধান্য দেয়ার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)