ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ (পর্ব-৪৪)
, ২৯ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৬ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৯ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আইন ও জিহাদ
জিহাদের ময়দানে উমাইয়া
ইবনে খাল্ফ্কে হত্যা
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরাত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমাইয়া ইবনে খাল্ফ্ পবিত্র মক্কা শরীফে আমার বন্ধু ছিলো। আমি মুসলমান হওয়ার পর যখন আমার আগের নাম আব্দে আমরের পরিবর্তে “আব্দুর রহমান” রাখা হলো তখন উমাইয়া ইবনে খাল্ফ্ আমাকে বললো, “আপনি আপনার বাবা-মায়ের রাখা নামটি বাদ দিয়ে দিলেন”? আমি বললাম, “হ্যাঁ, বাদ দিয়েছি”। তখন উমাইয়া ইবনে খাল্ফ্ বললো, আমি রহমানকে চিনি না। কাজেই আপনি আপনার এমন একটা নাম রাখুন, যে নামে আমি আপনাকে ডাকতে পারি। আপনার অবস্থা এই যে, আমি যদি আপনাকে আগের নাম আব্দে আমর ধরে ডাকি তবে সে ডাকে আপনি সাড়া দেন না। আর আমার অবস্থা এই যে, আপনাকে আমি এমন নামে ডাকতে প্রস্তুত নই, যে নামের সাথে আমার পরিচয় নেই। নাঊযুবিল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, উমাইয়া ইবনে খাল্ফ্ আমাকে আব্দে আমর বলে ডাকতো সে যখন আমাকে এই নামে ডাকতো তখন তার ডাকে আমি সাড়া দিতাম না। আমি তাকে বললাম, “হে আবূ আলী! অর্থাৎ “হে উমাইয়া ইবনে খাল্ফ্”! তোমার পছন্দমতো একটি নাম নির্ধারণ করে নাও, যা দ্বারা আমাকে ডাকতে পারো। তখন সে বললো, তাহলে আপনার নাম হলো আব্দে ইলাহ। তখন আমি বললাম, ঠিক আছে। এরপর আমি যখনই তার পাশ দিয়ে যেতাম তখন সে আমাকে হে আব্দে ইলাহ! বলে ডাকতো। আমি তার ডাকে সাড়া দিতাম এবং তার সাথে কথা বলতাম। ঐতিহাসিক বদর জিহাদের দিন আমি যখন তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন সে তার ছেলে আলী ইবনে উমাইয়ার হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো। এ সময় আমার সঙ্গে কয়েকটি লৌহবর্ম ছিলো যা আমি নিহত শত্রুর থেকে পেয়েছিলাম। এগুলো নিয়ে যাওয়ার সময় সে আমাকে দেখে আব্দে আমর বলে ডাক দেয়। আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম না। এরপর সে আমাকে আব্দে ইলাহ বলে ডাক দিলে আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম। তখন সে আমাকে বললো, আপনি আমার ব্যাপারে কি চিন্তা করছেন? আপনার সঙ্গে যে বর্মগুলো আছে তার চাইতে আমি আপনার কাছে উত্তম না? আমি বললাম, “হ্যাঁ”। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এতো খুশির কথা। তখন তিনি বর্ম ফেলে দিয়ে উমাইয়া ইবনে খাল্ফ্ ও তার ছেলেকে বন্দি করলেন। তখন উমাইয়া ইবনে খাল্ফ্ বললো, আজকের দিনের মতো আর কোনদিন আমি আপনাকে দেখিনি। আপনার কি দুগ্ধবতী উটের প্রয়োজন নেই? সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এরপর আমি ওদের দু’জনকে নিয়ে চললাম।
অন্য এক বর্ণনায় আরো উল্লেখ রয়েছে, “এ সময় উমাইয়া ইবনে খাল্ফ্ সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, ওই ব্যক্তি কে? যিনি উনার বক্ষ মুবারকে উটপাখির পালক লাগিয়ে রেখেছেন? সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ওই ব্যক্তি হলেন, সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম। তখন সে বললো, তিনিতো সেই ব্যক্তি যিনি আমাদের অনেক ক্ষতি করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এরপর আমি তাদের উভয়কে বন্দি করে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন হঠাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাকে (উমাইয়া ইবনে খাল্ফ্কে) আমার সাথে দেখলেন। আর এ ছিলো সেই ব্যক্তি যে সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করার জন্য বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো। নাঊযুবিল্লাহ! উনাকে মরুভূমিতে নিয়ে যেত এবং তপ্ত বালুর উপর শুইয়ে বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে রেখে বলতো, আপনি এ অবস্থায় থাকবেন অথবা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দ্বীন ত্যাগ করবেন। নাঊযুবিল্লাহ! এ সময় সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আহাদ আহাদ বলতেন। যখন সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উমাইয়া ইবনে খাল্ফ্কে দেখলেন, তখন তিনি বললেন- এইতো কুফরীর মূল হোতা উমাইয়া ইবনে খাল্ফ্। এ হলো আমাদের চিরশত্রু কাট্টা কাফির। তাকে কতল করুন। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি বললাম- হে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি আমার বন্দিদ্বয় সম্পর্কে একটু ধৈর্য ধরুন। তখন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এতো কুফরীর মূল হোতা। সে কঠিন সাজা পাওয়ার উপযুক্ত। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এরপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তাদের দু’জনকে ঘিরে ফেললেন। আমি উমাইয়া ইবনে খাল্ফ্কে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম। ইতোমধ্যে একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার তরবারি বের করে উমাইয়ার ছেলের পায়ে আঘাত করলেন, এতে সে পড়ে গেলো। তা দেখে উমাইয়া ইবনে খাল্ফ্ এমন জোরে চিৎকার দিলো যে, আমি এমন চিৎকার আর কখনো শুনিনি। আমি বললাম, উমাইয়া! তুমি নিজের চিন্তা করো, তোমার আজ নিস্তার নেই। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারবো না। অবশেষে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তাদের উভয়কে তরবারির আঘাতে টুকরো টুকরো করে ফেললেন। পরে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলতেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর রহমত করুন”। আমি বর্ম ফেলে দিয়ে যাকে গ্রেফতার করেছিলাম, সেই কাফিরকে সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হত্যা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আওয়াফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সীরাত ইবনে হিশাম, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক্ব, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৪)
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (২)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৯)
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)