ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ (পর্ব-৪২)
, ২৫ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১২ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ১১ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ২৬ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
পূর্ব প্রকাশিতের পর
তাফসীরে বদর জিহাদে আবু জেহেলের হত্যা সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, হযরত মুফাসসিরীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বর্ণনা করেন, যখন পবিত্র সূরা “আর রহমান শরীফ” নাযিল হলো, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে ইরশাদ মুবারক করলেন, “হে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আপনাদের মধ্যে এমন কে আছেন যে, এই পবিত্র সূরা শরীফ পবিত্র কা’বা শরীফে গিয়ে তিলাওয়াত করে আসতে পারবেন”? বিশিষ্ট ছাহাবী ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তিলাওয়াত করতে পারবো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ঠিক আছে তাহলে তিলাওয়াত করে আসুন। তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার মধ্যে গিয়ে তিলাওয়াত করতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ! উনার পবিত্র তিলাওয়াত শুনে জাহান্নামের কীট আবু জেহেল এসে উনার কান মুবারকে এতজোরে আঘাত করেছিলো যে, এতে পরবর্তীতে তিনি উনার এক কান মুবারকে শুনার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। নাউযুবিল্লাহ!
ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাঁদতে কাঁদতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হলেন। ঠিক এই সময়ে অন্যদিক থেকে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনিও হাসতে হাসতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে হাযির হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- “হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাঁদছেন আর আপনি হাসছেন, কি কারণ”? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এর জবাব পরে দিবো”। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি অন্যান্য বিষয় আলোচনা মুবারক করে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে হিজরত মুবারক করে পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। দ্বিতীয় হিজরীতে ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ সংঘটিত হলো। এই সম্মানিত জিহাদে মক্কার কাফির-মুশরিকরা চরমভাবে পরাজিত হয়। কুরাইশ কাফিরদের ৭০ জন নিহত ও ৭০ জন বন্দি হয়। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার ১৪ জন কাফির নেতার মধ্যে ১১ জন নেতাই নিহত হয়। উল্লেখ্য যে, উক্ত ১৪ জন কাফির নেতার মধ্যে কাট্টা কাফির আবু জেহেল বড় পালওয়ান ছিলো। সে এক হাজার যোদ্ধার সমপরিমাণ শক্তি রাখতো। অথচ বদর জিহাদে দু’জন কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনারা তাকে ধরাশায়ী করেছিলেন।
এই জিহাদে ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও ছিলেন। জিহাদের শেষে ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার একটা আরজু রয়েছে”। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “কি আরজু”? তিনি বললেন, “আমি সরাসরি কোনো কাফিরকে হত্যা করতে পারিনি। তাই দয়া করে যদি আমাকে অনুমতি দিতেন, তাহলে আমি জিহাদের ময়দান একটু ঘুরে আসতাম। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিহাদের ময়দান ঘুরে দেখতে লাগলেন। এক পর্যায়ে তিনি ময়দানের এক প্রান্তে আবু জেহেলকে দেখতে পেলেন যে, সে মাটিতে পড়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
তিনি বলেন, “যখন আমি আবু জেহেলের সামনে গেলাম সে আমাকে চিনতে পারলো”। তখন আবু জেহেল আমাকে দেখে বললো, “আপনি কি আমার গর্দানটা কাটার জন্য এসেছেন”? ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “তুমি ঠিকই বলেছো, আমি তোমাকে হত্যা করার জন্যই এসেছি”। আবু জেহেল ছিল চরম বেয়াদব। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবচেয়ে বড় দুশমন। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু। সে তার মৃত্যুর সময় ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললো, “আপনি আমার গর্দানটা কাটার সময় একটু বড় করে কাটবেন। যেন লোকজন বুঝতে পারে যে, এটা আবু জেহেলের মাথা”। নাউযুবিল্লাহ!
এরপর তিনি বিলম্ব না করে আবু জেহেলের গর্দানটা কেটে ফেললেন। আবু জেহেলের মাথাটা ছিলো অনেক বড়। মাথাটা বেশি বড় ও ওজন হওয়ার কারণে উঠিয়ে নেয়া কষ্টকর ছিলো। মানুষ যেমন বাজার থেকে বড় মাছ নিয়ে আসার সময় মাছের কানের ভিতর রশি প্রবেশ করিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে যায়, অনুরূপভাবে তিনি আবু জেহেলের এক কান দিয়ে রশি ঢুকিয়ে তরবারী দিয়ে খোঁচা দিয়ে অপর কানের ছিদ্র দিয়ে বের করে মাথাটা ঝুলিয়ে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে নিয়ে এসে বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু আবু জেহেলের গর্দানটা কেটে নিয়ে এসেছি”।
ঠিক সেই মুহূর্তে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হাসতে হাসতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আজকে মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার উসীলা মুবারকে কানের বদলে কান দিয়েছেন; সাথে সাথে অতিরিক্ত মাথাটাও দিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি আজ এই জিহাদে ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উনার একটা কান মুবারক উনার বদলে দুইটি কান ও অতিরিক্ত একটা মাথাও দিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! (প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহ)
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বীরত্ব মুবারক (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬২)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ উনার ময়দানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ একজন অপরজনকে প্রাধান্য দেয়ার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)