ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ (পর্ব-৪১)
, ১৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ২০ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) আইন ও জিহাদ
পূর্ব প্রকাশিতের পর
সম্মানিত বদর জিহাদে হযরত উকাশা ইবনে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঘটনা ও ফযীলত:
বিশিষ্ট বদরী ছাহাবী হযরত উকাশা ইবনে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন সম্মানিত বদরী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! উনার ডাক নাম মুবারক হলেন আবূ মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। হযরত উকাশা ইবনে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হিজরতের পূর্বেই পবিত্র মক্কা শরীফে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হিজরতকারী অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সঙ্গে তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ ছেড়ে হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফে চলে যান। তিনি হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফে আসার পর নাখলার জিহাদে মুবারক অংশ গ্রহন করেন। এরপর বদর জিহাদে হযরত উকাশা ইবনে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অংশগ্রহণ করেন। সম্মানিত বদর প্রান্তে জিহাদ করতে করতে উনার হাতের তরবারিখানা ভেঙ্গে যায়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উকাশা ইবনে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে একটি খেজুরের ডাল প্রদান করেন এটি তরবারি হয়ে যায়। হযরত উকাশা ইবনে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আজীবন এই তরবারি দ্বারা জিহাদ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! নিম্নে এ সম্পর্কে দলীল আদিল্লাহসহ বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো-
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه وقاتل حضرت عكاشة ابن محصن بن حرثان الأسدي رضى الله تعالى عنه يوم بدر بسيفه حتى انقطع في يده فأتى رسول الله صلى الله عليه وسلم فأعطاه جذلا من حطب فقال قاتل بهذا يا حضرت عكاشة رضى الله تعالى عنه فلما أخذه من رسول الله صلى الله عليه وسلم هزه فعاد سيفا في يده طويل القامة شديد المتن أبيض الحديدة فقاتل به حتى فتح الله تعالى على المسلمين وكان ذلك السيف يسمى العون ثم لم يزل عنده يشهد به المشاهد مع رسول الله صلى الله عليه وسلم .
অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত উকাশা ইবনে মিহছান ইবনে হিরছান আল আসাদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বদর জিহাদের দিন জিহাদ মুবারক করতে করতে উনার হাতের তরবারিখানা ভেঙ্গে যায়। তখন হযরত উকাশা ইবনে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে চলে আসলেন এবং উনার খিদমত মুবারকে পেশ করলেন যে, জিহাদ করতে করতে উনার হাতের তরবারিখানা ভেঙ্গে যায়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উহা শুনে, হযরত উকাশা ইবনে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে একটি খেজুরের ডাল প্রদান করে ইরশাদ মুবারক করলেন, “হে হযরত উকাশা ইবনে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি যান এটি দিয়ে জিহাদ করুন। অতঃপর তিনি সেই খেজুরের ডালটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুল মাগফিরাত মুবারক থেকে (হাত মুবারক) নিয়ে যেই নাড়া (ঝাঁকি) দিলেন অমনি তা উনার হাতে একটি চকচকে ধারালো মজবুত লম্বা তরবারিতে পরিণত হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! উনাদের পরিপূর্ণ বিজয় না হওয়া পর্যন্ত হযরত উকাশা ইবনে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেই তরবারি মুবারক দিয়ে জিহাদ করতে থাকলেন। সুবহানাল্লাহ! এই তরবারি দিয়ে হযরত উকাশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সম্মানিত (উহুদ জিহাদ, খন্দক জিহাদসহ) বহু জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আর ঐ তরবারি মুবারকের নাম ছিল “আল আঊন”। (তাফসীরে মাযহারী, দালায়িলুন নুবুওয়াহ, আর রহীকুল মাখতূম, আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, সীরাত ইবনে হিশাম)
হযরত উকাশা ইবনে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে দোয়া মুবারক ও সুসংবাদ মুবারক পেয়েছেন যে, আমার উম্মত থেকে সত্তর হাজার লোক ক্বিয়ামতের দিন সম্মানিত জান্নাতে প্রবেশ করবেন উনাদের থেকে হযরত উকাশা ইবনে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও একজন। সুবহানাল্লাহ্্!
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قَالَ حَضْرَتْ عُكاشَةُ بْنُ مِحْصَنٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ لَمَّا أَخْبَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَنَّ مِنْ أُمَّتِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبْعِيْنَ أَلْفاً يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ وَلَاعَذَابٌ. وَفِىْ رِوَايَةٍ فَقَامَ حَضْرَتْ عُكاشَةُ بْنُ مِحْصَنٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فَقَالَ: اُدْعُ اللهَ أَنْ يَجْعَلَنِيْ مِنْهُمْ. فَقَالَ: ্রأَنْتَ مِنْهُمْগ্ধ ثُمّ قَامَ رَجُلٌ آخَرُ فَقَالَ: اُدْعُ اللهَ أَنْ يَّجْعَلَنِيْ مِنْهُمْ. فَقَالَ: ্রسَبَقَكَ بِهَا حَضْرَتْ عُكاشَةُ بْنُ مِحْصَنٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ গ্ধ.
অর্থ: “হযরত উকাশা ইবনে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেই বর্ণনা করেন, (বদর জিহাদের দিন) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সুসংবাদ মুবারক জানিয়ে দিলেন যে, “আমার উম্মত থেকে সত্তর হাজার লোক ক্বিয়ামতের দিন বিনা হিসেবে সম্মানিত জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তখন হযরত উকাশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি দুয়া মুবারক করুন মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাকেও উনাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি উনাদের মধ্যে একজন। অথবা তিনি দুয়া মুবারক করেছেন, আয় বারে ইলাহী! আপনি হযরত উকাশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এ সমস্ত নূরানীময় চেহারা বিশিষ্ট জান্নাতী ব্যক্তিগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। এ কথা শুনে জনৈক আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আমার জন্যেও মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দুয়া মুবারক করুন তিনি যেন আমাকেও উনাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “আপনার আগে হযরত উকাশা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি এ সম্মান হাছিল করেছেন এবং উনার জন্য প্রথম দুয়া মুবারক করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
আর একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আরবের শ্রেষ্ঠ ঘোড়া সাওয়ারী যোদ্ধা আমাদের কাছে রয়েছেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেই লোকটি কে? তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “তিনি হলেন, হযরত উকাশা ইবনে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সুবহানাল্লাহ! এ সময় হযরত উকাশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সগোত্রীয় ছাহাবী হযরত দ্বিয়ার ইবনে আযওয়ার আসাদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই ব্যক্তিতো আমাদের গোত্রের লোক। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “মৈত্রী সূত্রে তিনি আমাদের লোক। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসনাদুল বাযযার, আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারানী, সুনানুদ দারিমী, ফায়দ্বুল বারী, সীরাত ইবনে হিশাম)
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)