ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ (পর্ব-৩১)
, ২১ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১০ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ০৯ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ২৫ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
(সম্মানিত বদর জিহাদ মূলত: খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্ পাক উনার খাছ গায়েবী মদদের ঘটনা। যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অনুযায়ী চলেন, খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্ পাক উনার উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল করেন, উনারাই গায়েবী মদদের অধিকারী হন। আর যারা সন্ত্রাসী হামলা চালায় ও সন্ত্রাসবাদ লালন করে তারা মুরতাদ ও জাহান্নামী। সন্ত্রাসীদের উপর খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্ পাক উনার লা’নত। সন্ত্রাসী আর মুজাহিদ কখনও এক নয়। সন্ত্রাসী হামলা আর জিহাদ কখনও এক নয়।)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
হযরত আবূ নাঈম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, হযরত সাহল ইবনে হানীফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন; “বদরের জিহাদে আমাদের কিছু লোক তরবারী নিক্ষেপের আগেই দেখতে পাচ্ছিলেন মুশরিকরা ধরাশায়ী হয়ে পড়েছে।” সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, হযরত রবী বিন আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, “মুশরিকদের ঘাড়ে এবং তাদের হাত ও পায়ের আঙ্গুলের জোড়া গুলোতে পোড়া দাগ দেখেই বোঝা যেতো তাকে অন্য কেউ হত্যা করেছেন।
হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, হযরত হুয়াইতাব বিন আব্দুল উজ্জাহ্্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন; “বদরের জিহাদে প্রেরিত ফেরেশতারা অনেক কুরাইশ মুশরিককে হত্যা করেছেন এবং অনেককে বন্দীও করেছেন। আমি স্বচক্ষে এ রকম ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি।
হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বর্ণনা করেছেন, হযরত আবূ বুরদা বিন দীনার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, “আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন তিনটি মাথা নিয়ে উপস্থিত হয়ে বললাম, “ইয়া রসূলাল্লাহ্্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই তিন জনের মধ্যে আমি দু’জনকে হত্যা করে তাদের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করেছি। আর আরেক জনকে হত্যা করেছেন সাদা বর্ণের একজন লম্বা ব্যক্তি। আমি উনাকে চিনতে পারি নাই।” তখন তিনি উক্ত ঘটনা শুনে ইরশাদ মুবারক করলেন, “তিনি ছিলেন একজন ফেরেশতা।” সুবহানাল্লাহ!
তাফসীরে মাযহারী কিতাবে আরো উল্লেখ আছে, হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন; বদর জিহাদের দিন কুরাইশ কাফিরদের কারো কারো মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল কিন্তু কেউ বুঝতে পারছিলেন না কারা এ রকম করেছেন। শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল কারো কারো হাত। অথচ কেউ অনুমান করতে পারছিলেন না, কেন এ রকম হচ্ছে। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, হযরত আবূ ওয়াক্বেদ লাইছি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন; বদর জিহাদের দিন আমি এক মুশরিককে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলাম, কিন্তু আমি আঘাত করার পূর্বেই দেখলাম মাটিতে লুটিয়ে পড়লো তার ছিন্ন মস্তক। আমি বুঝতে পারলাম না, কে এ রকম করলেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, হযরত খারেজা বিন ইবরাহীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন; বদর জিহাদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, “হে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম! আপনি জিহাদের ময়দানে ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে ‘আক্বদিম হাইজূম’ সামনে চলুন! সামনে চলুন! কাদেরকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন? হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বদর জিহাদ উনার দিন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাহায্যে আগমনকারী ঐ সকল ফেরেশতাদেরকে লক্ষ্য করে বলেছিলাম। যাদেরকে আমিও আর কখনো দেখিনি।” সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে উল্লেখ আছে, “হযরত আবূ রাফে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (যিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযাদকৃত গোলাম ছিলেন) তিনি বলেন, আমি হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার গোলাম ছিলাম। ভিতরে ভিতরে আমার মনিব হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম ও উনার সম্মানিতা আহলিয়া (স্ত্রী) হযরত উম্মুল ফযল আলাইহাস সালাম এবং আমিও মুসলমান হয়ে গিয়েছিলাম। সম্মানিত ঈমানকে প্রকাশ করি নাই। তাই কুরাইশদের কাফিলায় যোগ দিয়ে হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনাকে যেতে হয়েছিল বদর জিহাদে। জিহাদে বন্দী হয়ে হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনাকে যেতে হয়েছিল পবিত্র মদীনা শরীফে। আবূ লাহাব বদর জিহাদে যায়নি। সে ছিল পবিত্র মক্কা শরীফে। আমি ছিলাম অসহায় এক গোলাম। আমি তীর তৈরী করতাম। সে দিনও আমি জমজম কূপের পাশে বসে তীর তৈরী করছিলাম। পাশেই হযরত উম্মুল ফযল আলাইহাস সালাম তিনি অবস্থান করছিলেন। কিছুক্ষণ পর আবূ লাহাব আসলো, আরো অনেকেই আসলো সেখানে। একজন বলে উঠলো, ঐ আসছেন হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও ঈমান প্রকাশ করেননি)। আবূ লাহাব বললো; আমার কাছে আসতে বলো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ জানা যাবে উনার কাছ থেকে। লোকেরা বললো কি খবর? হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! মুসলমান উনাদের সঙ্গে আমাদের ঘোরতর যুদ্ধ হয়েছে। আমরা লাঞ্ছিত ও পরাজিত হয়েছি। আমাদের অনেককে হত্যা ও বন্দী করেছেন উনারা। কিন্তু এটা কোন বড় ব্যাপার নয়।
আমরা অবাক হয়েছি অনেক অলৈাকিক ঘটনা দেখে। সেখানে আমরা দেখেছি সাদা-কালো রংয়ের ঘোড়ার উপর আরেহণকারী কিছু সাদা লোক! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! উনারা মানুষ নন। উনাদের মোকাবিলা করার সাধ্য কারো নেই। একথা শুনে আমি হঠাৎ বলে উঠলাম, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! উনারা ছিলেন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! আবূ লাহাব রেগে, আমাকে আঘাত করলো। হযরত উম্মুল ফযল আলাইহাস সালাম তিনি একটি লাঠি নিয়ে এসে আবূ লাহাবের মাথায় সজোরে আঘাত করে বললেন, এর মনিব কাছে নেই বলে তুমি দুর্বল ভেবেছো। তার মাথা ফেটে গিয়েছিলো। সেখান থেকে সে পালিয়ে গেল। এর ৭ দিন পর শরীরে পচন ধরে তার মৃত্যু হয়।
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)