ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ (পর্ব-১৫)
, ১১ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০২ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ০১ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ১৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) আইন ও জিহাদ
পূর্ব প্রকাশিতের পর-
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুসলিম মুজাহিদ বাহিনী উনাদের অবস্থান মুবারকের জন্য এমন একটি স্থান মুবারক বেছে নেন, যেখানে সূর্যোদয়ের পর সম্মানিত জিহাদ মুবারক শুরু হলে কোন মুজাহিদের চোখে সূর্যের আলো পড়বে না। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুজাহিদ বাহিনীকে কাতারবন্দি করে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করালেন। একটি ছোট তীর নূরুল মাগফিরাত মুবারকে (হাত মুবারক) নিয়ে তিনি মুসলিম বাহিনীকে সোজা করে দিলেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা এভাবে প্রত্যেককেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যান। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যারা বর্ম পরিহিত রয়েছেন আপনারা সামনে আসেন। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মুছয়া’ব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে জিহাদের পতাকা মুবারক তুলে দিলেন। হযরত মুছয়া’ব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অগ্রসর হয়ে নির্দেশিত স্থানে পতাকা মুবারক স্থাপন করলেন। ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানের দক্ষিণভাগে কুরাইশ কাফির মুশরিকরা অবস্থান নিলো। আর সম্মানিত মুসলিম বাহিনী উত্তরে অবস্থান মুবারক গ্রহণ করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গম্ভীরভাবে উচ্চ আওয়াজ মুবারকে মহান আল্লাহ্্ পাক উনার প্রশংসা মুবারক এবং উনার পবিত্রতা মুবারক বর্ণনা করলেন। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুজাহিদ কাফিলা উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, “হে সম্মানিত মুজাহিদ কাফিলা! আপনারা মনে রাখবেন, মহান আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি মুবারক অর্জন করাই আমাদের মূল মকছূদ বা উদ্দেশ্য।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরও ইরশাদ মুবারক করেন- “হে সম্মানিত মুসলিম কাফিলা! যে নির্দেশ মুবারক আমি মহান আল্লাহ্ পাক উনার পক্ষ থেকে পেয়েছি, সেই নির্দেশ মুবারকই আমি আপনাদেরকে দিয়েছি। জিহাদ মুবারক উনার ক্ষেত্রে ছবরের প্রয়োজন, ধৈর্যের প্রয়োজন এবং দৃঢ়তার প্রয়োজন। যদি আপনরা ছবর ইখতিয়ার করেন, ধৈর্য্য ধারণ করেন, ধৈর্য্যশীল ও সুদৃঢ় হন, তাহলে খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক তিনি অবশ্যই আপনাদেরকে বিপদমুক্ত করবেন। অপরদিকে কুরাইশ কাফির মুশরিকরাও সম্পূর্ণ প্রস্তুত। হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও ঈমান প্রকাশ করেননি) তিনি ছিলেন বনী কেনানার এক প্রভাবশালী সরদার। হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছূরত ধারণ করে স্বয়ং ইবলিস শয়তান উপস্থিত হলো কুরাইশদের মধ্যে। ইবলিস শয়তান কুরাইশ কাফির মুশরিকদের কার্যাবলীগুলোকে তাদের দৃষ্টিতে সৌন্দর্যময় করেছিলো এবং বলেছিলো, “হে কুরাইশরা আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। আর আমি তোমাদের পাশেই থাকবো।” এ কথার অর্থ হলো, “ইবলিস শয়তান কুরাইশ কাফির মুশরিকদেরকে উদ্দেশ্য করে বুঝিয়েছিল, হে কুরাইশরা! তোমরাই সঠিক পথে রয়েছো। নাঊযুবিল্লাহ্্! কারণ, তোমরা তোমাদের বাপদাদার ধর্মের একনিষ্ঠ অনুসারী। সুতরাং “ইবলিস শয়তানের এই প্রতারনাপূর্ণ কথাই কুরাইশদের এবং তাদের নেতাদের মনে দৃঢ়বদ্ধ হয়েছিলো। তাই আবূ জেহেল ইবলিসের ধোঁকায় প্রতারিত হয়ে দৃঢ়তার সাথে প্রার্থনা জানিয়েছিলো, আয় মহান আল্লাহ্ পাক! যুদ্ধরত দু’টি কাফিলার মধ্যে যারা সঠিক পথে রয়েছেন, তাদেরকে আপনি বিজয় দান করুন। আর ধ্বংস করে দিন পথভ্রষ্টদেরকে। ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানে হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূরত ধারণ করে ইবলিস শয়তান বলেছিল, “হে কুরাইশরা! তোমাদের উপর বিজয়ী হবে এমন কেউ নেই। আর আমিও তোমাদের সাহায্যকারী হিসেবে তোমাদের সাথে থাকবো।” কিন্তু সম্মানিত জিহাদ মুবারক শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইবলিস শয়তান উর্ধ্বশ্বাসে পলায়ন করলো। এরপর পরবর্তী আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সে কথাই বলে দেয়া হয়েছে এভাবে যে, “এরপর দু’টি কাফিলা যখন পরস্পরের মুখোমুখী হলো, তখন ইবলিস শয়তান সম্মানিত বদর ময়দান থেকে সরে পড়লো। ইবলিস শয়তান বললো, হে কুরাইশরা তোমাদের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই। কারণ তোমরা যা দেখতে পাও না, আমি তা দেখি। আমি মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে ভয় করি। আর মহান আল্লাহ্ পাক তিনি শাস্তিদানে কঠোর।”
হযরত রেফায়া ইবনে রাফে’ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তবারানী শরীফে এবং হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের থেকে হযরত ইবনে জারির রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইবনে মারদুবিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বর্ণনা করেছেন, মহান আল্লাহ্্ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে উনার গোলামী মুবারকের আঞ্জাম দেয়ার জন্য এক হাজার ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদের মধ্যে পাঠিয়েছেন। ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদের ময়দানের একপ্রান্তে হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম তিনি পাঁচশত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিয়ে অবস্থান মুবারক করেছিলেন। আর ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদের অপর প্রান্তে হযরত মিকাইল আলাইহিস সালাম তিনি পাঁচশত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিয়ে অবস্থান মুবারক করেছিলেন। অপরপক্ষে ইবলিস শয়তান ও তার দলবলও নিশান নিয়ে বনী মাদলাসের পিছনে হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও ঈমান প্রকাশ করেননি) উনার সূরত ধারণ করে দাঁড়িয়েছিল ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ উনার ময়দানে। অন্যান্য শয়তানেরাও ইবলিস শয়তানের সঙ্গে ছিল। ইবলিস শয়তান কুরাইশ কাফির মুশরিকদেরকে উদ্দেশ্য করে বললো-
لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَّكُمْ
“আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। আর আমি তোমাদেরকে সাহায্য করার জন্য তোমাদের পাশেই থাকবো।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৪৮)
হঠাৎ ইবলিস শয়তানের নজর পড়লো হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম উনার দিকে। জনৈক কুরাইশ মুশরিকের হাত ধরে ইবলিস শয়তান কথা বলছিলো। হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম উনাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে সে তার হাত ছেড়ে দিয়ে পালাতে শুরু করলো। এক কুরাইশ মুশরিক পলায়নরত ইবলিস শয়তানকে উদ্দেশ্য করে বললো, কি ব্যাপার সূরাকা! “পালাচ্ছো কেন? তুমি তো বললে আজ আমাদের উপর কেউ বিজয়ী হতে পারবে না।” তখন ইবলিস শয়তান বললো, “তোমাদের সঙ্গে আমার আর কোন সম্পর্ক থাকলো না। তোমরা যা দেখতে পাও না, আমি তা দেখি। আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করি।” ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদের ময়দানে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে দেখেই ইবলিস শয়তান পলায়ন করেছিল।
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)