ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ (পর্ব-১৪)
, ১০ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০১ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ৩১ মে, ২০২৩ খ্রি:, ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
পূর্ব প্রকাশিতের পর
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১৭ই রমাদ্বান পবিত্র জুমুয়া’র দিন সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনাদেরকে নিয়ে ভোর বেলায় সম্মানিত জিহাদের ময়দানে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। সর্বপ্রথম ঘোড়া ছুটিয়ে অগ্রসর হলো জাময়া ইবনে আসওয়াছ এবং তার পুত্র তার পিছনে বসে ছিল। পিতা-পুত্র উভয়েই ঘোড়ায় চড়ে একটি চক্কর দিল। তারা উপযুক্ত অবস্থান খুঁজছিলো। মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা দেখে ইরশাদ মুবারক করলেন, “এরা কুরাইশ। এরা অহংকারী এবং উদ্ধত। আয় খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক! এরা আপনার এবং আপনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বিরোধিতা করছে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অস্বীকার করছে। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে এরা যুদ্ধ করতে চায়। আয় মহান আল্লাহ্্ পাক! আপনি আমার সঙ্গে যে বিজয়ের ওয়াদা মুবারক করেছেন আজ সেই বিজয় মুরারক আমাদেরকে দান করুন এবং শত্রুদেরকে ধ্বংস করে দিন।
যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদের দিন সকালবেলা কুরাইশ কাফির মুশরিক বাহিনী তাদের অবস্থান থেকে অহংকার এবং দাম্ভিকতার সাথে ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানে চলে আসলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা দেখে দোয়া মুবারক করলেন-
"اللهُمَّ هَذِهِ قُرَيْشٌ قَدْ أَقْبَلَتْ بِخُيَلَائِهَا وَفَخْرِهَا تُحَادُّكَ وَتُكَذِّبُ رَسُولَكَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، اللهُمَّ فَنَصْرَكُ الَّذِي وَعَدْتَنِي " اللهم أحنهم الغداة.
অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ্্ পাক! এরা কুরাইশ। এরা অহংকারী এবং উদ্ধত। এরা আপনার এবং আপনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করছে। এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অস্বীকার করছে। এখন তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চায়। আয় মহান আল্লাহ্্ পাক! আপনি আমার সঙ্গে যে বিজয়ের ওয়াদা মুবারক করেছেন আজ সেই বিজয় মুবারক আমাদেরকে দান করুন। আয় মহান আল্লাহ্্ পাক! আপনি আজ সকালেই ওদেরকে ধ্বংস করে দিন। ”
কুরাইশ কাফির মুশরিকদের একটি দল সামনে অগ্রসর হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তৈরি হাউজ মুবারক থেকে পানি নিতে আসলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বললেন, আপনারা তাদেরকে বাধা দিবেন না। বরং আপনারা তাদেরকে পানি পান করতে দিন। পরিশেষে দেখা গেলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তৈরি হাউজ মুবারক থেকে যতগুলো কুরাইশ কাফির মুশরিক পানি পান করেছে, তারা সকলেই ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানে নিহত হয়েছে। ” সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর কুরাইশ কাফির মুশরিকদের থেকে এক দুষ্ট প্রকৃতির লোক তাদের কাফিলা থেকে বের হয়ে ক্বসম করে বললো, আমি অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তৈরি হাউজ মুবারক থেকে পানি পান করবো। কিন্তু পরিশেষে দেখা গেলো সেও ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানে হাউজের মধ্যেই নিহত হলো। যেমন এ প্রসঙ্গে সীরাত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ আছে-
قَالَ ابْنُ إسْحَاقَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ: وَقَدْ خَرَجَ الْأَسْوَدُ بْنُ عَبْدِ الْأَسَدِ الْمَخْزُومِيّ، وَكَانَ رَجُلًا شَرِسًا سَيّئَ الْخُلُقِ فَقَالَ أُعَاهِدُ اللهَ لَأَشْرَبَنَّ مِنْ حَوْضِهِمْ أَوْ لَأَهْدِمَنَّهُ أَوْ لَأَمُوتَنَّ دُونَهُ فَلَمّا خَرَجَ خَرَجَ إلَيْهِ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ حَمْزَةُ بْنُ عَبْدِ الْمُطّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ، فَلَمّا اِلْتَقَيَا ضَرَبَهُ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ حَمْزَةُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَأَطَنّ قَدَمَهُ بِنِصْفِ سَاقِهِ وَهُوَ دُونَ الْحَوْضِ فَوَقَعَ عَلَى ظَهْرِهِ تَشْخَبُ رِجْلُهُ دَمًا نَحْوَ أَصْحَابِهِ ثُمّ حَبَا إلَى الْحَوْضِ حَتّى اقْتَحَمَ فِيهِ يُرِيدُ (زَعَمَ) أَنْ يَبَرّ يَمِيْنَهُ وَأَتْبَعَهُ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ حَمْزَةُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَضَرَبَهُ حَتّى قَتَلَهُ فِي الْحَوْضِ .
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আসওয়াদ ইবনে আব্দুল আসাদ মাখযূমী কুরাইশ বংশের এক দুষ্ট প্রকৃতির লোক ছিল। সে তাদের কাফিলা থেকে বের হয়ে ক্বসম করে বললো, আমি অবশ্যই সম্মানিত মুজাহিদ কাফিলা উনাদের হাউজ থেকে পানি পান করবো অথবা উক্ত হাউজ ভেঙ্গে ফেলবো অথবা প্রয়োজন হলে এর জন্য মারাও যাবো। নাউযুবিল্লাহ! এই বলে সে যখন হাউজের দিকে আসলো তখন সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি তার দিকে এগিয়ে গেলেন। এবং যখন তার মুখোমুখি হলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি তরবারী দিয়ে তার পায়ে আঘাত করলেন। এতে তার পা কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। এ সময় সে হাউজের কাছেই ছিল। সে চিৎ হয়ে পড়ে গেল এবং তার পা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। এরপর সে হামাগুড়ি দিয়ে হাউজের দিকে এগিয়ে গেল এবং নিজের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য হাউজের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি তার পশ্চাদ্ধাবন করে তাকে আঘাত করলেন অতঃপর হাউজের মধ্যেই তাকে হত্যা করলেন। সুবহানাল্লাহ! (সীরাত ইবনে হিশাম ২য় জিল্দ, পৃষ্ঠা ২৮০-২৮১, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিল্দ, পৃষ্ঠা-৩২৮, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, আল কামিলু ফিত্ তারিখ, তারিখুল ইসলাম, ইমাম যাহাবী)
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উদ্দেশ্যে নছীহত মুবারক করলেন, “নিদের্শনা মুবারক না পাওয়া পর্যন্ত আপনারা পবিত্র জিহাদ মুবারক শুরু করবেন না। শত্রুরা অগ্রসর হতে শুরু করলে আপনারাও তীর নিক্ষেপ শুরু করবেন। তীর শেষ না হয় এই পরিমাণ তীর নিক্ষেপ করবেন। আর যখন তারা আপনাদের একেবারে কাছাকাছি এসে পড়বে, তখন আপনারা তরবারীর মাধ্যমে পবিত্র জিহাদ মুবারক শুরু করবেন। আপনারা মনে রাখবেন; মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক, রেযামন্দি মুবারক অর্জন করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্যে। পবিত্র জিহাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন ছবর, ধৈর্য্য ও দৃঢ়চিত্ততা। যদি আপনারা ছবর ইখতিয়ার করেন, ধৈর্য্য ধারণ করেন, দৃঢ়চিত্ত হন তাহলে আপনারাই কামিয়াবী হাছিল করবেন। ” সুবহানাল্লাহ্্! অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উদ্দেশ্যে আরো নছীহত মুবারক করলেন, “বনী হাশিম উনাদেরকে জোর করে যুদ্ধে আনা হয়েছে। উনাদের সাথে আমাদের কোনো জিহাদ নয়। অতএব, উনাদের মধ্যে কেউ আপনাদের সামনে পড়ে গেলে উনাদেরকে যেন কেউ আঘাত না করেন। খাতিমুল মুহাজিরীন, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনাকে দেখলে কেউ উনাকে শহীদ করবেন না। কেননা উনারা আমাদেরকে পবিত্র মক্কা শরীফে কষ্ট দেন নাই। বরং উনারা আমাদেরকে সব দিক থেকে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। আমাদের খিদমত মুবারকের আঞ্জাম মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৭)
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৫)
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৬)
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
২৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৪)
২৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৫)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৪)
১৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৩)
১৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (২৩)
১২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরীমূলক কাজের ফিরিস্তি (৩)
১০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (২)
০৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)