ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ (পর্ব-১২)
, ০৩ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৪ ছানী ‘আশার, ১৩৯০ শামসী সন , ২৪ মে, ২০২৩ খ্রি:, ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
পূর্ব প্রকাশিতের পর
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এবং উতবা ইবনে রবীয়াহ্ এর প্রচেষ্টা-
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও ঈমান প্রকাশ করেননি) তিনি যখন এরূপ পরিস্থিতির কথা শুনলেন, তখন তিনি উতবা ইবনে রবীয়াহ্’র নিকট গেলেন। হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উতবা ইবনে রবীয়াহ্কে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আবুল ওয়ালীদ! তুমি কুরাইশদের নেতা এবং আমাদের সকলের শ্রেষ্ঠ। তুমি কি প্রত্যাশা করো যে, তোমাদের সুনাম অক্ষুণœ থাক? তুমি কি সকলকে স্বীয় মিত্র আমর ইবনে হাযরামীর খুনের বদলা গ্রহণ থেকে বিরত করতে পারো না? পারো না কি এ যুদ্ধ বন্ধ করতে? উতবা ইবনে রবীয়াহ্ এতে সম্মতি জ্ঞাপন করে এবং সে কুরাইশদেরকে লক্ষ্য করে এই বলে বক্তব্য পেশ করে, “হে কুরাইশগণ! আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে যুদ্ধ করার কোনো সার্থকতা দেখতে পাচ্ছি না। যদি ধরেও নেয়া হয় যে, তোমাদেরই বিজয় হয়েছে, তা হলেও তা কিসের বিজয়? আমরা দেখতে পাবো যে, কারো চাচাতো ভাই, কারো মামাতো ভাই আমাদেরই হস্তে মৃত্যুবরণ করে রণ-ভূমিতে পড়ে আছে। এ ধরনের বিজয়কার মনঃপূত হতে পারে? এবং কার আনন্দ বয়ে নিয়ে আসবে?”
فَلَمَّا سَمِعَ حَكِيمُ بْنُ حِزَامٍ ذَلِكَ مَشَى فِي النَّاسِ، فَأَتَى عُتْبَةَ بْنَ رَبِيعَةَ فَقَالَ: يَا أَبَا الْوَلِيدِ إِنَّكَ كَبِيرُ قُرَيْش وسيدها المطاع فِيهَا، هَلْ لَكَ إِلَى أَنْ لَا تَزَالَ تُذْكَرُ فِيهَا بِخَيْرٍ إِلَى آخِرِ الدَّهْرِ؟ قَالَ: وَمَا ذَلِك يَا حَكِيمُ؟ قَالَ: تَرْجِعُ بِالنَّاسِ وَتَحْمِلُ أَمْرَ حليفك عَمْرو ابْن الْحَضْرَمِيِّ. قَالَ: قَدْ فَعَلْتُ، أَنْتَ عَلَيَّ بِذَلِكَ، إِنَّمَا هُوَ حَلِيفِي فَعَلَيَّ عَقْلُهُ وَمَا أُصِيبَ مِنْ مَالِهِ.فَأْتِ ابْنَ الْحَنْظَلِيَّةِ، يَعْنِي أَبَا جَهْلٍ، فَإِنِّي لَا أَخْشَى أَنْ يَشْجُرَ (১) أَمْرَ النَّاس غَيره.ثمَّ قَالَ عُتْبَةُ خَطِيبًا فَقَالَ: يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ إِنَّكُمْ وَاللَّهِ مَا تَصْنَعُونَ بِأَنْ تَلْقَوْا حَضْرَتْ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ وَأَصْحَابَهُ شَيْئًا، وَاللَّهِ لَئِنْ أَصَبْتُمُوهُ لَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَنْظُرُ إِلَى وَجْهِ رَجُلٍ يَكْرَهُ النَّظَرَ إِلَيْهِ، قَتَلَ ابْنَ عَمِّهِ، أَوِ ابْنَ خَالِهِ، أَوْ رَجُلًا مِنْ عَشِيرَتِهِ، فَارْجِعُوا وَخَلُّوا بَيْنَ حَضْرَتْ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبَيْنَ سَائِرِ الْعَرَبِ، فَإِنْ أَصَابُوهُ فَذَلِكَ الَّذِي أَرَدْتُمْ، وَإِنْ كَانَ غَيْرُ ذَلِكَ أَلْفَاكُمْ وَلَمْ تَعَرَّضُوا مِنْهُ مَا تُرِيدُونَ.
অর্থ: “অতঃপর হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন এ কথা শুনলেন, তখন তিনি কুরাইশ বাহিনীর কাছে গেলেন। তিনি প্রথমে উতবা ইবনে রবীয়াহ্্ এর দেখা পেলেন। হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উতবা ইবনে রবীয়াহ্্কে উদ্দেশ্য করে বললেন! “হে ওয়ালীদের পিতা! তুমি কুরাইশদের একজন প্রবীণ নেতা। তোমাকে সবাই মানে। তুমি কি এমন একটা কাজ করতে রাজী হবে, যা করলে তুমি চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে?”
অতঃপর উতবা ইবনে রবীয়াহ্্ সে হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্য করে বললো, আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, “হে আবূ ওয়ালীদ! তুমি কুরাইশ বাহিনীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও এবং তোমার মিত্র আমর ইবনে হাযরামীর হত্যাকা-ের ব্যাপারটা মিটিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নাও।”
উতবা ইবনে রবীয়াহ্্ বললো; “আমি তা করতে রাজী। সে ব্যাপারে আমি আপনার অনুরোধ রাখতে প্রস্তুত। হাযরামী আমার মিত্র এবং তার রক্তপণ আদায় করার এবং তার সম্পদের ক্ষতিপূরণ করে দেয়ার দায়িত্ব আমার। আপনি দয়া করে ইবনে হানযালা অর্থাৎ আবূ জেহেলের কাছে যান। আমি মনে করি কুরাইশদের বিনাযুদ্ধে ফিরিয়ে নেয়ার প্রশ্নে সে ছাড়া আর কেউ বিরোধিতা করবে না।”
অতঃপর উতবা বললো হানযালা তার ছেলেকে হারিয়ে ফেলুক অর্থাৎ আবূ জেহেল ইবনে হিশামের মৃত্যু হোক। এরপর উতবা দাঁড়িয়ে কুরাইশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে নিম্নরূপ ভাষণ দিলো-
“ক্বসম! হে কুরাইশ জনতা! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে এবং মুসলমান উনাদের সাথে যুদ্ধ করে তোমাদের কোনো লাভ হবে না। আজ যদি উনাকে তোমরা শহীদ করতে সক্ষম হও তাহলে তোমাদের ভিতর কোনো সদ্ভাব থাকবে না। একজন আর একজনের মুখ দেখা পছন্দ করবে না। কেননা তিনি হন তার চাচাতো ভাই কিংবা খালাতো ভাই অথবা অন্য কোনো না কোনো আত্মীয়ের হত্যাকারী বলে চিহ্নিত হবে। সুতরাং চল আমরা ফিরে যাই এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মুসলমান উনাদের পথ থেকে সরে দাঁড়াই। উনাদের ব্যাপারে তোমরা আরব জাতির উপর ছেড়ে দাও। যদি তারা উনাকে শহীদ করে তাহলে তোমাদের উদ্দেশ্যই সিদ্ধ হবে। আর যদি তা না হয়, তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আমরা অন্তত নির্দোষ থাকবো।”
আবূ জেহেলের ঘৃণ্য তৎপরতা
আবূ জেহেল তা শুনে অতিশয় ক্রোধান্বিত হয় এবং উতবাকে গাল-মন্দ করে। তারপর আমর ইবনে হাযরামীর ভ্রাতা ‘আমির ইবনে হাযরমীকে ডেকে বলে, দেখো আমির! ঠিক যে মুহূর্তে তোমার ভাইয়ের খুনের বদলা একেবারে চোখের সামনে, সে মুহূর্তে তোমাদের মিত্র উতবা সকলকে নিয়ে রণক্ষেত্র পরিত্যাগের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। দ-ায়মান হও এবং স্বীয় ভাইয়ের খুনের বদলা গ্রহণ করো। এ সময় আমির আরব প্রথা অনুযায়ী স্বীয় পরিধানের পশ্চাদ্দিকের কাপড় উত্তোলন করে ওয়া ওমরাহ! ওয়া ওমরাহ (যুদ্ধের সময়ের যে মাইর ডাক) বলে এমন এক শব্দ করে যার ফলে কুরাইশ কাফির মুশরিকদের মধ্যে রণ উন্মাদনার সৃষ্টি হয় এবং হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এবং উতবা ইবনে রবীয়াহ্ এর সব প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৪)
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (২)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৯)
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)