ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ (পর্ব-০৯)
, ২০ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১১ ছানী ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১১ মে, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) আইন ও জিহাদ
পূর্ব প্রকাশিতের পর
বৃষ্টি থেমে গেল। মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখনই গভীর রাতে সম্মানিত কাফিলাকে নিয়ে অগ্রসর হলেন। বিপর্যস্ত ও অপ্রস্তুত কুরাইশ কাফির মুশরিকরা কিছু বুঝে উঠার আগেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পানির উৎস ছোট বড় কূপগুলো আয়ত্বে নিয়ে নিলেন এবং খনন করলেন একটি বড় চৌবাচ্চা। এরপর নালা খনন করে পানির উৎসগুলো যুক্ত করে দিলেন বড় চৌবাচ্চাটির সঙ্গে। এভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনাদের পানির প্রয়োজন সুনিশ্চিত করলেন। সুবহানাল্লাহ্!
এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত জিহাদের ময়দানে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন এবং কোন্ কোন্ কুরাইশ কাফের মুশরিক নেতারা কোথায় মারা যাবে, কোথায় নিহত হবে তাদের স্থানগুলো নির্দিষ্ট করে দিলেন। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, “ওই দেখুন! ওই স্থানটি অমুক ব্যক্তির নিহত হওয়ার স্থান। আর অমুক ব্যক্তি অমুক স্থানে মৃত্যুবরণ করবে।” নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে স্থানগুলো নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, ওই স্থানগুলোতেই নিহত হয়েছিল কুরাইশ কাফির মুশরিকদের বিভিন্ন নেতারা যাদের নামও তিনি উল্লেখ করেছিলেন। (পবিত্র মুসলিম শরীফ, তাফসীরে মাজহারী শরীফ)
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কসম করে ইরশাদ মুবারক করলেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম যার কুদরতী হাত মুবারকে আমার মহাসম্মানিত নূরুল আমর মুবারক (প্রাণ মুবারক) সেই মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! এই রাতের এতই শান-মান, ফাযায়িল- ফযিলত, বুযুর্গী, সম্মান, মর্যাদা-মর্তবা যে, কোন মুসলমান ঘরের সন্তান যদি সারা জীবন খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক উনার পূর্ণ আনুগত্য করে, তবুও আপনাদের এই এক রাতের (জিহাদের পূর্ববর্তী রাতের) মর্যাদায় পৌঁছতে সক্ষম হবে না। সুবহানাল্লাহ্্! অর্থাৎ ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদের ময়দানে দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ই রমাদ্বান শরীফ পবিত্র জুমুয়া’র রাতের এতই শান-মান, ফাযায়িল- ফযিলত, বুযুর্গী, সম্মান, মর্যাদা-মর্তবা যে, কোন মুসলমান ঘরের সন্তান যদি সারা জীবন মহান আল্লাহ্্ পাক উনার পূর্ণ আনুগত্য করে, তবুও আপনাদের এই এক রাতের মর্যাদায় পৌঁছতে সক্ষম হবে না। সুবহানাল্লাহ্্!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরও ইরশাদ মুবারক করেন, “এই সম্মানিত বদর জিহাদে অংশগ্রহণকারী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও মর্যাদার দিক দিয়ে ঐ সকল ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের অপেক্ষা উত্তম যারা এই সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাননি।”
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবার তাঁবুতে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করে ফজর পর্যন্ত বাকী রাত পবিত্র ছলাত মুবারক আদায় করেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল র্কারামাল্লাহু ওয়াজ্হাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বারবার মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এই দোয়া মুবারক করেছিলেন যে-
اللَّهُمَّ إِنْ تَهْلِكْ هَذِهِ الْعِصَابَةُ لاَ تُعْبَدُ فِي الأَرْضِ فَلَمَّا طَلَعَ الْفَجْرُ، قَالَ الصَّلاَةَ عِبَادَ اللهِ .
অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! বদর জিহাদের ময়দানে আজ আপনি যদি এই মুসলিম কাফিলাকে ধ্বংস করে দেন অর্থাৎ সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনারা যদি পরাজয় বরণ করেন, তাহলে যমীনে আপনার ইবাদত-বন্দেগী করার আর কেউ থাকবে না। অতঃপর যখন পবিত্র ছলাতুল ফজর উনার সময় হলো, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দারা! ছলাত (নামায)।” অর্থাৎ হে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ! পবিত্র ছলাতুল ফজর উনার সময় হয়েছে আপনারা পবিত্র ছলাতুল ফজর আদায় করার জন্য আসুন।” (মুসনাদে আল বায্যার, আস সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী, দালায়িলুন নবুওওয়াহ, সুনানে তিরমিযী)
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সবাই খুব দ্রুত একত্রিত হলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে পবিত্র ছলাতুল ফজর উনার নামায আদায় করেন। পবিত্র নামায শেষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সবাইকে সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার জন্য উৎসাহিত করেন।
যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ
অর্থ: “আয় আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সম্মানিত জিহাদ উনার জন্য মু’মিন মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করুন।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৬৫)
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৪)
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (২)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৯)
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)