ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ (পর্ব-০৮)
, ১৯ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১০ ছানী ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১০ মে, ২০২৩ খ্রি:, ২৭ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
(সম্মানিত বদর জিহাদ মূলত: খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্ পাক উনার খাছ গায়েবী মদদের ঘটনা। যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অনুযায়ী চলেন, খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্ পাক উনার উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুুল করেন, উনারাই গায়েবী মদদের অধিকারী হন। আর যারা সন্ত্রাসী হামলা চালায় ও সন্ত্রাসবাদ লালন করে তারা মুরতাদ ও জাহান্নামী। সন্ত্রাসীদের উপর খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্ পাক উনার লা’নত। সন্ত্রাসী আর মুজাহিদ কখনও এক নয়। সন্ত্রাসী হামলা আর জিহাদের ময়দান কখনও এক নয়।)
ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ উনার ময়দানের অবস্থা:
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১৭ই রমাদ্বান শরীফ পবিত্র জুমুয়া’র রাতে সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনাদেরকে নিয়ে আল উদ্ওয়াতুদ্ দুন্ইয়া নামক স্থানে অবস্থান মুবারক গ্রহণ করে ছিলেন। অর্থাৎ ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানের নিকটবর্তী সীমানায়। যা ধু ধু বালুকারাশির বিরাট উন্মুক্ত ময়দান। বিচরণ ক্ষেত্র ছিল অসমতল। পদবিক্ষেপ ছিলো অস্বস্তিদায়ক। বালুর উপর পা স্থিরভাবে রাখা যাচ্ছিল না। পানির কোন ব্যবস্থা নেই।
অপর প্রান্তে কুরাইশরা আল উদ্ওয়াতুল কুছওয়া নামক যে স্থানে অবস্থান করে, তারপরে আকান্কাল নামক এক বিরাট টিলা। এর পরেই নিচে নরম ভূমি, সমতল জায়গা এবং মাটির সুন্দর ভূখ-। এরপরেই ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানের ধু ধু বালুকারাশির বিরাট উন্মুক্ত ময়দান এবং ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানের পানির উৎস ছোট বড় কূপগুলো ছিল কুরাইশ কাফির মুশরিকদের দখলে।
ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর ময়দানের পানির উৎস ছোট বড় কূপগুলো কুরাইশ কাফির মুশরিকদের দখলে থাকায় সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনারা পানির অভাবে পিপাসার্ত হয়ে পড়লেন। ফলে উনাদের পানাহার, অযূ, গোসল সব কিছু প্রকট আকার ধারণ করলো। সুযোগ বুঝে ইবলিস শয়তান, হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও মুসলমান হন নাই) উনার “ছূরত” (আকৃতি) ধারণ করে সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনাদের সামনে গিয়ে বিভিন্ন কথা বলা শুরু করলো। তাছাড়া সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনারা একটানা সফর করে আসছেন। উনারা অনেকেই ক্লান্ত-শ্রান্ত ছিলেন। উনাদের বিশ্রামেরও প্রয়োজন ছিলো। তাই খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এ অবস্থায় ওই রাতেই মুষলধারে বৃষ্টি নাযিল করলেন।
খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে গায়েবী মদদ:
খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
إِذْ يُغَشِّيكُمُ النُّعَاسَ أَمَنَةً مِنْهُ وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُمْ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً لِّيُطَهِّرَكُمْ بِهِ وَيُذْهِبَ عَنْكُمْ رِجْزَ الشَّيْطَانِ وَلِيَرْبِطَ عَلَى قُلُوبِكُمْ وَيُثَبِّتَ بِهِ الْأَقْدَامَ .
অর্থ: “হে সম্মানিত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা আপনারা স্মরণ করুন! যখন খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পক্ষ থেকে আপনাদের স্বস্তির জন্য (ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদের ময়দানে) আপনাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন এবং আকাশ থেকে আপনাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এই বৃষ্টি দ্বারা আপনাদেরকে পবিত্র করার জন্য এবং আপনাদের নিকট থেকে শয়তানের ওয়াসওয়াসা দূর করার জন্য, আপনাদের অন্তরসমূহকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং আপনাদের পা স্থির রাখার জন্য।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১১)
অর্থাৎ “ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদের ময়দানে তন্দ্রাচ্ছন্নতা যে সম্পূর্ণই খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে গায়েবী মদদ হিসেবে নাযিল হয়েছিলো, সে কথা বুঝানোর জন্য উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে “আমানাতান্” (স্বস্তির জন্য) শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে। কেননা তন্দ্রাচ্ছন্নতাই এখানে স্বস্তির কারণ। তন্দ্রা ঘনীভূত হলে নেমে আসে আরামদায়ক নিদ্রা। সশস্ত্র জিহাদে যোগদান করার জন্য সফররত মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনাদের জন্য পরিপূর্ণ বিশ্রাম অপরিহার্য ছিল। খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ঘন তন্দ্রার মাধ্যমে সেই বিশ্রাম ও স্বস্তিই উনাদেরকে দিয়েছিলেন। যা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নির্ধারিত এক বিশেষ গায়েবী মদদ এবং এক বিশেষ অনুগ্রহ মুবারকের নিদর্শন মুবারক।
যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে আপনাদের প্রতি “ঘন তন্দ্রার মাধ্যমে” এ রকম দয়া দান ইহসান করা হয়েছে। ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত সকল মুসলিম মুজাহিদ কাফিলা উনারা গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই রাতে বৃক্ষের নিচে স্থাপিত তাঁবুর মধ্যে সারারাত ধরে সম্মানিত ছলাত মুবারক আদায় করেছিলেন। ওই তন্দ্রা ছিলো মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ রহমত মুবারক উনার অলৌকিক বর্ষণ।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- হযরত আব্দুল্লাহ্্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন, “পবিত্র জিহাদের ময়দানে তন্দ্রা নাযিল হয়, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে। আর পবিত্র নামায উনার সময় তন্দ্রা আসে শয়তানের পক্ষ থেকে।” পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর এ রকম অবিস্মরণীয় তন্দ্রা মুবারক নাযিল হয়েছিল দু’বার। একবার সম্মানিত বদর জিহাদের ময়দানে। আরেকবার সম্মানিত উহুদ জিহাদের ময়দানে।
এরপর বলা হয়েছে- “এবং আকাশ থেকে আপনাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এই বৃষ্টি দ্বারা আপনাদেরকে পবিত্র করার জন্য”। এ কথার অর্থ হলো হে সম্মানিত মু’মিন মুসলমানগণ! পানির অভাবে আপনারা পিপাসার্ত হয়ে পড়েছিলেন। পানির উৎস ছোট বড় কূপগুলো কুরাইশ কাফির মুশরিকদের দখলে ছিল। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি দয়া দান ইহসান করে আপনাদেরকে তৃপ্ত করার জন্য এবং আপনাদেরকে পবিত্র করার জন্য আকাশ থেকে রহমত মুবারক উনার বৃষ্টি নাযিল করেছিলেন।
এরপর বলা হয়েছে- “এবং আপনাদের নিকট থেকে শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা দূর করার জন্য” অর্থাৎ বৃষ্টি বর্ষণের আরেকটি উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে এই পবিত্র আয়াত শরীফে। সেই উদ্দেশ্যটি হচ্ছে, শয়তানের ওয়াস্্ওয়াসা দূর করা। কারণ শয়তান তখন এভাবে ওয়াস্্ওয়াসা দিতে শুরু করেছিল যে, আপনারা বলেন, “আপনারা মু’মিন। তাই আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় পাত্র। অথচ আপনারা দেখুন, পানির উৎস ছোট বড় কূপগুলো কুরাইশ কাফির মুশরিকদের দখলে। যদি আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় পাত্রই হয়ে থাকেন, তাহলে আপনারা এ রকম দূরাবস্থায় পড়েছেন কেন? অযূ, গোসল কিছুই আপনারা করতে পারছেন না। পবিত্রতা অর্জন করা ব্যতীত কি মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করা যায়? আর ইবাদত না করলে কি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় পাত্র হওয়া যায়? শয়তানের এমন ওয়াস্ওয়াসা সেই মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেলো, যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করলেন। উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফে তাই বলা হয়েছে- “শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা দূর করার জন্য”।
আরো বলা হয়েছে, “মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণের আরো দু’টি উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে। সে দু’টি উদ্দেশ্য হচ্ছে এক. হৃদয়কে সুদৃঢ় করার জন্য। দুই. পা স্থির রাখার জন্য।” এ কথার অর্থ, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাধ্যমে আমাদেরকে তালীম দিলেন যে, ক্লান্তিতে জর্জরিত, অপবিত্র এবং শয়তানের ওয়াস্্ওয়াসা প্রভাবিত অন্তরে কখনো সুদৃঢ় ইচ্ছা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি “মুষলধারে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে” এ সকল প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে আপনাদের অন্তরকে সুদৃঢ় করার জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলেন। তাছাড়া আপনাদের সামনে ছিল অসমতল বালুর ময়দান। আপনাদের চলাচলের ক্ষেত্র ছিল অসমতল। পদবিক্ষেপ স্বস্তিদায়ক ছিল না। বালুর উপর পা স্থির ভাবে রাখা যাচ্ছিল না। মহান আল্লাহ পাক তিনি “মুষলধারে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে” এ সকল প্রতিবন্ধকতাও দূর করে দিয়েছেন। আপনাদের চলাচল স্বস্তিদায়ক করে দিয়েছেন। জিহাদের ময়দানে আপনাদের পা স্থির রাখার জন্য এই পর্যাপ্ত বৃষ্টি বর্ষণ।”
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৪)
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (২)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৯)
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)