ঐতিহাসিক সম্মানিত খন্দকের জিহাদ (৪৩)
, ২৪ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৩ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ১২ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) আইন ও জিহাদ
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খন্দকের জিহাদের সময় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম উনাদেরকে দোয়া মুবারক শিখিয়ে দিয়েছিলেন:
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, খন্দকের দীর্ঘায়িত জিহাদের অসহনীয় কষ্টের সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দো‘য়া করতে বলেছিলেন-
اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِنَا، وَآمِنْ رَوْعَاتِنَا
‘আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাদের সংকট দূরীভূত করুন এবং সহায়-সম্পদ নিরাপদ করুন’ (সিলসিলা ছহীহাহ হাদীছ শরীফ-২০১৮)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খন্দকের জিহাদে স্বয়ং নিজেই মহাসম্মানিত দুয়া মুবারক করেছিলেন:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আবী ‘আওফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে মহাসম্মানিত দো‘য়া মুবারক করে বলেছিলেন
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى ، قَالَ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى الأَحْزَابِ فَقَالَ " اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ سَرِيعَ الْحِسَابِ اهْزِمِ الأَحْزَابَ اللَّهُمَّ اهْزِمْهُمْ وَزَلْزِلْهُمْ "
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মিলিত কাফির বাহিনীর বিরুদ্ধে (খন্দকের যুদ্ধে) এভাবে মহাসম্মানিত দুয়া মুবারক করলেন যে, আয় মহান আল্লাহ পাক, হে কিতাব নাযিলকারী, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী, আপনি সম্মিলিত কাফির বাহিনীকে পরাজিত করে দিন। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি তাদের পরাজিত করে দিন এবং তাদের কম্পমান করে দিন। (মুসলিম শরীফ, তাফসীরে ইবনে কাছীর- ৬/৩৯৬)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খন্দকের জিহাদে স্বয়ং নিজেই মহাসম্মানিত কবিতা মুবারক পাঠ করেছিলেন:
হযরত বারা ইবনে ‘আযেব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, খন্দকের মাটি বহনকালে আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কবিতার নিম্নোক্ত চরণগুলি আবৃত্তি করতে শুনেছি।
اللَّهُمَّ لَوْلاَ أَنْتَ مَا اهْتَدَيْنَا + وَلاَ تَصَدَّقْنَا وَلاَ صَلَّيْنَا
فَأَنْزِلَنْ سَكِينَةً عَلَيْنَا + وَثَبِّتِ الْأَقْدَامَ إِنْ لاَقَيْنَا
إِنَّ الْأُوْلَى قَدْ بَغَوْا عَلَيْنَا + إِذَا أَرَادُوْا فِتْنَةً أَبَيْنَا-
‘আয় মহান আল্লাহ পাক! যদি আপনার অনুগ্রহ না থাকত, তাহ’লে আমরা হেদায়াতপ্রাপ্ত হতাম না এবং আমরা ছদক্বাও দিতাম না, পবিত্র ছলাতও আদায় করতাম না’। ‘অতএব আপনি আমাদের উপরে শান্তি বর্ষণ করুন এবং কাফিরদের সঙ্গে যদি আমাদের মুকাবিলা হয়, তাহলে আমাদের সম্মানিত ক্বদম মুবারকগুলো দৃঢ় রাখুন’। ‘নিশ্চয়ই প্রথম পক্ষ আমাদের উপরে বাড়াবাড়ি করেছে। যদি তারা ফিৎনা সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে আমরা তা থেকে বিরত থাকবো’ (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
ছাহাবী হযরত সাহল বিন সা‘দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা তায়ালা তিনি বলেন, আমরা খন্দকের জিহাদে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ছিলাম। এ সময় আমরা পরিখা খনন করছিলাম ও কাঁধে করে মাটি বহন করছিলাম’।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, শীতের সকালে ক্ষুৎ-পিপাসা সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পরিখা খনন করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে আগমন করেন ও তাদেরকে উৎসাহ দিয়ে দুআর কন্ঠ মুবারকে বলে উঠলেন-
اللَّهُمَّ لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشُ الْآخِرَهْ + فَاغْفِرِ الْأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ
‘আয় মহান আল্লাহ পাক! নেই কোন আরাম পরকালের আরাম ব্যতীত। অতএব আপনি আনছার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করুন’।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত কবিতা মুবারক পাঠের জবাবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারাও কবিতা মুবারক পাঠ করেছিলেন:
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, শীতের সকালে মারাত্মক পিপাসা সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা পরিখা খনন করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে আগমন করেন ও উনাদেরকে উৎসাহ দিয়ে যখন দুআর কন্ঠ মুবারকে বলে উঠলেন-
اللَّهُمَّ لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشُ الْآخِرَهْ + فَاغْفِرِ الْأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَه
ْ
‘আয় মহান আল্লাহ পাক! নেই কোন আরাম পরকালের আরাম ব্যতীত। অতএব আপনি হযরত আনসার ও মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে ক্ষমা করুন’।
জবাবে তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা বলে উঠেন-
نَحْنُ الَّذِينَ بَايَعُوا مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم + عَلَى الْجِهَادِ مَا بَقِيْنَا أَبَدَا
‘আমরা তারাই, যাঁরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মাগফিরাত মুবারকে (হাত মুবারকে) জিহাদের বাইয়াত হয়েছি, যতদিন আমরা বেঁচে থাকব’। (বুখারী শরীফ)
-মুহম্মদ নাজমুল হুদা ফরাজী
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৭)
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৫)
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৬)
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
২৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৪)
২৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৫)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৪)
১৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৩)
১৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (২৩)
১২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরীমূলক কাজের ফিরিস্তি (৩)
১০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (২)
০৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)