ঐতিহাসিক সম্মানিত খন্দকের জিহাদ (৩৮)
, ২৭ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৮ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১৭ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ০২ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) আইন ও জিহাদ
হযরত বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন, শত্রুদের অবরোধ চললো দিনের পর দিন। কিন্তু যুদ্ধ হলো না মোটেও। শুধুমাত্র একদিন কয়েকজন অশ্বারোহী বনী কেনানার বসতির উপর দিয়ে অশ্ব ছুটিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় চিৎকার করে বললো, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হউন। আজ টের পাবেন কোন অশ্বারোহীর পাল্লায় অপনারা পড়েছেন। ওই অশ্বারোহীরা ছিলো আমর ইবনে আবদ আমের, ইকরামা ইবনে আবু জেহেল মাখজুমী, হুবাইরা ইবনে ওয়াহাব মাখজুমী, নওফেল ইবনে আব্দুল্লাহ দ্বারার ইবনে খাত্তাব এবং মিরদাস ইবনে লুওয়াই মুহারেবী। তারা ধাবিত হলো পরিখার দিকে। কাছাকাছি গিয়ে পরিখা দেখে বলে উঠলো, আরে এ যে দেখছি অভিনব কৌশল। এরপর তারা অনুসন্ধান করে দেখতে লাগলো, দুর্বলতম অবস্থান কোনটি। এভাবে তারা উপস্থিত হলো অপেক্ষাকৃত কম সুরক্ষিত একটি স্থানে। ঘোড়াগুলো নিয়ে চক্কর দিতে লাগলো পরিখা ও সালয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে। ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ছুটে গেলেন তাদের সামনে। পরিখার ওই অংশের সুরক্ষা করলেন অধিকতর সুদৃঢ়। দেখলেন, অদূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে শত্রুপক্ষের আমর ইবনে আবদ। বদরযুদ্ধে আহত হয়েছিলো। তাই উহুদযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এখন পরিখার যুদ্ধে উপস্থিত হয়েছে মহা উৎসাহে অশ্বারোহী সৈনিকদের প্রশিক্ষকরূপে। ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন, আমর! তুমি কিন্তু একবার মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ করে বলেছিলে, কোনো কুরাঈশ যদি তোমার সামনে হাঁ বা না সূচক কোনো কথা উপস্থাপন করে, তবে তুমি গ্রহণ করবে তার যে কোনো একটি। আমর বললো, অবশ্যই। আমি এক কথার মানুষ। ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি তোমাকে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দিকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমর বললো, আমার এগুলোর কোনোই আবশ্যকতা নেই। ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তবে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হও। সে বললো, ভাতিজা! এরকম বলছেন কেনো? আমার হাতে কি আপনি বেঘোরে প্রাণটা হারাতে চান? আমি তো তা চাই না। ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি চাই তোমার রক্ত। একথা শুনে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠলো আমর। লাফিয়ে নামলো ঘোড়া থেকে। তারপর তার ঘোড়ার পায়ে হানলো তলোয়ারের আঘাত। অথবা ঘোড়াটিকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তার মুখে মারলো অঙ্কুশ। তারপর অগ্রসর হয়ে দাঁড়ালো ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুখোমুখি। ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি অগ্রসর হলেন। শুরু হলো যুদ্ধ। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি তাকে পাঠিয়ে দিলেন মৃত্যুর দুয়ারে। হত্যা করলেন তার আরো দু’জন সাথীকে। একজন প্রাণে বাঁচলো পালিয়ে। নওফেল ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুগীরা সাহস করে নেমে পড়লো পরিখায়। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা প্রস্তর বর্ষণ করতে শুরু করলেন তার উপর। অবস্থা বেগতিক দেখে সে চিৎকার করে বলতে লাগলো, ওহে আরবী যুদ্ধাবৃন্দ! প্রস্তরবর্ষণ অপেক্ষা উত্তম রণকৌশল কি আপনাদের জানা নেই? বীর যদি হন, তবে সামনে এগিয়ে আসেন না কেনো? একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে পরিখায় ঝাঁপিয়ে পড়লেন ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। মুহূর্তের মধ্যে তলোয়ারের আঘাতে উড়িয়ে দিলেন তার গর্দান। কুরাঈশ বাহিনী থেকে প্রস্তাব এলো, নগদ মূল্যের বিনিময়ে আমাদের যোদ্ধাদের লাশ ফেরত দেওয়া হোক। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলে পাঠালেন, নগদ মূল্যের প্রয়োজন আমাদের নেই। তোমাদের লাশ নিয়ে যেতে পারো। (তাফসীরে মাযহারী) (চলবে)
-মুহম্মদ নাজমুল হুদা ফরাজী
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)