ঐতিহাসিক সম্মানিত খন্দকের জিহাদ (৩৬)
, ১৩ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৪ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) আইন ও জিহাদ
হযরত কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পরিখা খনন শেষ করেছিলেন ৬ দিনে। ঐতিহাসিক বিবৃতিগুলোতে এরকমই বলা হয়েছে।
হযরত বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন, হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় এসেছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পরিখা খনন শেষ করলেন তখনই পবিত্র মদীনা শরীফ উনার উপকণ্ঠে এসে উপস্থিত হলো শত্রুবাহিনী। প্রায় ১০ হাজার কাফির সৈন্য ছাউনি ফেললো মুজতামাউল আসবালে। বনি গাতফান তাদের মিত্রশক্তি নজদী সেনাবাহিনীসহ অবস্থান গ্রহণ করলো উহুদ পর্বতের এক পাশে, নকমীর পিছনের দিকে। ইত্যবসরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার প্রাণ উৎসর্গকারী ৩ হাজার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে পরিখার পাড়ে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান গ্রহন করলেন। ঢাল হিসেবে পিছনে রাখলেন সালয়া পাহাড়কে। ফলে মুসলিম বাহিনী ও কাফির বাহিনীর মাঝে অন্তরায় হলো কেবল পরিখা। আর মহিলা ও শিশুদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবস্থান গ্রহণ করতে বললেন পেছনের পর্বত শিখরে। বনী নাজিরের গোত্রীয় নেতা হুয়াই ইবনে আখতাব স্ব-স্থান থেকে গোত্র ত্যাগ করলো। প্রথমে গেল কা’ব ইবনে কারাজির বাড়িতে। বনী কুরাইজার নেতা কা’ব তার স্বগোত্রীয়দের নিরাপত্তার স্বার্থে শান্তিচুক্তি করেছিলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে। সে কারণেই সে হুয়াইয়ের আগমন টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের মধ্যে ঢুকে খিল এটেঁ দিলো। হুয়াই বার বার দরজা খোলার অনুরোধ জানালো। কিন্তু কা’ব তার কথায় ভ্রƒক্ষেপই করলো না। বরং বললো, দেখো হুয়াই! আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে আমি উনার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবো না। তিনি অত্যন্ত সজ্জন ও প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্যাপারে একনিষ্ঠ। তিনি কখনোই কারো সঙ্গে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেননি। এরকম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে আমি প্রতারণা করতে পারবো না। হুয়াই তবুও নাছোর বান্দা। সে এবার ধরলো ভিন্ন কৌশল। বললো, আমি তোমার অন্নে ভাগ বসাবো বলেই তো তুমি দরজা খুলছো না। কা’ব এবার রেগে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দিয়ে বললো, আমাকে এমন অপবাদ তুমি দিতে পারলে? হুয়াই বললো, শোনো কা’ব! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে আমি এক বিশাল অভিযানের ব্যবস্থা করেছি। কুরাইশ, গাতফান ও আরো অনেক আরব গোত্র একত্রিত হয়ে এসেছে এবার। তাদের সঙ্গে আমরা তো আছিই। তারা সকলে আমার সঙ্গে এই মর্মে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মূলোৎপাটন না করা পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবে না। নাউযুবিল্লাহ! সুতরাং তোমার জন্যও এসেছে এবার বিরাট সুযোগ। ইচ্ছা করলেই তুমি এখন হতে পারো এক সফল অধিনায়ক। কা’ব বললো, তুমি আমার জন্য নিয়ে এসেছো একটা স্থায়ী গঞ্ছনা। নিয়ে এসেছো এমন অন্ধকার মেঘ, যাতে রয়েছে কেবল বজ্রধ্বনি ও বিপদ সংকেত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রসঙ্গে আমাকে আর কিছু বলবেন না। তিনি অঙ্গীকার রক্ষার বিষয়ে অতি বিশ্বস্ত। এরকম ব্যক্তিত্ব মুবারক উনার সঙ্গে আমি ওয়াদা ভঙ্গ করি কীরূপে? হুয়াই এতে করেও দমলো না। জিদ করতে লাগলো বার বার। বললো, কা’ব! তুমি অযথা ভীত হচ্ছো। তুমি কি মনে করেছো কুরাইশরা পরাভূত হবে? কখনোই নয়। আর যদি সে রকম কিছু হয়ে যায়, তবে তোমাকে আমি কথা দিচ্ছি জীবন থাকতে আমি তোমার সঙ্গ ত্যাগ করবো না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিক থেকে আক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিলে আমি আমার লোকজনকে নিয়ে অবশ্যই তা প্রতিহত করবো। কা’ব এবার নরম হলো। কথা দিলো, সেও তার লোকজনকে নিয়ে কুরাইশ বাহিনীকে সাহায্য করবে। সংবাদ খুব শীঘ্রই পৌঁছে গেলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারকে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বনী কুরায়জার কাছে পাঠালেন আউস গোত্রের হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায আশহালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, খাজরাজ গোত্রের হযরত সা’দ ইবনে উবাদা সায়েদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা খাজরাজী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত খাওয়াত ইবনে যুবায়ের আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে। উনাদেরকে বলে দিলেন, আপনারা যদি বুঝতে পারেন ঘটনা সত্য, তাহলে সেকথা ইশারা-ইঙ্গিতে আমাকে জানিয়ে দিবেন। তা নাহলে আমাদের অনেকের মনোবল ভেঙে যাবে। আর যদি দেখেন, ঘটনা সত্য নয়, তবে বিষয়টি প্রকাশ্যেই আমাকে জানাতে পারবেন। উনারা সকলে পৌঁছে গেলেন বনী কুরায়জাদের বসতিতে। বনূ কুরায়জার লোকদের সঙ্গে আলাপ করে উনারা সহজেই বুঝতে পারলেন অবস্থা বেগতিক। তারা স্পষ্ট করেই জানালো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমাদের কোনো অঙ্গীকার নেই। হযরত সা’দ ইবনে উবাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন তেজস্বী। তিনি তাদেরকে শুনিয়ে দিলেন কঠোর প্রকৃতির কিছু কথা। হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বাধা দিয়ে বললেন, যেতে দিন। বড় স্পর্ধা বেড়েছে তাদের। একথা বলে সকলে প্রত্যাবর্তন করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে উপস্থিত হয়ে বললেন, আয় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সাথীগণের সঙ্গে প্রতারণা করা সাংঘাতিক ব্যাপার। (তাফসীরে মাযহারী) (চলবে)
-মুহম্মদ নাজমুল হুদা ফরাজী
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৪)
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (২)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৯)
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)