ঐতিহাসিক সম্মানিত খন্দকের জিহাদ (৩১)
, ০৮ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৯ হাদি ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) আইন ও জিহাদ
হযরত বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, আমাকে পরিখা যুদ্ধের ঘটনা বর্ণনা করেছেন হযরত ওরওয়া ইবনে যুবায়ের রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে ইয়াযিদ ইবনে রূমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। এরকম আরো বর্ণনা করেছেন আবদুল্লাহ্ ইবনে কা’ব ইবনে মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, জুহুরী এবং আছেম ইবনে আমর ইবনে কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, অধিকন্তু আবদুল্লাহ্ ইবনে আবী বকর ইবনে মুহম্মদ ইবনে আমর ইবনে হযম এবং মুহম্মদ বিন কা’ব কারাজী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। সবগুলো বর্ণনার তথ্যাবলী প্রায় একই রকম। যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে সকল অমুসলিমকে একত্র করার কাজে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলো ইহুদী গোত্রপ্রধান সালাম ইবনে আবীল হাকীক, হুয়াই ইবনে আখতাব, কেনানা ইবনে রবী, হাওদা ইবনে কায়েস ও আবু আমের লেওয়ায়ী। বনী নাজির ও বনী ওয়ায়েলের কিছু লোক ছিলো এদের একান্ত সহযোগী। তারা সকলে মিলে একদিন উপস্থিত হলো মক্কা শরীফে। কুরাইশ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করে বললো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুলোৎপাটিত করবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করো। নাউযুবিল্লাহ! আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। কুরাইশ নেতারা বললো, তোমরা জ্ঞানী গুণী। তোমাদের রয়েছে একটি আসমানী গ্রন্থও। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমাদের বিরোধ উপস্থিত হয়েছে দ্বীন/ধর্ম সংক্রান্ত ব্যাপারে। আচ্ছা, তোমরা ঠিক করে বলোতো, তোমাদের দ্বীন/ধর্ম উৎকৃষ্ট, না আমাদের? ইহুদীরা জবাব দিলো, তোমাদের ধর্ম সনাতন, তাই তোমরাই অধিক সত্যানুসারী। তাদের এমন অপবচনের প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়
اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡنَ اُوۡتُوۡا نَصِیۡبًا مِّنَ الۡکِتٰبِ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡجِبۡتِ وَ الطَّاغُوۡتِ وَ یَقُوۡلُوۡنَ لِلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا هٰۤؤُلَآءِ اَهۡدٰی مِنَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا سَبِیۡلًا ﴿۵۱﴾
অর্থ: আপনি কি তাদেরকে দেখেননি? যাদেরকে দেওয়া হয়েছে কিতাবের কিছু অংশ, তারা আবার বিশ্বাস করে প্রতিমা ও শয়তানকে এবং কাফিরদেরকে বলে, মুসলিমদের অপেক্ষা তারাই অধিকতর সুপথগামী। নাউযুবিল্লাহ!
ইহুদীদের জবাব শুনে কুরাইশরা খুবই আনন্দিত হলো। প্রচ- উৎসাহের সঙ্গে শুরু করে দিলো যুদ্ধের প্রস্তুতি। ইহুদীরা এবার গেলো গাতফানদের কাছে। ওই গোত্রটি ছিলো কায়েস ইবনে গাইলানের একটি শাখা। তাদেরকে বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর কথা শুনিয়ে উত্তেজিত করে তুললো ইহুদীরা। তারা বললো, কুরাইশরাও আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে একমত। সুতরাং ভয়ের কিছুই নেই।
তাফসীরে মাযহারী গ্রন্থকার বলেন, আমি বলি, কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, কুরাইশদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলো বনী নাজির ও বনী ওয়াইলের অন্ততঃ ২০ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাদেরকে সাদর অভ্যর্থনা জানালেন। (হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তখনও মুসলমান হননি) তিনি বললেন, তোমরা আমাদের দৃষ্টিতে মহান। কারণ, তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে চাও। আমরা তো এরকম চুক্তিকে মনে করি পরম সৌভাগ্য।
ইহুদীরা বললো, হে মান্যবর গোত্রপ্রধান! আপনিসহ আপনার গোত্রের ৫০ জনকে ঠিক করেন। আমরাও ৫০ জন যোগ দিবো আপনাদের সাথে। তারপর সকলে মিলে প্রবেশ করবো কা’বা শরীফের গিলাফের অন্তরালে। তারপর কা’বা শরীফ উনার দেয়ালে বুক স্থাপন করে শপথ করে বলবো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারে আমরা একমত। আমাদের মধ্যে একজন জীবিত থাকা পর্যন্ত আমরা উনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতেই থাকবো। নাউযুবিল্লাহ। এ প্রস্তাবে একমত হলো সকলেই।
ইহুদীরা এভাবে কুরাইশদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর উপস্থিত হলো গাতফান গোত্রের নিকটে। তাদেরকে বললো, যদি তোমরা আমাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, তবে আমরা তোমাদেরকে আমাদের খায়বরের ফলের বাগানগুলোর ফল ভক্ষণ করতে দিবো ৬ মাস অথবা এক বৎসর ধরে। তাদের প্রস্তাবে একতা ঘোষণা করলো গাতফানদের গোত্র অধিপতি উয়াইনা ইবনে হুসাইন ফাজারী। তারা নিজ উদ্যোগে বনী আসাদ গোত্রকেও করে নিলো তাদের মিত্রশক্তিভূত। এভাবে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও মুসলমান হননি) উনার সেনাপতিত্যে গঠিত হলো এক বিশাল বাহিনী। একত্রিত হলো ইহুদী, গাতফান, বনী ফাজারা, বনী আশজাআ ইত্যাদি গোত্র। নির্ধারিত দিনে তারা রওয়ানা হলো পবিত্র মদীনা শরীফ অভিমুখে।
হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে ছিলো ৪ হাজার সৈনিক। তাদের মধ্যে অশ্বারোহী ৩ হাজার ও ১ হাজার উষ্ট্রারোহী। অন্যান্যরা পদাতিক। নিশান বণ্টনের দায়িত্ব দেয়া হলো হযরত উছমান ইবনে আবী তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে। (তিনি তখনও মুসলমান হননি)। উনার বাহিনী রওয়ানা বিরতি করলো মাররাজ জাহরান নামক স্থানে। সেখানে একে একে সমবেত হলো বনী আসলাম, বনী আশজাআ, বনী মুররা, বনী কেনানা, বনী ফাজারা ও বনী গাতফান। সেখান থেকে সকলে একজোটে রওয়ানা করলো মদীনা শরীফের দিকে। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর শত্রুবাহিনী উপনীত হলো পবিত্র মদীনা শরীফ উনার উপকণ্ঠে। বিভিন্ন গোত্রের বিচিত্র মনোবৃত্তি ও আচার আচরণের লোক মিলে শত্রুবাহিনী গঠিত হয়েছিলো বলেই এই যুদ্ধের নাম ছিলো আহযাব বা অসমবাহিনীর যুদ্ধ। (তাফসীরে মাযহারী)
-মুহম্মদ নাজমুল হুদা ফরাজী
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)