ঐতিহাসিক সম্মানিত খন্দকের জিহাদ (২০)
, ০৫ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ৩০ সামিন, ১৩৯০ শামসী সন, ২৮শে জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) আইন ও জিহাদ
তিনি (হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন, হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি এমন কোন ব্যক্তি দেখিনি যে পাঁচ ওয়াক্ত ছলাত আদায় করে সে এ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম। পৃথিবীর মধ্যে আমি এরূপ দুনিয়াত্যাগী, আখিরাতের ব্যাপারে অধিক আগ্রহী এবং দিন-রাত ইবাদতকারী আর কাউকে দেখিনি। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে আমি অন্তর থেকে তার চেয়ে বেশী আর কাউকে মুহব্বত করিনি। তার নিকট দীর্ঘদিন অবস্থান করেছিলাম। এরপর যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসল তখন আমি তাকে বললাম, হে অমুক! আমি আপনার সাথে ছিলাম এবং আপনাকে যেভাবে অন্তর থেকে মুহব্বত করেছিলাম ইতিপূর্বে আর কাউকে তেমন মুহব্বত করিনি। আর আপনার নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার যে আদেশ মুবারক পৌঁছেছে তা আপনি প্রত্যক্ষ করেছেন। এখন কার প্রতি আপনি আমাকে সোপর্দ করছেন এবং আমাকে কি আদেশ করছেন? তিনি বললেন, হে বৎস! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! এখন আমি আমার পথের উপর কাউকে দেখিনা। মানুষজন ধ্বংস হয়ে গেছে এবং দ্বীন পরিবর্তন করেছে। তারা তাদের অনুসৃত ধর্মাচরণের অধিকাংশই ত্যাগ করেছে। তবে মুছেলে (ইরাকের একটি শহর) এক ব্যক্তি আছে। সে অমুক। সে আমার পথে আছে। আপনি তার সাথে মিলিত হোন। তিনি বলেন, অতঃপর যখন তিনি মৃত্যুবরণ করলেন এবং তাকে দাফন করা হল, তখন আমি মুছেলের ব্যক্তিটির নিকট গেলাম। আমি তাকে বললাম, হে জনাব! অমুক ব্যক্তি আমাকে তার মৃত্যুর সময় অছিয়ত করেছে যে, আমি যেন আপনার সান্নিধ্যে থাকি এবং তিনি আমাকে বলেছেন, আপনি তার পথের উপর আছেন। উত্তরে পাদ্রী বললেন, ঠিক আছে আপনি আমার নিকট অবস্থান করুন। আমি তার নিকট অবস্থান করতে লাগলাম। আমি তাকে তার বন্ধুর পথে উত্তম মানুষ হিসাবে পেলাম। তবে কিছুদিন পরে সেও মৃত্যুবরণ করল। যখন তার মৃত্যু ঘনিয়ে আসল তখন আমি তাকে বললাম, হে শায়েখ! অমুক ব্যক্তি আমাকে আপনার নিকট আসার জন্য অছিয়ত করেছিলেন এবং আপনার সান্নিধ্য লাভের জন্য আদেশ দিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে আপনার উপর যা উপস্থিত হয়েছে তা আপনি দেখেছেন (অর্থাৎ আপনার মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে)। এখন আপনি কার নিকট যাওয়ার জন্য আমাকে অছিয়ত করছেন? আর আমাকে কি করার আদেশ দিচ্ছেন?
তিনি বললেন, হে বৎস! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমার জানা মতে নাছীবীনের একজন ব্যক্তি আছে। যে আমাদের দ্বীনের উপর অটল আছেন। সে অমুক। আপনি তার সাথে মিলিত হোন। তিনি বলেন, অতঃপর যখন সে মারা গেল এবং তাকে দাফন করা হল, তখন আমি নাছীবীনের লোকটির সাথে মিলিত হলাম এবং আমার বিষয়ে ও আমার সাথী যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাকে তা বললাম। সে বলল, আপনি আমার কাছে অবস্থান করুন। অতঃপর আমি তার নিকট অবস্থান করলাম এবং তাকে তার সাথীদ্বয়ের মত (সৎ) পেলাম। আমি একজন ভাল লোকের সাথে অবস্থান করলাম। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! কিছুদিন যেতে না যেতেই তার মৃত্যুর ঘণ্টা বেজে গেল।
যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসল তখন আমি তাকে বললাম, হে জনাব! অমুক ব্যক্তি আমাকে অমুক ব্যক্তির কাছে যাওয়ার অছিয়ত করেছিল। অতঃপর অমুক ব্যক্তি আমাকে আপনার কাছে আসার অছিয়ত করেন। এখন আপনি আমাকে কার বিষয়ে অছিয়ত করছেন এবং কি করার নির্দেশ দিচ্ছেন? তিনি বললেন, হে বৎস! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! একজন ব্যক্তি ব্যতীত আমি আর কাউকে আমাদের সঠিক পথে দেখছি না, যার নিকট যাওয়ার জন্য আপনাকে আদেশ দিব। (ঐ ব্যক্তিটি হল) আম্মুরিয়্যাহ-এর বাসিন্দা। সে হুবহু আমাদের পথেই রয়েছে। আপনি চাইলে তার নিকট যেতে পারেন। তিনি বলেন, অতঃপর যখন সে মারা গেল এবং দাফন-কাফন করা হল, তখন আমি আম্মুরিয়্যাহ-এর ব্যক্তিটির নিকট গেলাম এবং আমার বৃত্তান্ত তাকে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, আপনি আমার নিকট অবস্থান করুন।
অতঃপর আমি তার নিকট অবস্থান করলাম। তিনি তার বন্ধুদের আদর্শ ও দ্বীনের উপর ছিলেন। তিনি (হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন, আমি কিছু উপার্জনও করেছিলাম। এক পর্যায়ে কিছু গাভী ও বকরীর মালিক হয়ে গেলাম। অতঃপর তার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম আসল (অর্থাৎ মৃত্যু ঘনিয়ে এল)। যখন তার মৃত্যু উপস্থিত হল তখন আমি তাকে বললাম, হে শায়েখ! আমি (প্রথমে) অমুকের নিকট ছিলাম। অতঃপর তিনি অমুক ব্যক্তির ব্যাপারে অছিয়ত করেন। অতঃপর অমুক ব্যক্তি আবার অমুকের নিকট যাওয়ার জন্য অছিয়ত করেন। অতঃপর অমুক ব্যক্তি আবার আমাকে আপনার নিকট আসার জন্য অছিয়ত করেন। এখন আপনি কার নিকট যাওয়ার জন্য আমাকে অছিয়ত করছেন? আর আপনি আমাকে কি আদেশ করছেন? তিনি বললেন, হে বৎস! আমার জানা মতে এখন আর এমন কোন ব্যক্তি নেই যে আমাদের ধর্মে রয়েছে এবং যার নিকট যাওয়ার জন্য আপনাকে আদেশ করব। তবে আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আবির্ভাবের সময় ঘনিয়ে এসেছেন। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ অলাইহিস সালাম উনার দ্বীনের মাঝে প্রেরিত হবেন। আরব ভূমিতে তিনি আত্মপ্রকাশ করবেন। আর তিনি এমন ভূমির দিকে হিজরত করবেন যা পাথরময় হবে এবং সেখানে খেজুর বৃক্ষ থাকবে। উনার কিছু স্পষ্ট নিদর্শন থাকবে। তিনি হাদিয়া গ্রহণ করবেন, তবে ছদাক্বাহ ভক্ষণ করবেন না। উনার উভয় কাঁধের মধ্যভাগে সম্মানিত নবুওওয়াত মুবারক উনার সিলমোহর থাকবে। যদি আপনার ঐ দেশে যাওয়ার সামর্থ্য থাকে তবে আপনি যান। তিনি বলেন, অতঃপর তিনি মৃত্যুবরণ করলেন এবং তাকে দাফন-কাফন করা হল।
(মুসনাদে আহমাদ শরীফ হাদীছ শরীফ নং ২৩৭৮৮, সিলসিলায়ে ছহীহাহ শরীফ, হাদীছ শরীফ নং-৮৯৪)। (চলবে)
-আল্লামা মুহম্মদ নাজমুল হুদা ফরাজী
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)