ঐতিহাসিক সম্মানিত খন্দকের জিহাদ (১৯)
, ২৮শে জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৪ সামিন, ১৩৯০ শামসী সন, ২২ই জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০৭ মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আইন ও জিহাদ
ঐতিহাসিক সম্মানিত খন্দকের জিহাদে পরীখা বা খন্দক খননের পরামর্শদানকারী হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহনের সম্মানিত ওয়াক্বিয়া মুবারক: ১
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেই উনার পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহন করার ওয়াকিয়া মুবারক বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমি একজন পারসিক ছিলাম। আমার জন্মস্থান ছিল ইস্পাহানের অন্তর্ভুক্ত ‘জাই’ নামক গ্রাম। আমার পিতা ছিলেন গ্রামের সর্দার। আর আমি তার নিকট ছিলাম মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়। আমার প্রতি তার ভালবাসা এরূপ ছিল যে, তিনি সবসময় আমাকে বাড়িতে আবদ্ধ করে রাখতেন। অর্থাৎ (পূজার) আগুনের তত্ত্বাবধায়ক করে রাখতেন। যেমন কোন বাঁদীকে আটকিয়ে রাখা হয় (তেমন আমাকে আবদ্ধ করে রাখতেন)। এতে করে আমি অগ্নিপূজায় খুবই মনোযোগী হলাম এবং এক পর্যায়ে আগুনের এমন খাদেম বনে গেলাম যে, মুহূর্তের জন্যও আগুন নিভতে দিতাম না। সেই সাথে আমার পিতার ছিল অঢেল ভূসম্পত্তি।
তিনি একদিন তার একটি গৃহ নির্মাণে ব্যস্ত হলেন এবং আমাকে বললেন, হে বৎস! আমি বর্তমানে আমার খামারে একটি গৃহ নির্মাণ করছি। তুমি যাও এবং তা দেখাশুনা কর। সেখানে তিনি যা করতে চান সে বিষয়ে আমাকে নির্দেশনা দিলেন। অতঃপর আমি তার খামারের দিকে রওয়ানা হলাম। পথিমধ্যে আমি খৃষ্টানদের কোন এক গির্জার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। যেখানে তারা ছলাত আদায় করছিলেন। আমি তাদের আওয়াজ শুনতে পেলাম। মূলতঃ আমার পিতা আমাকে গৃহবন্দী করে রাখার কারণে মানুষের চাল-চরিত্র সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। তাই যখন তাদের আওয়াজ শুনতে পেলাম, তখন তাদের কর্মকান্ড দেখার জন্য আমি তাদের নিকট গেলাম। অতঃপর আমি যখন তাদের ছলাত দেখলাম তখন আমার ভাল লাগল। ফলে আমি তাদের কর্মকান্ডের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়লাম। আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমাদের দ্বীনের চেয়ে এ দ্বীনই উত্তম। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি পিতার খামারে যাওয়া বাদ দিয়ে এখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করব। আমি তাদের (খৃষ্টানদের) জিজ্ঞেস করলাম, এ ধর্মের উৎপত্তি কোথায়? তারা বলল, সিরিয়ায়। তিনি বলেন, এরপর আমি আমার বাবার নিকট ফিরে এলাম। ইতিমধ্যে তিনি আমাকে খোঁজার জন্য লোক পাঠিয়েছিলেন এবং আমার কারণে তিনি সব কাজ থেকে বিরত ছিলেন। আমি আসার সাথে সাথে তিনি বলেন, হে বৎস! তুমি কোথায় ছিলে? আমি তোমাকে যে দায়িত্ব দেওয়ার সেটা কি দেইনি? আমি বললাম, হে আমার আব্বা! আমি কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, যারা গির্জায় সম্মানিত ছলাত আদায় করছিলেন। তাদের ধর্মাচরণ আমার খুবই ভাল লেগেছে। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাদের নিকট অবস্থান করেছি। তিনি বললেন, হে বৎস! ঐ দ্বীনের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। তোমার ও তোমার বাপ-দাদার ধর্ম তার চেয়ে অধিক উত্তম। আমি বললাম, না, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! কখনও তা নয়। ঐ দ্বীন আমাদের ধর্মের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
তিনি বলেন, অতঃপর তিনি আমাকে ভয় দেখালেন এবং পায়ে বেড়ি পরিয়ে আমাকে বাড়িতেই বন্দী করে রাখলেন। আমি খৃষ্টানদের নিকট সংবাদ পাঠালাম যে, যখন তোমাদের নিকট শামের খৃষ্টান ব্যবসায়ী কাফেলা আসবে তখন তোমরা আমাকে জানাবে। তিনি বলেন, (কিছুদিন পর) তাদের নিকট শামের এক খৃষ্টান ব্যবসায়ী কাফেলা আসে। অতঃপর তারা আমাকে সংবাদ প্রদান করে। আমি তাদের বললাম, যখন তারা তাদের প্রয়োজনাদি সেরে ফেলবে এবং দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবে, তখন আমাকে জানাবে। তিনি বলেন, যখন তারা তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা করল তখন আমাকে সংবাদ দিল। অতঃপর আমি আমার পা থেকে বেড়ি খুলে ফেললাম এবং তাদের সাথে সিরিয়ার পথে রওয়ানা করলাম।
সিরিয়া পৌঁছার পর আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের মধ্যে এ ধর্মের ব্যাপারে সর্বাধিক উপযুক্ত ব্যক্তি কে? তারা বলল, গির্জার পাদ্রী। তিনি বলেন, অতঃপর আমি পাদ্রীর নিকট গেলাম এবং বললাম, আমি এ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। অতএব আমি আপনার সাহচর্য লাভ করে গির্জাতেই আপনার খিদমত করতে চাই, আপনার নিকট শিক্ষা গ্রহণ করতে চাই এবং আপনার সাথে ছলাত আদায় করতে চাই। অতঃপর তিনি (পাদ্রী) আমাকে গির্জাতে প্রবেশ করতে বললে আমি তার সাথে গির্জায় প্রবেশ করলাম। তিনি বলেন, তিনি অসৎ লোক ছিলেন। মানুষজনকে তিনি ছদক্বা দেয়ার জন্য আদেশ করতেন এবং খুবই উৎসাহিত করতেন। কিন্তু যখন লোকজন তার নিকট (ছদকার) দ্রব্যাদি জমা দিত, তখন তিনি মিসকীনদের কিছুই না দিয়ে তা নিজের জন্য জমা করে রাখতেন। এভাবে তিনি স্বর্ণ-রৌপ্য দিয়ে সাতটি কলস পূর্ণ করেন। তিনি বলেন, আমি যখন এরূপ কার্যকলাপ দেখলাম তখন তার প্রতি ভীষণ ক্রুদ্ধ হলাম। (এর কিছুদিন পর) তিনি মারা গেলেন। খৃষ্টানগণ তাকে দাফন করার জন্য সমবেত হল। আমি তাদের বললাম, এ ব্যক্তিটি অসৎ ছিল। তোমাদের সে ছদক্বাহ করার আদেশ দিত ও উৎসাহিত করত বটে, কিন্তু যখন তোমরা তাকে সম্পদ দিতে তখন সে তা নিজের জন্য সঞ্চয় করে রাখত এবং মিসকীনদের তা থেকে কিছুই দিত না। তারা বলল, এ ব্যাপারে তোমার কি জানা আছে? তিনি বলেন, আমি বললাম, আমি তোমাদেরকে তার সম্পদ সম্পর্কে অবহিত করব। তারা বলল, আমাদের তা জানিয়ে দাও। তিনি বলেন, আমি তাদের ঐ লোকটির (সম্পদ গচ্ছিত রাখার) স্থান দেখালাম। তারা সেখান থেকে স্বর্ণ-রৌপ্যপূর্ণ সাতটি কলস বের করল। তিনি বলেন, তারা তা দেখে বলল, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমরা তাকে কখনও দাফন করব না। এরপর তারা তাকে শূলে চড়াল এবং তার উপর পাথর নিক্ষেপ করল। এরপর এক ব্যক্তিকে তার স্থলাভিষিক্ত করল। (মুসনাদে আহমাদ শরীফ হাদীছ শরীফ নং ২৩৭৮৮, সিলসিলায়ে ছহীহাহ শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ৮৯৪)। (চলবে)
-আল্লামা মুহম্মদ নাজমুল হুদা ফরাজী
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বীরত্ব মুবারক (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬২)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ উনার ময়দানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ একজন অপরজনকে প্রাধান্য দেয়ার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)