বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান:
একাডেমিক লাইব্রেরি
, ২৯শে জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৪ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) বিজ্ঞান মুসলমান উনাদেরই অবদান
ইসলামী শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চতর স্তর পর্যন্ত, প্রতিটি স্তরের ব্যুৎপত্তি মসজিদ থেকে। এসব মসজিদের প্রত্যেকটির নিজস্ব লাইব্রেরি ছিল যেখানে প্রয়োজনীয় কিতাব সংগ্রহ করা হয়েছিল, তবে এই ধরণের শিক্ষা স্বাভাবিকভাবে ধর্মতাত্ত্বিক অধ্যয়নের সাথে যুক্ত ছিল। পরবর্তীকালে ইসলামী সভ্যতায় ধীরে ধীরে মসজিদ কমপ্লেক্স এর বাইরে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উপর বিদ্যাপীঠ মক্তব, মাদ্রাসা, জামিয়া মাদ্রাসা (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়) গড়ে ওঠে।
ছবি: বাগদাদ শহর (৪র্থ হিজরী শতক; ১০ম ঈসায়ী শতক)
এসব প্রতিষ্ঠানেও ইসলামী শিক্ষার ব্যাপক সুযোগ ছিল। বাগদাদ, দামেশক, কায়রো, ফেজ, মসুল, কায়রাওয়ান, তিম্বুকতু, কর্ডোভা, ইস্পাহান, নিশাপুর এবং অন্যান্য স্থানের এসব বিদ্যাপীঠে ইসলামী বিষয়ের পাশাপাশি ইতিহাস, ব্যাকরণ, দর্শন, চিকিৎসাবিদ্যা, গণিত, ফারায়েজ, কৃষি, মহাকাশ, বিজ্ঞান ও ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ে পড়ানো হত। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণত নিজস্ব লাইব্রেরি থাকত যা অনেক ক্ষেত্রে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। মুসলিম স্বর্ণালী যুগে দামেস্কে প্রায় ১৫০টি মক্তব-মাদ্রাসা (স্কুল) ছিল এবং প্রায় ৭৫টি কায়রোতে ছিল।
সেলজুক আমলে (সিরিয়া, ইরাক ও ইরান) (৪২৮-৭০০ হিজরী, ৪০৩-৬৬৭ শামসী, ১০৩৬-১৩০০ খ্রিস্টাব্দ) জামিয়া মাদ্রাসাগুলো প্রাধান্য পায় এবং জামিয়া মাদ্রাসাগুলোর নিজস্ব লাইব্রেরি ছিল। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য একটি জামিয়া মাদ্রাসা ছিল আল-নিজামিয়া মাদ্রাসা, যা হিজরী ৪৫৬ (শামসী ৪৩১ খ্রিস্টাব্দ ১০৬৪) সনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্ব বাগদাদে, একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারসহ। এটা মনে করা হত যে নিজামিয়াতে একজন উস্তাজ বা অধ্যাপকের যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল, প্রতিটি নিয়োগের জন্য খলীফাকে নিশ্চিত করতে হতো। সেখানের উস্তাজ বা অধ্যাপক উনাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ও বিখ্যাত ব্যক্তি হলেন ইসলামী দার্শনিক ইমাম হযরত গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
সে সময়ের বাগদাদ ভ্রমণকারীরা শহরের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি হিসাবে এই জামিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শনের রেকর্ড রয়েছে। ইবনে জুবায়ের এই জামিয়া মাদ্রাসাকে বাগদাদের তৎকালীন ত্রিশটি জামিয়া মাদ্রাসার মধ্যে সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন। নিজামুল মুলক এই মাদ্রাসার গ্রন্থাগারের বই উপহার দিয়েছিলেন।
ঐতিহাসিক ইবনে আল-নাজ্জার ৬৪২ হিজরী (৬১১ শামসী, ১২৪৪ খ্রিস্টাব্দ) সালে ইন্তেকালের সময় আল-নিজামিয়ার লাইব্রেরিতে উনার কিতাবের সংগ্রহ দান করেছিলেন। তিনি তখনকার একটি সাধারণ রীতি অনুসরণ করেছিলেন যেভাবে গবেষক, খলীফা, গভর্নর এবং ধনী ব্যক্তিরা উনাদের প্রিয় বিদ্যাপীঠের গ্রন্থাগারকে সমৃদ্ধ করেতেন। এতে উনাদের নিজস্ব কাজ এবং মূল্যবান সংগ্রহসমূহ, জ্ঞান পিপাসুদের জন্য উন্মুক্ত কিন্তু নিরাপদ সংস্থান হতো। হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের সময় আল-নিজামিয়াহ এবং এর গ্রন্থাগারটির ব্যাপক ধ্বংস সাধন করা হয়।
ঐতিহাসিক সূত্রগুলি দেখায় যে হামাদানী যুবরাজ জাফর ইবনে মুহম্মদ ৩২৩ হিজরী (৩০১ শামসী, ৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ) সালে ইরাকের মসুলে একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাগারসহ একটি একাডেমি বা দারুল ইলম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সালতানাতের অন্যান্য সদস্যরা ত্রিপোলি এবং আলেপ্পোতেও একই কাজ করেছিলেন। এই একাডেমিক লাইব্রেরিগুলি ছাড়াও অন্যান্য একাডেমিক লাইব্রেরিগুলি বিভিন্ন ইসলামী শহরে যেমন দামেস্কের আল-নুরিয়াহ লাইব্রেরি, কায়রোতে আল-ফাদিলিয়াহ লাইব্রেরি স্থাপিত হয়েছিল। এছাড়াও ইস্পাহান, নিশাপুর, মার্ভসহ অন্যান্য শহরে অন্যান্য একাডেমিক লাইব্রেরিগুলো ছিল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুসলিম স্বর্ণালী যুগের লাইব্রেরির ধরণ ও পরিচালনা
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্বিতীয় আল হাকামের গ্রন্থাগার
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ প্রভূত ক্ষেত্রে সৌন্দর্য্য বর্ধন ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করণ (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ প্রভূত ক্ষেত্রে সৌন্দর্য্য বর্ধন ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করণ (১)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সম্মানিত মুকুটস্বরূপ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
কায়রোর ‘দারুল হিকমাহ’
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সম্মানিত মুকুটস্বরূপ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
একাডেমিক লাইব্রেরি
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্যক্তিগত পাঠাগার বা প্রাইভেট লাইব্রেরি
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্যক্তিগত পাঠাগার বা প্রাইভেট লাইব্রেরি
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মসজিদ গ্রন্থাগার
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)