ইলমে তাছাওউফ
একজন শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট মুরীদের যেমন হওয়া উচিত
, ০৬ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৪ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মুরীদ হওয়ার পরে কোনো প্রকার চু-চেরা, কিলকাল অর্থাৎ কোনো বিষয়ে কি, কেন বলতে পারবে না। বিনা প্রশ্নে সব বিষয় মেনে নিতে হবে। তবে হ্যাঁ, কোনো বিষয় বুঝে না আসলে আদবের সাথে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিবে।
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, একবার এক ব্যক্তি বিশিষ্ট ওলী হযরত আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার জন্য আসলো। এসে বললো, হুযূর! আমাকে বাইয়াত করে মুরীদ করে নিন।
মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী তাকে বললেন, বাবা! বাইয়াত হওয়ার বিষয়টি অনেক কঠিন। তুমি কি ছূফী উনাদের চাকচিক্যময় কথা শুনে বাইয়াত হতে এসেছো? যদি এ উদ্দেশ্যে এসে থাক তাহলে ফেরত চলে যাও। আর তা না হয়ে যদি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি-রিযামন্দি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে এসে থাকো এবং এজন্য তোমার জানবাজি রাখতে পারো তাহলে তুমি বাইয়াত হতে পারো। সে ব্যক্তি বললো, হুযূর! আমি মহান আল্লাহ পাক উনার ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি-রিযামন্দি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে এসেছি। লোকটির কথা শুনে তিনি প্রথমেই তাকে পরীক্ষা করার জন্য কালিমা শরীফ পাঠ করতে বললেন। সে ব্যক্তি কালিমা শরীফ পাঠ করলো-
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”
তিনি বলেন, না, তুমি এভাবে পাঠ করো-
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ اَبُوْ بَكْرٍ شِبْلِىْ رَسُوْلُ اللهِ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আবূ বকর শিবলী রসূলুল্লাহ”
এটা শুনে সে ব্যক্তি ভয় পেয়ে গেলো। তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে সে চলে গেলো। কিছুদূর যাওয়ার পর সে মনে মনে ফিকির করতে লাগলো, হযরত আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তো মশহূর ওলী, বিখ্যাত আলিম, উনার মতো ব্যক্তিত্ব তো কালিমা শরীফ পরিবর্তন করে তা’লীম দেয়ার কথা নয়। নিশ্চয়ই এমন তা’লীম দেয়ার পিছনে কোনো না কোনো রহস্য নিহিত রয়েছে। তাই সে পুনরায় আসলো এবং বললো, হুযূর! আমাকে বাইয়াত করান।
তিনি আবারো তাকে কালিমা শরীফ পাঠ করতে বললেন, সে ব্যক্তি পূর্বের মতোই পাঠ করলো-
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
তিনি বললেন, না। তুমি পাঠ করো-
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ اَبُوْ بَكْرٍ شِبْلِىْ رَسُوْلُ اللهِ
সে ব্যক্তি তাই পাঠ করলো। যখন পাঠ করলো তখন তিনি বললেন, হে ব্যক্তি! তুমি ইস্তিগফার তওবা করো।
কারণ পবিত্র কালিমা শরীফ তো এমন নয়, আমি পবিত্র কালিমা শরীফ উনার এমন ব্যতিক্রম তা’লীম দিয়ে তোমাকে পরীক্ষা করে দেখলাম তুমি আমার আদেশ নিষেধ মুবারক পালনের প্রতি কতটুকু দৃঢ়চিত্ত। তোমার হুসনে যন বা সুধারণা কতটুকু গভীর সেটা দেখা। কারণ স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি সুদৃঢ় হুসনে যন ও বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা ব্যতীত কোন সালিক বা মুরীদের পক্ষে কস্মিনকালেও ইছলাহ হাছিল করা সম্ভব নয়। যখন তুমি স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আদেশ নিষেধ মুবারক বিনা চু-চেরা, বিনা প্রশ্নে, বিনা সন্দেহে মেনে নিয়ে আমলে বাস্তবায়নের কোশেশ করতে পারবে তখনই কেবল মুরীদ হওয়া এবং বাইয়াত হওয়া সার্থক হবে। সুবহানাল্লাহ!
মূলত কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি হচ্ছেন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বায়িম-মাক্বাম।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلشَّيْخُ فِي أَهْلِهٖ كَالنَّبِيِّ فِيْ أُمَّتِهٖ وَفِىْ رِوَايَةٍ اَلشَّيْخُ لِقَوْمِهٖ كَالنَّبِىِّ فِىْ اُمَّتِهٖ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাদের উম্মতের নিকট যেরূপ সম্মানিত ও অনুসরণীয় ঠিক তেমনি শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি উনার মুরীদের নিকট তদ্রƒপ সম্মানিত ও অনুসরণীয়। (মাকতুবাত শরীফ, দায়লামী শরীফ, জামিউল জাওয়ামে, আল মাক্বাছিদুল হাসানাহ, তানযীহুশ শরীয়াহ, আল মীযান, আল জামিউছ ছগীর, আদ দুরারুল মুনতাশিরাহ ইত্যাদি)
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সরাসরি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট বাইয়াত হয়ে উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ারের মাধ্যমে যাহির-বাতিন ইছলাহ লাভ করেছেন, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক-রিযামন্দি মুবারক হাছিল করেছেন।
পরবর্তী উম্মত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বায়িম-মাক্বাম হযরত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ও উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ারের মাধ্যমে যাহির-বাতিন ইছলাহ লাভ করে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত, মা’রিফাত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করবে।
অর্থাৎ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক-রিযামন্দি মুবারক কিভাবে হাছিল করা যায় সে বিষয়টি সম্পর্কে হযরত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনিই পূর্ণ ওয়াকিফ্হাল। যে কারণে পবিত্র ইলমে তরীক্বত উনার কিতাব ‘দেওয়ানে হাফিয’-এ বর্ণিত রয়েছে-
بمئے سجادہ رنگین کن گرت پیر مغاں گوید +کہ سالک بے خبر نبود زراہ ورسم منزلھا.
অর্থ: তোমার জ্ঞানবৃদ্ধ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যদি বলেন, তুমি তোমার জায়নামায শরাব দ্বারা রঙিন করে নাও, তবে তা করে নিও। কারণ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে হাছিল করার পথ ও নিয়ম-কানুন সম্পর্কে হযরত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনিই সম্যক অবগত।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)