ব্যাংকের ঋণ নিয়ে এখন মামলার আসামী জাতীয় পদকপ্রাপ্ত সফল কৃষকরা।
ঋণ দিয়েই দায় সারছে ব্যাংকগুলো। কৃষকদের জন্য নেই প্রশিক্ষণ-বীমার ব্যবস্থা। নেই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা।
পর্যাপ্ত বাজার সুবিধার ক্ষেত্রেও অনেক পিছিয়ে কৃষক। কৃষকদের দুর্ভোগ-দুর্দশায় রেখে কখনো দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
, ১৪ নভেম্বর, ২০২২ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মন্তব্য কলাম
জানা গেছে, পাবনার ঈশ্বরদীর স্বশিক্ষিত চাষী ময়েজ উদ্দিন বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করে কুলবাগানে ফুলের পরাগায়ন বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলো। এ কারণে কৃষিতে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১০ সালে পায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার। এরপর ব্যাংক থেকে তাকে ঋণ দেয়া হয়। কিন্তু ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে হরতাল ও অবরোধের কারণে উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম না পেয়ে সে খেলাপি হয়ে পড়ে। ব্যাংকের মামলায় এখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তার বিরুদ্ধে।
২০০৯ সালে জাতীয় ফল পদক পায় ঈশ্বরদীর লিচুচাষী আব্দুল জলীল। ২০১০ সালে অগ্রণী ব্যাংক তাঁকে ২০০ গরুর খামারের জন্য প্রকল্প ঋণ নিতে উৎসাহ দেয়। আব্দুল জলীল সে অনুযায়ী খামার করার পর ব্যাংক শেষ পর্যন্ত ঋণ দেয় মাত্র ৭৫ লাখ টাকা। তা-ও কিস্তিতে, দেরি করে। এর মধ্যে গ্রেস পিরিয়ড (ঋণ নেওয়ার পর যে সময়টুকু কিস্তি দিতে হয় না) শেষ হয়ে যায়। তখন ব্যাংক কিস্তি দাবি করে। কিন্তু ২০১৪ সালের হরতাল-অবরোধে দুধ বিক্রি করতে না পেরে লোকসানী হয় এবং খেলাপি হয়ে যায়। ২০১৫ সালে ব্যাংক মামলা করে দেয়। ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখন সুদসহ আড়াই কোটি টাকা দাবি করা হচ্ছে।
ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পায়। গাজর চাষের মুনাফা থেকে সে ৩০ বিঘা জমি কেনে। সেই জমিতে গরুর খামার করে। খামারে ১৭৫টি গরু ছিল। এ জন্য ২০১২ সালে সে ব্যাংকঋণ নেয় ৫ কোটি টাকা। কিন্তু দুধের ভালো দাম না পাওয়ায় খামার থেকে আয় করে ঋণ শোধ করতে পারেনি। ঋণখেলাপি হওয়া ও চেক প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় ব্যাংক মোট আটটি মামলা করেছে। এখন সব ফেলে ঢাকায় মামলার হাজিরা দিতেই জীবন শেষ তার।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, বাংলাদেশের কৃষকদের এখন বড় ঋণও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও ব্যবসার সুরক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। বাজার সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে না। তাদের সুরক্ষা বীমার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। বাজার পড়ে গেলে কিভাবে ফসল সংরক্ষণ করবে বা লাভজনক বিকল্প পণ্য উৎপাদন করবে সে বিষয়ে তাদেরকে কোনো নির্দেশনাই দেয়া হয়না। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শুধু ঋণ দিয়েই দায় সারছে। কৃষকদের যেমন সফলতা আছে তেমনি ব্যর্থতারও রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে কৃষকদের শুধু সফলতাকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ব্যর্থতার সময় তাদের পাশে কেউ থাকছেনা। ব্যর্থতাকে বা লোকসানী হওয়াকে চরম অপরাধের দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে।
ব্যাংকগুলোর ভাষ্যমতে- ঋণ দেয়া ব্যতিত কৃষকদের জন্য তাদের আলাদা কিছু করার কোনো সুযোগ নেই। অথচ বাংলাদেশে ব্যাংকগুলো প্রভাবশালীদের সুবিধা দেয়, তাদের জন্য আইনও পরিবর্তন করা হয়। বার বার তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়, বিভিন্ন ছাড় দেয়া হয়। বিপরীতে ব্যাংক কৃষক ও ছোট ব্যবসায়ীদের তাড়িয়ে বেড়ায়। একবার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলেই কৃষক হয়ে যায় গ্রেফতারের আসামী।
বাংলাদেশে ১ কোটি ৫২ লাখ পরিবার কোনো না কোনোভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু কৃষকদের জন্য কৃষি বীমা এখনো অবহেলিতই রয়ে গেছে। তাই ফসলের ক্ষতি হলে কৃষকদের আর করার কিছুই থাকেনা। কৃষকদের জন্য বাজার সুবিধাও প্রদান করা হয় না। কৃষকরা বাজারে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে এক প্রকার জিম্মি হয়ে আছে। বাজার পরিচালিত হচ্ছে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, মধ্যসত্ত্বভোগীদের হাতের ইশারায়। তারা যে দাম নির্ধারণ করে কৃষককে সেই দামেই পণ্য ছেড়ে দিতে হয়। নচেৎ কৃষকের গোলায় পচে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফলা কষ্টের মূল্যবান ফসল।
অথচ, কৃষিভিত্তিক অন্যান্য দেশগুলো বাংলাদেশের মতো কৃষি ব্যবস্থাপনায় পিছিয়ে নেই। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো (জাপান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি) কৃষকদের কাছে শুধু লোভনীয় ঋণই নিয়ে যায়না পাশাপাশি সেই ঋণ যাতে কৃষক ঠিকমতো কাজে লাগিয়ে দ্বিগুন মুনাফা অর্জন করতে পারে সে বিষয়ে বিশদ পরামর্শও প্রদান করে। তদারকি করে। কোন ফসল কোন মৌসুমে উৎপাদনে লাভ বেশি, ফসলের রোগবালাই থেকে বাচার উপায় ইত্যাদি বিষয়গুলো সমাধানের পুরো প্যাকেজ নিয়ে যায় তারা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ। দেশের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ গ্রামে বাস করে। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠির জীবীকা অর্জনের প্রধান উপাদান হচ্ছে কৃষিকাজ। দেশের প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ শ্রমিক কৃষি কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই দেশের কৃষকরা যদি অবহেলিত এবং বঞ্চিত থাকে তাহলে কখনই পরিপূর্ণ বলিষ্ট হতে পারবেনা বাংলাদেশের অর্থনীতি। এছাড়া, দেশের কৃষির যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে সরকার গর্ব করে থাকে সেই কৃষি স্বয়ংসম্পূর্ণতাতেও ভাটা পড়বে। কারণ কৃষি স্বয়ংসম্পূর্ণতার অন্যতম নিয়ামক হলো দেশের কৃষকরা।
তাই সরকারকে এ বিষয়ে গভীরভাবে গুরুত্ব দিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কৃষকদের ঋণ প্রদান নিঃসন্দেহে ভালো পদক্ষেপ। এটা কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবী। তবে এই ঋণ যাতে কৃষকরা ঠিকমতো কাজে লাগিয়ে উন্নতি করতে পারে এজন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন প্রদান করতে হবে, কৃষকদের জন্য লাভজনক বিমার ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষকদের স্বাধীন বাজার সুবিধা প্রদান করতে হবে। কৃষকরা লোকসানী হলেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা না করে তাদেরকে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ প্রদান করতে হবে। লোকসানের সময় তাদের জন্য অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান করতে হবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও বাংলাদেশে লিভ টুগেদারের স্রোত শুরু হয়েছে। লিভ টুগেদার কালচার ঠেকানোর নৈতিক ভিত্তি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের নেই। লিভ টুগেদার সমাজে যে ভয়াবহ ক্রাইম তৈরী করছে তা প্রতিহত করতে ইসলামী অনুশাসনের বিকল্প নেই।
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাজারে ভয়ংকর ঘন চিনি মিথ্যা ঘোষণায় আসছে আমদানি নিষিদ্ধ ঘন চিনি পুরুষত্বহানি, মূত্রাশয়ে ক্যান্সারের তথা জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর এই ঘন চিনি বন্ধে সরকারকে এখনি জিহাদ ঘোষণা করতে হবে
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: সেবা পেতে ঘুষকে স্বাভাবিক মনে করছে দেশের সিংহভাগ মানুষ। বছরে ঘুষ গ্রহণের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ঘুষই সমাজে সব অভাব থেকে অনিয়মের মূল কারণ।
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সমাজের স্রোত বা সময়ের সাথে আপোসকারীরা উলামায়ে হক্ব নয়। ইসলামী আহকাম ও আন্দোলন পদ্ধতি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় না। ইবনুল ওয়াক্ত নয়; কেবলমাত্র আবুল ওয়াক্ত উনারাই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ত্রাণকর্তা ও অনুসরণীয়।
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ডিজিটালাইজেশনের নামে শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশের ইন্টারনেট জগতে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শিশু-কিশোররা আক্রান্ত হচ্ছে অশ্লীলতায়। শিখছে অনৈতিকতা, বেহায়াপনা, হিংস্রতা।
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
রোগের খনি সাদা চিনি! বিপরীতে ব্র্যান্ডিং, যথাযথ প্রচারণার অভাবে অবহেলায় উপকারি দেশীয় লাল চিনি সরকারের উচিত, লাল চিনিকে বাজারসুলভ করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা।
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা গবেষণার দিকে আগ্রহী না হয়ে বিসিএস পরীক্ষায় আগ্রহী হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তহবিল বা অর্থায়ন আসার প্রক্রিয়াটি সরকারের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে হবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক স্থাপন হয়নি
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কাদিয়ানীদের মালিকানায় প্রাণ গ্রুপসহ বৃহৎ শিল্পগ্রুপগুলো দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে পথে বসানোর ষড়যন্ত্র করছে। অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। সরকারের আশু পদক্ষেপ কাম্য।
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে- সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কতিপয় ফযীলত মুবারক বর্ণনা
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও চরাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যর উন্নয়ন হয়নি
২৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অধিকাংশ টিকাই মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যুক্ত তথাকথিত করোনার টিকার ভয়াবহ ক্ষতি এখন সারা বিশ্বে বহুল আলোচিত
২৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
২৫০ বছর আগে আরব বণিকরা আবিষ্কার করেছিলেন নারিকেল দ্বীপ
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)