উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুক্বুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক (৯)
, ২৭ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আইন ও জিহাদ
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অর্থ: “তোমাদের জন্য তোমাদের যিনি মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: আয়াত শরীফ ২১)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বকালের সবার জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক। মাখলুকাতের সবার জন্যই তিনি অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। সঙ্গতকারণেই উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক জানা, বেশি বেশি আলোচনা-পর্যালোচনা করা সবার জন্যই আবশ্যক।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক উনার বিশেষ অংশ ‘পবিত্র জিহাদ’। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জিহাদ দুইভাগে বিভক্ত। প্রথমত: গাযওয়া বা বড় অভিযান। যে সমস্ত অভিযানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন, সেগুলোকে গাযওয়া বলা হয়। সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে, গাযওয়া মোট ৯টি। দ্বিতীয়ত: সারিয়া বা ছোট অভিযান। যে সমস্ত অভিযানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেননি, বরং প্রতিনিধি প্রেরণ করেছেন, সেগুলোকে সারিয়া বলা হয়। সারিয়ার সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে।
নিম্নে গাযওয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হলো।
৯. পবিত্র তাবুক জিহাদ
৯ম হিজরীর পবিত্র শা’বান শরীফ মাসে পবিত্র তাবুক জিহাদ সংঘটিত হয়। পবিত্র মদীনা শরীফ ও দামেস্কের (সিরিয়া) মধ্যবর্তী একটি স্থানের নাম তাবুক। যা পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে ৬৯০ কিলোমিটার দূরে এবং সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে ৬৯২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই যুদ্ধ ছিল দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধে আরবের কাফির ও মুনাফিকদের শেষ চেষ্টা। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রেরিত দূত হযরত হারিস ইবনে উমায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে রোম শাসক কর্তৃক শহীদ করাকে কেন্দ্র করে এ জিহাদের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় ও পবিত্র হুনাইন জিহাদ হতে ফিরে যখন পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন, এর কিছুদিন পর সিরিয়া হতে ফিরে আসা কতিপয় বণিক দলের মাধ্যমে সংবাদ আসলো যে, রোম শাসক হিরাক্লিয়াস পবিত্র মদীনা শরীফ আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ লক্ষ্যে সিরিয়া ও আরব সীমান্তে তারা এক বিশাল বাহিনী মোতায়েন করছে। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফায়ছালা মুবারক করলেন যে, হিরাক্লিয়াসের আক্রমণের অপেক্ষা না করে মুসলমানরা নিজেরাই আগে তাদের পথরোধ করে তাদেরকে প্রতিরোধ করবেন। তাই, তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে জিহাদের জন্য সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ মুবারক দিলেন।
পবিত্র তাবুক জিহাদকে উসায়রার জিহাদ বা সংকটময় অভিযানও বলা হয়। সে সময়টা ছিল পবিত্র মদীনা শরীফবাসী উনাদের প্রধান খাদ্য খেজুর পাকার সময়। সারা বছরের খেজুর উনাদের তখনই সংগ্রহ করতে হতো। এ সময় বাগান ছেড়ে যাওয়াটা ছিল কঠিন কাজ। পাশাপাশি সে সময়টা ছিল আরব অঞ্চলে তীব্র গরমের সময়। তাবুকের সফর ছিল অনেক দীর্ঘ ও দুর্গম। প্রায় পুরো পথই ছিল দুর্গম মরুভূমি।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশক্রমে ৩০ হাজার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তাবুক প্রান্তরে মুসলমান উনাদের আগমনের সংবাদে রোম শাসক হিরাক্লিয়াস চিন্তিত ও পেরেশান হয়ে পড়ে এবং কালবিলম্ব না করে সে সেখান থেকে তার বাহিনী প্রত্যাহার করে পালিয়ে যায়।
পবিত্র তাবুক জিহাদে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনেকে নিজেদের সমস্ত কিছু দিয়ে শরীক হন। আবার এ জিহাদকে কেন্দ্র করে মুনাফিকরা সবচেয়ে বেশি অপতৎপরতা চালায়। বলা হয়, জিহাদসমূহের মধ্যে তাবুক জিহাদকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়।
মহান আল্লাহ পাক তিনি মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উছীলায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া সম্পর্কে কুল উম্মাহকে সঠিক ইলম ও বিশুদ্ধ আক্বীদাহ এবং হুসনে হাছিল করার এবং তা হতে ইবরত-নছীহত হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
-আল্লামা আহমদ নুছাইর।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৭)
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৫)
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৬)
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
২৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৪)
২৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৫)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৪)
১৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৩)
১৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (২৩)
১২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরীমূলক কাজের ফিরিস্তি (৩)
১০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (২)
০৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)