উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুক্বুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক (৮)
, ২১ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৭ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অর্থ: “তোমাদের জন্য তোমাদের যিনি মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: আয়াত শরীফ ২১)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বকালের সবার জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক। মাখলুকাতের সবার জন্যই তিনি অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। সঙ্গতকারণেই উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক জানা, বেশি বেশি আলোচনা-পর্যালোচনা করা সবার জন্যই আবশ্যক।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক উনার বিশেষ অংশ ‘পবিত্র জিহাদ’। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জিহাদ দুইভাগে বিভক্ত। প্রথমত: গাযওয়া বা বড় অভিযান। যে সমস্ত অভিযানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন, সেগুলোকে গাযওয়া বলা হয়। সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে, গাযওয়া মোট ৯টি। দ্বিতীয়ত: সারিয়া বা ছোট অভিযান। যে সমস্ত অভিযানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেননি, বরং প্রতিনিধি প্রেরণ করেছেন, সেগুলোকে সারিয়া বলা হয়। সারিয়ার সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে।
নিম্নে গাযওয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হলো।
৮. পবিত্র হুনাইন জিহাদ
পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখনও পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান মুবারক করছেন এমন সময় সংবাদ আসে হাওয়াজিন গোত্র তার শাখা গোত্রগুলোকে মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে একত্রিত করেছে। ৪ হাজার মতান্তরে ৭ হাজার সৈন্যবাহিনীর পাশাপাশি রণাঙ্গনে তাদের সুদৃঢ় রাখার জন্য কৌশল হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে সবার পরিবার-পরিজন ও নিজেদের সহায়-সম্পত্তিও উপস্থিত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১২ হাজার মতান্তরে ১৪ হাজার মুসলমান নিয়ে অষ্টম হিজরীর পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাসের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র মক্কা শরীফ হতে হাওয়াজিন গোত্রের অবস্থানস্থলের দিকে রওয়ানা দেন। পবিত্র মক্কা শরীফ হতে তায়েফের দিকে যেতে পথিমধ্যে হুনাইন নামক স্থানে হাওয়াজিন গোত্রের অবস্থান। সে হিসেবে এ জিহাদ গাযওয়াতু হুনাইন নামে অভিহিত।
এ জিহাদ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ فِيْ مَوَاطِنَ كَثِيرَةٍ ۙ وَّيَوْمَ حُنَيْنٍ ۙ إِذْ أَعْجَبَـتْكُمْ كَثْـرَتُكُمْ فَـلَمْ تُـغْنِ عَنْكُمْ شَيْـئًا وَّضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْـتُم مُّدْبِرِيْنَ. ثُمَّ أَنْـزَلَ اللهُ سَكِيْـنَـتَهٗ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَعَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَأَنْـزَلَ جُنُـوْدًا لَّـمْ تَـرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا ۚ وَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكَافِرِيْنَ.
অর্থ: অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি অনেক জায়গায় আপনাদেরকে সাহায্য করেছেন এবং হুনাইনের দিনও সাহায্য করেছেন। যেহেতু আপনাদের সংখ্যাধিক্য দেখে আপনারা খুশি হয়েছেন, তবে মনে রাখবেন সংখ্যাধিক্য কোনো ফায়দা দিতে পারেনা। প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও জমিন আপনাদের জন্য সংকীর্ণ মনে হয়েছিল। অতঃপর আপনারা (জিহাদের কৌশল হিসেবে) পিছনে সরে এসেছিলেন। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় সাকিনা নাযিল করলেন উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি (উনার মুবারক উছীলায়) এবং মু’মিন উনাদের প্রতি। আর এমন সৈন্য নাযিল করলেন যাদেরকে আপনারা দেখতে পাননা এবং কাফিরদেরকে শাস্তি দিয়েছেন। এটা কাফিরদের বদলা। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ, সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২৫)
মুসলমান উনারা হুনাইন নামক স্থানের কাছাকাছি যখন পৌঁছেন, তখন জিহাদের নিয়ম ভঙ্গ করে কাফিররা পাহাড়ের উপর থেকে ও গাছের আড়াল থেকে তীর নিক্ষেপ করতে থাকে। এমতাবস্থায় কাফিরদের তীর হতে নিজেদের রক্ষার্থে জিহাদের কৌশল হিসেবে মুসলমানগণ উনারা প্রথমত নিজেদের অবস্থান হতে পিছনে সরে যান। এরপর সবাই একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে কাফিরদেরকে প্রতিরোধ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ গায়েবী মদদের ফলে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত প্রশিক্ষিত কাফিররা ছত্র-ভঙ্গ হয়ে যায়। তারা নিজেদের পরিবার-পরিজন ও সহায়-সম্পত্তি সব ফেলে রেখে পালানোর জন্য বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। মুসলমানগণ উনারা কাফিরদেরকে বহুদূর পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে যান। তাদের সেনা বাহিনী পুরোপুরি ভেঙ্গে যায়। এ জিহাদেও মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে মুসলমানগণ উনাদেরকে সুস্পষ্ট বিজয় হাদিয়া করেন।
পবিত্র হুনাইন জিহাদে ৭০ টা কাফির নিহত হয়। তাদের নিয়ে আসা অস্ত্র, ধন-সম্পদ, রসদ, সামগ্রী, নারী, শিশু, পশুপাল সবকিছুই মুসলমান উনাদের হস্তগত হয়। হিসাব অনুযায়ী- যুদ্ধবন্দী ৬ হাজার, উট ২৪ হাজার, বকরি ৪০ হাজারের বেশী। চাঁদি ৪ হাজার উকিয়া। অর্থাৎ ১ লাখ ৬০ হাজার দিরহাম।
-আল্লামা আহমদ নুছাইর।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৭)
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৫)
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৬)
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
২৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৪)
২৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৫)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরী কাজের ফিরিস্তি (৪)
১৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৩)
১৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (২৩)
১২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির কুফরীমূলক কাজের ফিরিস্তি (৩)
১০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (২)
০৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)