উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুক্বুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক (৭)
, ১৪ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ৩১ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অর্থ: “তোমাদের জন্য তোমাদের যিনি মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: আয়াত শরীফ ২১)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বকালের সবার জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক। মাখলুকাতের সবার জন্যই তিনি অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। সঙ্গতকারণেই উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক জানা, বেশি বেশি আলোচনা-পর্যালোচনা করা সবার জন্যই আবশ্যক।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক উনার বিশেষ অংশ ‘পবিত্র জিহাদ’। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জিহাদ দুইভাগে বিভক্ত। প্রথমত: গাযওয়া বা বড় অভিযান। যে সমস্ত অভিযানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন, সেগুলোকে গাযওয়া বলা হয়। সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে, গাযওয়া মোট ৯টি। দ্বিতীয়ত: সারিয়া বা ছোট অভিযান। যে সমস্ত অভিযানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেননি, বরং প্রতিনিধি প্রেরণ করেছেন, সেগুলোকে সারিয়া বলা হয়। সারিয়ার সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে।
নিম্নে গাযওয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হলো।
৭. পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়
হুদাইবিয়ার চুক্তিপত্রে যেসব শর্ত লিপিবদ্ধ করা হয়েছিলো, সেসব শর্তাবলী মুসলমানগণ যথাযথভাবে মেনে চলতেছিলেন। কিন্তু পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থানকারী কুরাঈশরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিভিন্নভাবে শর্ত ভঙ্গ করে। এতে তারা ভীত হয়ে পড়লো। তারা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দ্রুত পবিত্র মদীনা শরীফে প্রেরণ করলো, যাতে তিনি চুক্তির বিষয়টির একটি ফায়ছালা করে চুক্তি নবায়ন করেন। তখনো তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে আসেন কিন্তু কোন চূড়ান্ত ফায়সালা লাভ করতে পারেননি বিধায় ফিরে যান।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন। তিনি উদ্দেশ্য কাউকেই বললেন না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৮ম হিজরীর পবিত্র ১০ই রমাদ্বান শরীফ আছরের নামাযের পর দশ হাজার মুসলমানের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার উদ্দেশ্যে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে রওয়ানা দিলেন। পথে আরো দুই হাজার মুসলমান এই মুসলিম বাহিনীর সাথে একত্রিত হলেন। ‘কাদীদ’ নামক স্থানে পৌঁছার পর মাগরিবের সময় হলে সকলেই সেখানে বসে ইফতার করলেন। অতঃপর মুসলিম বাহিনী মনজিলের পর মনজিল অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হতে লাগলেন। ‘মাররায যাহরান’ নামক স্থানে পৌঁছে মুসলমানগণ শিবির স্থাপন করেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশে শিবিরের সামনে আগুন জ্বালানো হলো। পবিত্র মক্কা শরীফ শহরের মুশরিকরা মুসলমানের এই আগমন সম্পর্কে একেবারেই বে-খবর ছিলো। তারা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বাইরে বেরিয়ে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি দেখে পেরেশান হয়ে পড়লো। মরু উপত্যকা ছুবহে ছাদিকের শুভ প্রভাতের সাথে সাথে আযান ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠলো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ঘুম থেকে উঠলেন এবং ফযরের নামায জামায়াতে আদায় করলেন। নামাযান্তে রওয়ানার আদেশ হলো।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আজ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে মর্যাদা দান করবেন। আজ পবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে গিলাফ পরানো হবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নগরময় ঘোষণা করে দিন, “যে ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করবে, সে নিরাপত্তা লাভ করবে। যে ব্যক্তি হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়িতে আশ্রয় নিবে সে নিরাপত্তা লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে অবস্থান করবে, সেও নিরাপত্তা লাভ করবে এবং যে ব্যক্তি মসজিদে হারাম তথা কা’বা শরীফ উনার মধ্যে আশ্রয় নিবে সেও নিরাপত্তা লাভ করবে।”
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ শহরবাসীদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তিনি ঘোষণা মুবারক করেন, “আজ তোমাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই; যাও তোমরা সবাই মুক্ত স্বাধীন।”
পবিত্র ১৭ই রমাদ্বান শরীফ পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় সূচিত হয়। সেই সময় পর্যন্ত পবিত্র কা’বা শরীফ-উনার ভিতরে ৩৬০টি মূর্তি ছিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশ মুবারক দেন। পবিত্র কা’বা শরীফ যখন পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করা হলো- তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিতরে প্রবেশ করে নামায আদায় করেন। এরপর তিনি হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন এবং ইহরাম বাঁধা ব্যতীত তাকবীর, তাহলীল, হামদ, যিকর ইত্যাদি পাঠ করার মাধ্যমে পবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ করেন। অতঃপর তিনি বিভিন্ন স্থানের মূর্তিপূজার কেন্দ্র ও মন্দিরগুলো ধ্বংস করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। উনার মুবারক নির্দেশ পালিত হলো। পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে প্রতিমা পূজা বিদায় নিলো। এরপর দলে দলে লোকজন পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করতে থাকলেন। অল্প সময়ের মধ্যে সারা আরবময় পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সাড়া পড়ে গেলো। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত নিয়ে দূত প্রেরিত হতে থাকেন।
-আল্লামা আহমদ নুছাইর।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বীরত্ব মুবারক (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬২)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ উনার ময়দানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ একজন অপরজনকে প্রাধান্য দেয়ার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)