উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুক্বুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক (৬)
, ০৬ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৩ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২১ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ অগ্রহায়ণ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আইন ও জিহাদ
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অর্থ: “তোমাদের জন্য তোমাদের যিনি মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: আয়াত শরীফ ২১)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বকালের সবার জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক। মাখলুকাতের সবার জন্যই তিনি অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। সঙ্গতকারণেই উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক জানা, বেশি বেশি আলোচনা-পর্যালোচনা করা সবার জন্যই আবশ্যক।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক উনার বিশেষ অংশ ‘পবিত্র জিহাদ’। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জিহাদ দুইভাগে বিভক্ত। প্রথমত: গাযওয়া বা বড় অভিযান। যে সমস্ত অভিযানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন, সেগুলোকে গাযওয়া বলা হয়। সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে, গাযওয়া মোট ৯টি। দ্বিতীয়ত: সারিয়া বা ছোট অভিযান। যে সমস্ত অভিযানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেননি, বরং প্রতিনিধি প্রেরণ করেছেন, সেগুলোকে সারিয়া বলা হয়। সারিয়ার সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে।
নিম্নে গাযওয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হলো।
৬. পবিত্র খাইবার জিহাদ
৭ম হিজরী শরীফ উনার মুহররমুল হারাম শরীফ মাসে খাইবারের জিহাদ মুবারক সংঘটিত হয়। পবিত্র মদীনা শরীফ হতে ৬০ অথবা ৮০ মাইল উত্তরে খাইবার একটি বড় শহরের নাম। শহরটি অনেকগুলি দুর্গবেষ্টিত এবং চাষাবাদ যোগ্য জমি সমৃদ্ধ। এ অঞ্চলে বড় বড় ৮টি দুর্গ ছাড়াও ছোট-বড় আরও কিছু দুর্গ ও কেল্লা ছিল। পবিত্র মদীনা শরীফ হতে বিতারিত হয়ে ইহুদীরা খাইবারে গিয়ে বসতি স্থাপন করে এবং সেখান থেকেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে সকল প্রকারের ষড়যন্ত্র করে। সহজ কথায় খাইবার ছিল তখন মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সকল ষড়যন্ত্রের মূল কেন্দ্র। তাই এই ইহুদীদেরকে দমন করার জন্য এই অভিযান পরিচালিত হয়।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুদায়বিয়ার সন্ধি শেষে পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে আসেন এবং কিছুদিন অবস্থান মুবারক করেন। অতপর সপ্তম হিজরীর শুরুর দিকে খাইবার অভিমুখে রওনা করেন। পবিত্র বাইয়াতুর রিদ্বওয়ানে অংশগ্রহণকারী ১৪০০ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যুদ্ধ কৌশল বিবেচনা করে উত্তর দিকে সিরিয়ার পথ ধরে খাইবার অভিমুখে এগিয়ে যান। যাতে বনু গাত্বফানের পক্ষ থেকে ইহুদীদের সাহায্য প্রাপ্তির পথ বন্ধ করা যায় এবং ইহুদীরাও এপথে পালিয়ে যাবার সুযোগ না পায়।
খাইবার দূর্গ অবরোধ করা হয়। কয়েকদিন যাবৎ কাফিরদের সাথে বেশ জিহাদ সংঘটিত হয়। কিন্তু প্রতিদিনই চূড়ান্ত কোনো ফায়ছালা না হয়েই জিহাদ শেষ হয়ে যায়। এমনিভাবে একদিন জিহাদ শেষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন যে, আগামীকাল সকালে আমি এমন এক মহান ব্যক্তি উনার হাত মুবারকে ইসলামী ঝা-া মুবারক অর্পণ করবো, উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলিম বাহিনীকে বিজয় হাদিয়া করবেন। অতঃপর সকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দস্ত মুবারকে ইসলামী ঝা-া মুবারক অর্পণ করলেন। আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সেনাপতিত্বে কাফিরদের সাথে তুমুল জিহাদ হলো। এক পর্যায়ে কাফিররা পালিয়ে খাইবার দুর্গে আশ্রয় নিলো। তখন ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাইবার দুর্গের প্রধান ফটক ধরে সজোরে টান দিলেন। ফলশ্রুতিতে লোহার সেই বিশাল ফটক উনার হাত মুবারকে চলে আসলো। অতঃপর কাফিরদের সাথে পুনরায় তুমুল জিহাদ শুরু হলো। আর জিহাদের সেই সময়ে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুর্গের সেই ফটককে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করলেন। কাফিররা নাস্তানাবুদ হলো। জিহাদ শেষে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত দুর্গের সেই ফটককে ফেলে দিলেন। তখন আশিজন পালোয়ান একত্রিত হয়েও ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত সেই ফটক উঠাতে পারলো না। অন্যান্য জিহাদের ন্যায় খাইবার জিহাদেও মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলিম বাহিনীকে সুমহান ফাতহুম মুবীন হাদিয়া করলেন।
সম্মানিত জিহাদ মুবারক শেষে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২৫শে মুহররমুল হারাম শরীফ লাইলাতু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ‘আশিরাহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হন। সুবহানাল্লাহ!
-আল্লামা আহমদ নুছাইর।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৪)
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত বনু কায়নুকার জিহাদ (২)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৯)
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)