উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুক্বুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক (৩)
, ১৬ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৩ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ০১ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
অর্থ: “তোমাদের জন্য তোমাদের মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছেন সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: আয়াত শরীফ ২১)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বকালের সবার জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক। মাখলুকাতের সবার জন্যই তিনি অনুসরনীয়-অনুকরনীয়। সঙ্গতকারণেই উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক জানা, বেশি বেশি আলোচনা-পর্যালোচনা করা সবার জন্যই আবশ্যক।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক উনার বিশেষ অংশ ‘পবিত্র জিহাদ’। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জিহাদ দুইভাগে বিভক্ত। প্রথমত, গাযওয়া বা বড় অভিযান। যে সমস্ত অভিযানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন, সেগুলোকে গাযওয়া বলা হয়। সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে, গাযওয়া মোট ৯টি। দ্বিতীয়ত, সারিয়া বা ছোট অভিযান। যে সমস্ত অভিযানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেননি, বরং প্রতিনিধি প্রেরণ করেছেন, সেগুলোকে সারিয়া বলা হয়। সারিয়ার সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে।
নিম্নে গাযওয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হলো।
৩. পবিত্র বনূ মুস্তালিক জিহাদ
পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে ৯ মান্যিল দূরে বনূ মুছ্ত্বলিক্বের অধীনে ‘আল মুরাইসী’ নামে একটি কূপ ছিলো। বনূ মুছ্ত্বলিক্বের জিহাদে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে এই কূপের নিকট অবস্থান মুবারক করেন বিধায় এই জিহাদকে ‘মুরাইসী’র জিহাদও’ বলা হয়।
বনূ মুছ্ত্বলিক্ব¡ ছিলো কুরাইশদের অন্যতম মিত্রশক্তি। তারা উহুদের জিহাদে কুরাইশদের সহযোগিতা করেছিলো এবং তাদের সাথে সরাসরি জিহাদে অংশগ্রহণও করেছিলো। ৫ম হিজরীর শেষের দিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সংবাদ আসে যে, বনূ মুছ্ত্বলিক্বের প্রধান হযরত হারিছ ইবনে আবূ দ্বিরার আলাইহিস সালাম (তখনও ঈমান আনেননি) তিনি কুরাইশ ও মুনাফিক্বদের ওয়াস্ওয়াসায় পড়ে নিজের ও আরবের অন্যান্য গোত্রের লোকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনী নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সংবাদ পেয়ে প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য হযরত বুরাইদাহ্ ইবনে হুছাইব আসলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পাঠান। তিনি সেখানে পৌঁছে সরাসরি হযরত হারিছ ইবনে আবূ দ্বিরার আলাইহিস সালাম উনার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলেন, ঘটনা সত্য। তিনি সাথে সাথে ফিরে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ প্রকৃত অবস্থা জানান। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে খুব দ্রুত জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নির্দেশ মুবারক দেন। নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী সকলেই খুব দ্রুত প্রস্তুত হয়ে যান এবং রওয়ানা হন। সময়টি ছিলো ৫ম হিজরীর সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার মাঝামাঝি সময়।
পবিত্র মদীনা শরীফ হতে রওয়ানা করে বনূ মুছ্ত্বলিক্বের ‘আল মুরাইসী’ নামক কূপের নিকট উনারা অবস্থান গ্রহণ করেন। কাফিরদের সম্মিলিত বাহিনীর নিকট সব খবর পৌঁছলে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। অন্যান্য আরব গোত্র জিহাদের ইচ্ছা ত্যাগ করে যার যার মত বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। সাইয়্যিদুনা হযরত হারিছ আলাইহিস সালাম উনার সাথে শুধু উনার গোত্রের লোকেরাই অবশিষ্ট থাকে। তারা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায় এবং দীর্ঘক্ষণ তীর-বর্শা ছুড়ে ছুড়ে মুসলমান উনাদেরকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। অবশেষে সম্মানিত মুসলিম বাহিনী হঠাৎ এক সাথে আক্রমণ করে শক্র বাহিনীকে পরাজিত করেন। এই জিহাদে মুসাফি’ ইবনে ছাফ্ওয়ানসহ ১১ জন কাফির মারা যায় এবং অন্যরা সকলে বন্দী হয়। কাফিরদের হাতে মুসলমান উনাদের মধ্য হতে কেউ শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেননি। তবে অজান্তে হযরত উবাদা ইবনে সামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে হযরত হিশাম ইবনে সাবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামে একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। শত্রু পক্ষের পুরুষ-মহিলা-শিশু মিলে প্রায় ৬০০ জন বন্দী হয় এবং তাদের দুই হাজার উট, পাঁচ হাজার ছাগল-ভেড়া গনীমত হিসেবে মুসলমান উনারা লাভ করেন।
এ জিহাদের পর পবিত্র ২৮শে যিলহজ্জ শরীফ লাইলাতুল জুমু‘আহ্ শরীফ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছামিনাহ্ আলাইহাস সালাম উনার ‘আযীমুশ শান পবিত্র নিসবতে ‘আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হন। সুবহানাল্লাহ!
-আল্লামা আহমদ নুছাইর।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)