উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৪)
, ২২ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২২ হাদি আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ২১ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রি:, ০৮ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-
إِنَّ عَلٰى أَبْوَابِ السَّلَاطِيْنَ فِتْنًا كَمُبَارَكِ الْإِبِلِ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَا يُصِيْبُوْنَ مِنْ دُنْيَاهُمْ شَيْئًا إِلَّا أَصَابُوْا مِنْ دِيْنِكُمْ مِثْلَه أَوْ قَالَ مِثْلَيْهِ
অর্থ: নিশ্চয়ই শাসকদের দরবার বিভিন্ন রকম ফিতনায় পরিপূর্ণ, যেমন উটের বসতস্থল নাপাকে পূর্ণ। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যার কুদরতী হাত মুবারকে আমার প্রান মুবারক! লোকেরা শাসকদের দুনিয়া থেকে সামান্য কিছুও লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না এর বিপরীতে তারা এর সমপরিমাণ বা দ্বিগুণ তোমাদের দ্বীন নষ্ট করে। নাঊযুবিল্লাহ! (জামিউ বায়ানিল ইল্ম ওয়া ফাদ্বলিহী ১/৩২৯)
অর্থাৎ যারাই শাসকদের দরবারে যাবে কিছু দুনিয়াবী ফায়দা হাছিল করার জন্য। তাদেরকে অবশ্যই দুনিয়া হাছিল করতে দ্বীনকে বিসর্জন দিতে হবে। অন্যথায় তাদের থেকে কিছুই হাছিল করতে পারবে না।
হযরত হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি ফিতানের পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ অধিক জানতেন। তিনি এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন-
إِيَّاكُمْ وَمَوَاقِفَ الْفِتَنِ قِيْلَ وَمَا مَوَاِقفُ الْفِتَنِ يَا أَبَا عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ؟ قَالَ أَبْوَابُ الْأُمَرَاءِ يَدْخُلُ أَحَدُكُمْ عَلَى الْأَمِيْرِ فَيُصَدِّقُهُ بِالْكَذِبِ وَيَقُوْلُ لَه مَا لَيْسَ فِيْهِ
অর্থ: সাবধান! ফিতনার চারণভূমি থেকে তোমরা বেঁচে থাকবে। জিজ্ঞেস করা হল, হে হযরত আবূ আব্দিল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! ফিতনার চারণভূমি কোনটি'? তিনি উত্তর দিলেন, আমির-উমরাদের দরবার। তোমাদের কেউ আমীরের দরবারে যাবে, গিয়ে তার মিথ্যায় সমর্থন দেবে কিংবা তার (প্রশংসায়) এমন কথা বলবে যা বাস্তবে তার মাঝে নেই। (জামিউ বায়ানিল ইল্ম ওয়া ফাদ্বলিহী ১/৬৩৯, শরহুস সুন্নাহ ১৪/২৯৫, হিলইয়াতুল আউলিয়া ১/২৭৭, শুআবুল ঈমান ১২/৩৩ ইত্যাদি)
উটের পাল একসাথে থাকলে বিশৃঙ্খলা করে। একটা এদিকে চলে যায়, একটা অন্যদিকে। গুঁতোগুঁতি শুরু করে দেয়। পাশের লোকের উপরও অনেক সময় হামলে পড়ে। এজন্য উটের আস্তাবলে নামায পড়তে পবিত্র হাদীছ শরীফে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ সেখানকার কোনো স্থানই নাপাকী থেকে অশংকা মুক্ত নয়। ঠিক শাসকদের দরবারও এমন ফিতনার আখড়া। তার কোনো স্থানই ফিতনার আশংকা মুক্ত নয়।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-
إِنَّ الرَّجُلَ لَيَدْخُلُ عَلَى السُّلْطَانِ وَمَعَهُ دِينُهُ فَيَخْرُجُ مَا مَعَهُ مِنْهُ شَيْءٌ قِيلَ لِمَ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ؟ قَالَ لِأَنَّهُ يُرْضِيْهِ بِمَا يَسْخَطُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْهِ
অর্থ: কোনো লোক দ্বীনদার অবস্থায় শাসকের দরবারে প্রবেশ করে, এরপর যখন বেরিয়ে আসে দ্বীনের কিছুই তার সাথে থাকে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হে হযরত আবূ আব্দির রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এটা কীভাবে সম্ভব? তিনি উত্তর দিলেন, সে এমন কিছুর মাধ্যমে ঐ শাসককে সন্তুষ্ট করে আসে যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যান। (আল ইবানাতুল কুবরা ২/৬০১, আদাবুদ দুনিয়া ওয়াদ দ্বীন ১/৩৫০)
হযরত জাবির ইবনে আব্দিল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে-
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَرْضَى سُلْطَانًا بِسَخَطِ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ خَرَجَ مِنْ دِيْنِ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনাকে অসন্তুষ্ট করার মাধ্যমে কোনো শাসককে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করবে, সে মহান আল্লাহ পাক উনার দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে। (আল মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাইন ৪/১০৪)
এজন্যই যেসব আলেমরা শাসকের দরবারে যাওয়া-আসা করত পূর্ববর্তীগণ তাদেরকে অভিযুক্ত মনে করতেন। হেয় চোখে দেখতেন। দুনিয়াদার মনে করতেন। হযরত আবূ হাযিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
إِنَّ الْعُلَمَاءَ كَانُوْا يَفِرُّوْنَ مِنَ السُّلْطَانِ وَيَطْلُبُهُمْ وَإِنَّهُمُ الْيَوْمَ يَأْتُوْنَ أَبْوَابَ السُّلْطَانِ وَالسُّلْطَانُ يَفِرُّ مِنْهُمْ
অর্থ: আগের যামানায় আলিমগণ শাসকদের থেকে দূরে থাকতেন আর শাসকরা উনাদের খুঁজে বেড়াত। আর আজকালকার আলিমরা শাসকদের দরবারে গমন করছে আর শাসকরা তাদের থেকে দূরে থাকছে। (জামিউ বায়ানিল ইল্ম ওয়া ফাদ্বলিহী ১/৬৩৫, তারীখে ইবনে আবী খয়ছামাহ ৪/২৪৮)
একবার আমীর ইবনে হুবায়রার দরজার সামনে কিছু আলেমকে বসে থাকতে দেখে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদেরকে তিরস্কার করে বলেছিলেন-
أَمَا وَاللهِ لَوْ زَهِدْتُّمْ فِيْمَا عِنْدَ الْمُلُوْكِ الرَّغِبُوْا فِيْمَا عِنْدَكُمْ وَلٰكِنَّكُمْ رَغِبْتُمْ فِيْمَا عِنْدَهُمْ فَزَهِدُوْا فِيْمَا عِنْدَكُمْ فَضَحْتُمُ الْقُرَّاءَ فَضَحَكُمُ اللهُ
অর্থ: তোমাদের জন্য আফসোস! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! শাসকদের দুনিয়ার প্রতি যদি তোমরা অনীহা দেখাতে তাহলে তারা তোমাদের ইলমের প্রতি আগ্রহ দেখাত। কিন্তু তোমরা তাদের দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছ ফলে তারা তোমাদের ইলমের প্রতি অনাসক্ত হয়ে পড়েছে। আলিমদেরকে তোমরা অসম্মানের পাত্র বানিয়েছো, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন তোমাদেরকে লাঞ্ছিত করেন। (আল আমালি লিআবিল ক্বাসিম আয যুজাজি ১/১৩)
তাছাড়া বর্তমান সময়ে উলামায়ে সূ’দেরকে চেনার কিছু সহজ উপায় হলো- ১. যারা ছবি-ভিডিও করে ২. বেপর্দা হয় ৩. তন্ত্র-মন্ত্র করে, ভোটকে আমানত এবং ভোট দেয়াকে ওয়াজিব বলে ৪. মুশরিকদের মন্দির পাহারা দেয় এবং এতে উৎসাহিত করে ৫. কাফিরদের সাথে সম্প্রীতির কথা বলে ৬. শাসকদের সাথে মেলা-মেশা করে, তাদের দরবারে যাওয়া-আসা করে ইত্যাদি।
উল্লেখিত বিষয়গুলো যদি কোনো আলিমের মাঝে পাওয়া যায়। তাহলে সে যতো বড় কিছুই দাবি করুক না কেন তার সমস্ত দাবি বাতিল বলে গণ্য হবে এবং সে নিকৃষ্ট উলামায়ে সূ হিসেবেই পরিগণিত হবে।
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












