উদ্বেগজনিত হারে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা শিক্ষার ধরনকে কর্মক্ষেত্রের উপযোগী করে তোলার জন্য শীঘ্রই সক্রিয় ব্যবস্থা নিতে হবে
, ১৬ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ৩১ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১৪ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মন্তব্য কলাম
বিআইডিএসের গবেষণা অনুযায়ী, সার্বিকভাবে শিক্ষিতদের মধ্যে ৩৩ শতাংশের বেশি বেকার। আর এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যারা প্রথম শ্রেণি পেয়েছে, তাদের মধ্যে বেকারত্ব ১৯ থেকে সাড়ে ৩৪ শতাংশ। বিশেষ করে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম শ্রেণি প্রাপ্তদের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশই বেকার। স্নাতক পর্যায়ে এমন মেধাবীদের বেকারত্বের হার প্রায় ২৮ শতাংশ।
এদিকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া প্রতি তিনজনের একজনই বেকার বসে আছেন। আর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে জিপিএ-৫ পাওয়াদের মধ্যে ৩১ শতাংশের বেশি বেকার। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, কাজপ্রত্যাশীদের মধ্যে সপ্তাহে ন্যূনতম এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজের সুযোগ না পেলে বেকার হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশে এমন বেকার ২৭ লাখ। বিআইডিএসের গবেষণায় বলা হয়েছে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণি পেয়েও অনেকেরই চাকরি মেলে না।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের মধ্যে সম্পূর্ণ বেকার ৩৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। এদের ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ সার্বক্ষণিক এবং ১৮ দশমিক ১ শতাংশ পার্টটাইম বা খ-কালীন কাজে নিয়োজিত বেকার। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১১ দশমিক ২ শতাংশ। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এই হার ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ।
একজন অশিক্ষিত লোককে যতটা না কথা সহ্য করতে হয়, মানুষের বঞ্চনা শুনতে হয় তার চেয়ে হাজার গুন বেশি কথা শুনতে হয় আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকারদের। আমাদের দেশে শিক্ষার হার বেড়ে চলেছে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই, কিন্তু অপরপক্ষে চিন্তা করলে দেখা যায় শিক্ষিতের হার বাড়লেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। প্রতিবছর নতুন নতুন শিক্ষিত বেকার তৈরি হচ্ছে আমাদের দেশে।
এর অন্যতম কারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের চাহিদাকে বিবেচনায় না নেয়া। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা শ্রমবাজারমুখী না হওয়ায় প্রতিবছর দেশের শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইউজিসির তথ্য মতে, বাংলাদেশের জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেড় শতাধিক পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি। এছাড়া মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার্থী রয়েছে আরও কয়েক লাখ। কিন্তু দেশের এই শিক্ষা ব্যবস্থা ও শ্রমবাজারের চাহিদার মাঝে রয়েছে লক্ষণীয় ভারসাম্যহীনতা। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, শ্রমবাজারে যেসকল বিষয়ের চাহিদা বেশি আছে তুলনামূলক তাদের যোগান কম। আর যেসকল বিষয়ের চাহিদা তুলনামূলক কম সেসকল বিষয়ের যোগান বেশি। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমবাজারে এসব বিষয়ে শিক্ষিতদের জন্য কর্মসংস্থানের বিশেষ ঘাটতি রয়েছে। আবার বাণিজ্য ও বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়গুলোতে চাহিদা বেশি থাকলেও যোগানের পরিমাণ কম। এছাড়া এমন অনেক বিষয়ে স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর কোর্স চালু রয়েছে যেগুলোর শ্রমবাজারে কোন বিশেষ চাহিদা নেই বা এখনো তৈরি করা সম্ভব হয়নি। অথচ প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এরকম নতুন নতুন বিষয় চালু করার ঘটনা ঘটছে। একারণে শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ভারসাম্যহীনতার দুষ্ট চক্রে পড়ছে।
কিন্তু এই বেকারত্বের কারণ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ নয় বরং শ্রমশক্তির কর্ম দক্ষতার অভাব। শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণের সাথে সমানতালে কর্মদক্ষ হয়ে ওঠছে না। আর একারণেই মূলত এই বিশাল জনশক্তি জনসম্পদে পরিণত হতে পারছেনা। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো শ্রমবাজারের চাহিদা মোতাবেক জনশক্তি তৈরি করতে না পারায় দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যদি শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের দক্ষতা তৈরিতে সক্ষম হতো তাহলে এই ভারসাম্যহীনতা তৈরি হতো না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তাদের সিলেবাস প্রনয়ণ করছেনা।
দেশের চাকরির প্রস্তুতি পর্ব ও পড়াশুনার ধরণ একাডেমিক পড়াশুনা থেকে অনেকাংশেই আলাদা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার সাথে শ্রমবাজারের এরূপ ভারসাম্যহীনতার কারণে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায় যে, শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক পড়াশুনার তুলনায় চাকুরীর পড়াশুনায় বেশি মনোযোগী। বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কেন্দ্রীয় পাঠাগারে গেলে দেখা যায় যে, শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশুনার পরিবর্তে চাকুরীর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর কারণ যেহেতু শিক্ষার্থীরা মনে করছে যে, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে কর্মক্ষেত্রের সামঞ্জস্য নেই তাই স্নাতক পর্বের শুরুতেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চাকুরীর পড়াশুনার প্রতি ঝুঁকছে।
সঙ্গতকারণেই দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশেষত সিলেবাসকে শ্রমবাজারের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ইন্টার্নশীপের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রের বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কম চাহিদা সম্পন্ন বিষয়ের তুলনায় শ্রমবাজারে বেশি চাহিদা সম্পন্ন বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের তাত্ত্বিক শিক্ষাকে বাস্তবতার সাথে একীভূত করে প্রায়োগিক দক্ষতা বাড়াতে হবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কর্মক্ষম জনশক্তি তথা কর্মক্ষমতার স্বর্ণযুগে বাংলাদেশ বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭৫ জনই কর্মক্ষম
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
কেন বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও পাহাড়িদের কোনভাবেই ‘আদিবাসী’ বলার সুযোগ নেই? (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
জুয়ার নেশায় বুদ হচ্ছে শিশু-কিশোররা-শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন
২২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে শহীদ করা জায়নবাদী তথা বর্বর ইহুদীরা কাপুরুষতার প্রমাণ দিয়ে অতীত ইতিহাস থেকে একের পর এক গুপ্তহত্যা করে আসছে ইহুদীদের গুপ্তহত্যার অনেক নিন্দা, ধিক্কার এবং প্রচারণা ও প্রতিহতের প্রচেষ্টা দরকার (পর্ব-১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শুধু যুবকরাই নয় এখন এনার্জি ড্রিংকসে বুদ হচ্ছে শিশুরাও কর ফাঁকি দিতে অনেক এনার্জি ড্রিংকস হয়ে গেছে কোমল পানীয় জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অবিলম্বে এনার্জি ড্রিংকস বন্ধ করতে হবে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রে পড়েই দুনিয়াদার মালানারা বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফ বাদ দিয়েছে। পর্নোগ্রাফি, মাদক থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে চাইলে বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফও বেশি বেশি করতে হবে।
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ডানে সেলফি বামে সেলফি, সেলফি সেলফি সেলফি উম্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দিন দিন বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, খুন আর আত্মহত্যা মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ সরকারের উচিত জাতীয়ভাবে দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার ও প্রসার করে এই সামাজিক সমস্যাটি দূরিকরণ করা।
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ইনশাআল্লাহ আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের প্রথম ধনী দেশ। এক উত্তারাঞ্চলের খনিজ উত্তোলন করলেই গোটা দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা বরদাশতযোগ্য নয়।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলায় কৃষিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক; বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বিলুপ্তির পথে ১৯২ জাতের উপকারী পোকা। সরকারের উচিত অবিলম্বে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষিকে বিষমুক্ত করা।
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করা কী অপরাধ? সংবিধান কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ দেয়নি? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে কী বেপর্দা ও ছবির বিরুদ্ধে বলা হয়নি?
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রতি বছর ১ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক “অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নতুন আশঙ্কা এবং বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমেছে”- এ তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নচেৎ সাধারণ অসুখেই প্রাণনাশ হতে পারে
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)