ইস্তিঞ্জার মাসয়ালা-মাসায়িল ও ইস্তিঞ্জার পর ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করা খাছ সুন্নত মুবারক
, ০৩ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৮ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০১ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকলের জন্য সর্বাবস্থায় অনুসরণীয়। কাজেই, নামায-কালাম, ইবাদত-বন্দেগী, ওযূ-গোসল, তায়াম্মুম, ইস্তিঞ্জা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বাজার-সদাইসহ যাবতীয় বিষয়ে তিনি অনুসরণীয়। উনাকেই সব বিষয়ে অনুসরণ করতে হবে। এ ব্যাপারে কোন লজ্জাবোধ করা যাবে না এবং হীনমন্যতায় ভোগা যাবে না। আজকে, আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, “ইস্তিঞ্জার মাসয়ালা-মাসায়িল ও ইস্তিঞ্জার পর ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করা খাছ সুন্নত মুবারক” এ সম্পর্কে।
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرتْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهٗ قَالَ مَنْ تَوَضَّأَ فَلْيَسْتَنْثِرْ، وَمَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوْتِرْ.
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি ওযূ করে সে যেন নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করে। আর যে ইস্তিঞ্জা বা শৌচকার্য করে সে যেন বিজোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করে। (বুখারী শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ১৬১)
ইস্তেঞ্জায় কতিপয় আদব:
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ يَزِيْدَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَلْمَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قِيْلَ لَهٗ لَقَدْ عَلَّمَكُمْ نَبِيُّكُمْ كُلَّ شَىْءٍ حَتَّى الْخِرَاءَةَ . قَالَ أَجَلْ لَقَدْ نَهَانَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ بِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ وَأَنْ لَا نَسْتَنْجِيَ بِالْيَمِيْنِ وَأَنْ لَا يَسْتَنْجِيَ أَحَدُنَا بِأَقَلَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ أَوْ يَسْتَنْجِيَ بِرَجِيْعٍ أَوْ عَظْمٍ .
অর্থ: হযরত ‘আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সালমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, উনাকে অর্থাৎ হযরত সালমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলা হলো, আপনাদের মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাদেরকে সবকিছুই শিক্ষা দিয়েছেন, এমন কি ইস্তিঞ্জা করার নিয়মও। হযরত সালমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হ্যাঁ। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন: ক্বিবলামুখী হয়ে ইস্তিঞ্জা করতে, ডান হাতে ইস্তিঞ্জা বা শৌচ করতে, ইস্তিঞ্জায় তিনটি ঢিলার কম ব্যবহার করতে এবং গোবর অথবা হাড় দ্বারা শৌচকার্য করতে। (আবূ দাউদ শরীফ: ৭)
একইভাবে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে- ‘আমি তোমাদের জন্য পিতার মতো। আমি তোমাদের সব কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকি। তোমরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে ক্বিবলাকে সামনে বা পেছনে দিয়ে বসবে না। ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য সম্পাদন করবে না।’ তিনি তিনটি ঢিলা ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন এবং গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ঢিলা করা থেকে নিষেধ করতেন। (আবূ দাউদ শরীফ)
উল্লিখিত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত নির্দেশনা ছাড়াও ইস্তিঞ্জায় নির্দিষ্ট আদব ও শিষ্টাচার রয়েছে, প্রত্যেকের উচিত এগুলোর প্রতি যতœবান হওয়া।
এমন স্থানে ইস্তিঞ্জা করতে হবে, যেখানে বসলে মানুষ দেখে না। আওয়াজ শোনে না এবং দুর্গন্ধ মানুষের নাকে আসে না।
ইস্তিঞ্জার জন্য নরম বা উঁচু স্থান বেছে নেওয়া, যাতে এর ছিটা শরীরে না লাগে।
প্রবেশের সময় দোয়া পাঠ করা :
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ.
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজুবিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খবাইস।’
অর্থ : আয় মহান আল্লাহ পাক! আমি নর ও নারী শয়তান থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।
ইস্তিঞ্জায় বসার সময় নিজের বাম পায়ের ওপর ভর দিয়ে বসা। এটি কষ্টদায়ক বস্তু দ্রুত নিঃসরণে সহায়ক।
বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা ও ডান পা দিয়ে বের হওয়া।
ইস্তিঞ্জার সময় মাথা ঢেকে রাখা।
গর্তে ইস্তেঞ্জা না করা। কেননা ভেতরে সাপ-বিচ্ছু থাকলে ক্ষতি হতে পারে অথবা ক্ষতি করতে পারে।
রাস্তা বা কবরস্থানে ইস্তিঞ্জা না করা।
ছায়াময় স্থানে ইস্তিঞ্জা না করা, যেখানে মানুষ বিশ্রাম নেয়।
ফলবিশিষ্ট বৃক্ষের নিচে ইস্তিঞ্জা না করা।
ইস্তিঞ্জার সময় কথা না বলা।
ইস্তিঞ্জার সময় শব্দ করে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ না করা।
ইস্তিঞ্জার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে যিকির-আযকার না করা।
আবদ্ধ বা প্রবহমান পানিতে ইস্তিঞ্জা না করা।
কোনো অপারগতা ছাড়া ইস্তিঞ্জা থেকে ডান হাতে পবিত্রতা অর্জন করা মাকরুহ।
ইস্তিঞ্জা সেরে ডান পা দিয়ে বের হয়ে এই দোয়া পাঠ করা :
غُفْرَانَكَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَذْهَبَ عَنِّي الْأَذٰى وَعَافَانِيْ.
উচ্চারণ: ‘আল হামদু লিল্লাহিল্লাযি আযহাবা আন্নিল আযা ওয়া আফানী।’
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য, যিনি আমার কাছ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু বের করে দিয়েছেন এবং আমাকে নিরাপদ করেছেন।
কোন পাত্রে (ইস্তিঞ্জার জন্য পানি নেয়ার ক্ষেত্রে) হাত প্রবেশ করানোর পূর্বে সর্বপ্রথম দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত- ধুয়ে নেয়া। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় পাত্র আর্থাৎ মটকা থেকে পানি ব্যবহার করা হত। কিন্তু এখন পানির কল বা চাপা কল ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পানি নেয়ার সুব্যবস্তা রয়েছে। তাই হাত ধোয়াটা আবশ্যক নয়। তবে অতি সর্তকতার দরুন ধুয়ে নিলে সমস্যা নেই।
ইস্তিঞ্জার জন্য পানি অথবা ঢিলা কুলুখ সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে তিনটি ঢিলা নিয়ে যাওয়া মুস্তাহাব।
যত সম্ভব নিচু হয়ে কাপড় খোলা।
ইস্তিঞ্জায় যাওয়ার পূর্বে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ও মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ লিখিত রিং বা আংটি বাইরে খুলে রাখা।
ইস্তিঞ্জারত অবস্থায় ক্বিবলা মুখী হয়ে না বসা।
লজ্জাস্থানকে ডান হাতে স্পর্শ না করা বরং বাম হাত দ্বারা পরিষ্কার করা।
ইস্তিঞ্জার ফোটা থেকে বাঁচা, কেননা অধিকাংশ কবরের আযাব হয় এ কারণে।
দাড়িয়ে ইস্তিঞ্জা না করা। বসে নরম জায়গায় ইস্তিঞ্জা করা।
ইস্তিঞ্জার পর কুলুখ ধরে মানুষের সামনে বিভিন্ন ভঙ্গিতে হাঁটা-চলা করা, অঙ্গভঙ্গি করা শরাফতের (ভদ্রতার) খিলাফ।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহিলা বা বালিকাদের সুন্নতী পোশাকসহ প্রয়োজনীয় সকল ধরণের সুন্নতী সামগ্রী সংগ্রহ করুন ‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ (বালিকা শাখা) হতে
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
শুকনা গোশ্ত খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন এলকোহলমুক্ত বিশুদ্ধ সুগন্ধি সুন্নতী আতর
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মানুষ মেথির উপকারিতা জানলে প্রয়োজনে স্বর্ণ দিয়ে ওজন করে ক্রয় করতো
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী ফল “আঙ্গুর”
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বেমেছাল উপকারিতা সমৃদ্ধ মহাসম্মানিত সুন্নতী খাবার “কিছ্ছা”
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কিয়ামত পর্যন্ত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক উনার কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন হবে না
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহান আল্লাহ পাক ও উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহাসম্মানিত মুহব্বত মুবারক হাছিল করতে হলে অবশ্যই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা করতে হবে
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘ডুমুর’
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)