ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেই নয় তথাকথিত দুনিয়াবী মানদন্ডেই নতুন শিক্ষাক্রমের দুর্বলতা বরদাশতের বাইরে
, ২০ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মন্তব্য কলাম
শুধু তা-ই নয়, পুরো রূপরেখায় বেশ জটিল ভাষায় ভাষান্তর করে ফেলছে, যা পড়ে সহজেই কেউ বুঝতে সক্ষম হবে বলে মনে হয় না। যেমন ভাষাভিত্তিক পাঠ্যক্রমে ঠিক কী থাকছে, তা বোঝাতে গিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম বলছে, বাংলা ভাষা শিক্ষার্থীদের জন্য ছয়টি প্রয়োগের স্থান নির্ধারণ করেছে।
এইগুলোকে বলা হচ্ছে, ভাষিক যোগাযোগ, বাচনিক উৎকর্ষ, শিখন-শেখানো কার্যক্রম, প্রায়োগিক ও পেশাগত যোগাযোগ, মানবিক চিন্তন, সৃষ্টিশীল ও মননশীল প্রকাশ। অথচ এগুলোকে ইংরেজি ভাষা থেকে রূপান্তর না করে সহজভাবে বলা যেত, ভাষার মাধ্যমে কীভাবে যোগাযোগ, ভাবের আদান-প্রদান, পাঠদান কার্যক্রম, জীবন-জীবিকা কীভাবে মানবিক ও সৃষ্টিশীলতার মধ্যে অবদান রাখছে, তা সুন্দরভাবে তুলে ধরা যেত। শুধু এই বিষয়গুলো নয়, পুরো রূপরেখায় ধরনের ট্রান্সলেটরের প্রভাব লক্ষ করার মতো।
বলা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের বোঝা কমানো হবে। অথচ আগের শিক্ষাক্রমের চেয়ে অনেকটাই বেশি পাঠ্যপুস্তক পেতে যাচ্ছে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমে। প্রাথমিক ৮টি আর মাধ্যমিকে ১০টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ এর আগের শিক্ষাক্রমে কম ছিল। সুতরাং কেউ যদি বলে, শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের বোঝা কমিয়ে ফেলার লক্ষ্য নতুন শিক্ষাক্রম আসছে, তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ মিথ্যা।
শিক্ষাক্রমে বলা হচ্ছে, বিজ্ঞানের ভৌতবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান এবং পৃথিবী ও মহাকাশবিজ্ঞান-এই তিনটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। যেখানে রসায়নের মৌলিক বিষয়গুলো উপেক্ষিত। প্রাণী ও উদ্ভিদের সমন্বয়ে যদি জীববিজ্ঞান আলোচিত হয়, সেই ক্ষেত্রে সমস্যা নেই, তবে সবার জন্য বিজ্ঞান বই তৈরি করতে গিয়ে আমাদের বাচ্চারা অন্যান্য দেশের বাচ্চাদের চেয়ে পিছিয়ে গেলেই সমস্যা প্রকটতর হয়ে উঠবে।
ভৌতবিজ্ঞানে কেবল বস্তু কণার গঠন আচরণ, মিথস্ক্রিয়া নিয়ে আলোচনার কথা বললেও জীববিজ্ঞানে কেবল সজীব উপাদানের গঠন আচরণ, মিথস্ক্রিয়া আর আর্থ সায়েন্স পৃথিবী থেকে শুরু করে সমগ্র মহাবিশ্বের গঠন এবং প্রকৃতি সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণের কথা বলা হচ্ছে। সেই দৃষ্টিতে এই বিজ্ঞান পাঠ কখনোই সুখকর হয়ে উঠবে না।
জাপানের একটি শিশু যদি অষ্টম শ্রেণির মধ্যেই ভৌতবিজ্ঞানে বিদ্যুৎ চলাচল ও তার ব্যবহার, গতি ও শক্তি, রাসায়নিক অণু ও পরমাণুর পরিবর্তন নিয়ে প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত জ্ঞান অর্জন করে, আলো ও শব্দ, লেন্সবিষয়ক পাঠোদ্ধার করে, তাপ, চাপ আর গ্যাসীয় বস্তু নিয়ে বিস্তারিত পড়ার সুযোগ পায়, সেখানে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমে কেবল বস্তু কণার গঠন আচরণ, মিথস্ক্রিয়া, স্থিতি নিয়ে আলোচনা বড়ই বেমানান।
কেবল সজিব উপাদানের গঠন নিয়ে আলোচনায় সীমাবদ্ধ নয়, বিজ্ঞানকে পূর্ণভাবে জানতে উদ্ভিদ, প্রাণীর দেহবিষয়ক বিস্তারিত জানাও জরুরি। কোষের বিভাজন, প্রজনন, জিনের নিয়ন্ত্রণ, রোগবালাই বিষয়ের জ্ঞান যেমন প্রয়োজন তেমনি রসায়নের মৌলিক ধাপ সম্মুখ আলোচনা দরকার।
সব মিলিয়ে বিজ্ঞানকে পোক্ত করার জন্য আরও বেশি আলোচনার প্রয়োজন, যা নতুন শিক্ষাক্রমে উপেক্ষিত হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমে ‘কৃষি শিক্ষা’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। অথচ প্রস্তাবিত শিক্ষাব্যবস্থায় কৃষিকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। জীবন ও জীবিকাবিষয়ক অধ্যয়নের সুযোগ থাকলেও কৃষিকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
খোদ শিক্ষাক্রমে বলা হচ্ছে, এটি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্তসংখ্যক দক্ষ, পেশাদার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক। নতুন শিক্ষাক্রমের আগে অতীতে আমাদের দেশে সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা সচল ছিল।
পত্রপত্রিকায় হামেশাই খবর বের হতো, ১০ বছর পরও এই পদ্ধতিটি দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের কাছেই বোধগম্য ছিল না। এমন একটি জনগোষ্ঠীর কাঁধে দেশের যে শিক্ষাব্যবস্থা উঠতে যাচ্ছে, তা আরও বেশি জটিল ও কণ্টকময়।
বাণিজ্যবিষয়ক জ্ঞানের সুযোগ প্রস্তাবিত রূপরেখা নাই। ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ও বাজারব্যবস্থার সঙ্গে নিজেকে তৈরি করতে বাণিজ্যবিষয়ক পাঠ আবশ্যিক হয়ে উঠেছে, সেই বিষয়টি আমাদের শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন।
শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে শিক্ষকদের বৈষম্য যেমন পরিলক্ষিত, তেমনি শিক্ষার আনুষঙ্গিক কাঠামোতে থাকে ভিন্নতা। শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে স্বজনপ্রীতি বা সুবিধাভোগী। শ্রেণিশিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের ফলাফলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব ফেলে। এমন মানসিকতার শিক্ষকদের কাঁধে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের সুযোগ ঠিক কতটা নিরপেক্ষ থাকবে তা বলা কঠিন।
ইউনেসকোর সহায়তায় আরও কয়েকটি দেশ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন এনেছে। তবে সেগুলো উন্নত বিশ্বের কোনো দেশে এখনো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।
বিদ্যমান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এবং নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী পেশাদার শিক্ষক নিয়োগ করে এ পরিবর্তন করার কথা বললেও বাস্তবতায় ঠিক কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে, তা ভাবতে হবে। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানিয়ে শিক্ষকদের কাঁধে মূল্যায়নের মতো জটিল বিষয়গুলোর সমাধান আগে না হলে এমন শিক্ষাক্রমের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হবে, মুখ থুবড়ে পড়বে আমাদের শিক্ষার পথ। এখন সরকারই নিজেকে প্রশ্ন করুক যে তারা যে শিক্ষাক্রম করতে যাচ্ছে, তাতে শিক্ষক সমাজ ঠিক কতটা গলাধঃকরণ করতে পেরেছে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুয়ার নেশায় বুদ হচ্ছে শিশু-কিশোররা-শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন
২২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে শহীদ করা জায়নবাদী তথা বর্বর ইহুদীরা কাপুরুষতার প্রমাণ দিয়ে অতীত ইতিহাস থেকে একের পর এক গুপ্তহত্যা করে আসছে ইহুদীদের গুপ্তহত্যার অনেক নিন্দা, ধিক্কার এবং প্রচারণা ও প্রতিহতের প্রচেষ্টা দরকার (পর্ব-১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শুধু যুবকরাই নয় এখন এনার্জি ড্রিংকসে বুদ হচ্ছে শিশুরাও কর ফাঁকি দিতে অনেক এনার্জি ড্রিংকস হয়ে গেছে কোমল পানীয় জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অবিলম্বে এনার্জি ড্রিংকস বন্ধ করতে হবে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রে পড়েই দুনিয়াদার মালানারা বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফ বাদ দিয়েছে। পর্নোগ্রাফি, মাদক থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে চাইলে বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফও বেশি বেশি করতে হবে।
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ডানে সেলফি বামে সেলফি, সেলফি সেলফি সেলফি উম্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দিন দিন বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, খুন আর আত্মহত্যা মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ সরকারের উচিত জাতীয়ভাবে দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার ও প্রসার করে এই সামাজিক সমস্যাটি দূরিকরণ করা।
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ইনশাআল্লাহ আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের প্রথম ধনী দেশ। এক উত্তারাঞ্চলের খনিজ উত্তোলন করলেই গোটা দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা বরদাশতযোগ্য নয়।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলায় কৃষিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক; বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বিলুপ্তির পথে ১৯২ জাতের উপকারী পোকা। সরকারের উচিত অবিলম্বে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষিকে বিষমুক্ত করা।
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করা কী অপরাধ? সংবিধান কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ দেয়নি? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে কী বেপর্দা ও ছবির বিরুদ্ধে বলা হয়নি?
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রতি বছর ১ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক “অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নতুন আশঙ্কা এবং বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমেছে”- এ তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নচেৎ সাধারণ অসুখেই প্রাণনাশ হতে পারে
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘ইসলামভীতি মোকাবেলায় জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস’ হলেও কার্যকরী কিছুই হচ্ছে না ইসরাইলকে সহযোগিতা করতে আমেরিকায় ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার আরো বাড়ানো হচ্ছে
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রতারণার ফাঁদে নাগরিক জীবন। সরকারের নজরদারী নেই। রকমফের প্রতারণা বন্ধে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক বিস্তারের বিকল্প নেই।
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)